প্রকাশিত : ৬ জুন, ২০১৯ ১৩:৫০

১০ বছরের বিস্ময় বালিকা

অনলাইন ডেস্ক
১০ বছরের বিস্ময় বালিকা
১০ বছর বয়সী মেহতা কোডারবানিজ নামে প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা। ছবি: সংগৃহীত

১০ বছর বয়সী একটি মেয়ের চারদিকের জগৎ কেমন হয়? বাবা-মা, স্কুলের বন্ধু এবং খেলার সাথি। সামায়রা মেহতার ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টে স্ক্রল করলে আপনি এমনটাই দেখতে পাবেন। সাঁতারে যাচ্ছে, লেমোনেড খাচ্ছে বা নাচের প্রতিযোগিতায়! খুব ভালোভাবে লক্ষ করলেও ১০ বছর বয়সী মেহতা যে একটি বর্ধিঞ্চু কোম্পানির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, সেটা বোঝা কঠিনই হবে।

কিন্তু বাস্তবে তাই। মেহতা কোডারবানিজ নামে একটি প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা। তার উদ্ভাবিত বোর্ড খেলার মাধ্যমে—এমনকি চার বছরের শিশুও কম্পিউটার প্রোগ্রামিংয়ের মৌলিক বিষয়গুলো জানতে পারে।

খেলাটি সহজ। প্রত্যকে খেলোয়াড়ের একটি করে ছোট খরগোশ থাকে। বোর্ডের ওপর ছক্কার দানে সেটিকে এগিয়ে নিতে হয়। উদ্দেশ্য, গন্তব্যে পৌঁছানো এবং পথে যত পারা যায়, গাজর খেয়ে নেওয়া। এসব করতে করতে জানা হয়ে যায় প্রোগ্রামিংয়ের বিভিন্ন মৌলিক বিষয়।

সম্প্রতি সিএনবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে মেহতা তার খেলা সম্পর্কে দাবি করেছে, এর মাধ্যমে প্রোগ্রামিংয়ের বেসিক সবই জানা সম্ভব। মেহতার কথা, ‘এটি মৌলিক বিষয়—সিকুয়েন্সিং এবং শর্ত পূরণের ব্যাপারটা শিখতে যেমন সাহায্য করে, তেমনি এটি দিয়ে লুপ, ফাংশন, স্টেক, কিউ, লিস্ট, ইনহেরিট্যান্স ইত্যাদিও বোঝা সম্ভব।

মেহতা চার বছর বয়সে তাঁর প্রকৌশলী বাবার কাছে প্রোগ্রামিং শিখতে শুরু করে। ছবি: সংগৃহীত
মেহতা চার বছর বয়সে তাঁর প্রকৌশলী বাবার কাছে প্রোগ্রামিং শিখতে শুরু করে। ছবি: সংগৃহীত

মেহতা চার বছর বয়সে তাঁর প্রকৌশলী বাবার কাছে প্রোগ্রামিং শিখতে শুরু করে। এর ছয় মাস বা এক বছরের মধ্যে তাঁর মাথায় এই খেলার ধারণা আসে। বিশেষ করে নিজের জন্য কোডিংয়ের লার্নিং ম্যাটেরিয়াল খুঁজতে গিয়ে মেহতা টের পায়, বাজারে চিত্তাকর্ষক কিন্তু কাজের এমন কিছু নেই। সে নিজে তখন উদ্যোগী হয় এই উদ্ভাবনে।

প্রথমে সে কাগজে খেলাটি স্কেচ করতে শুরু করে। পরে পরিবারের সহায়তায় এবং নিউজিল্যান্ড ও চীনের গ্রাফিক ডিজাইনার ও নির্মাতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে সক্ষম হয়। বেশ কিছুদিন ধরে ই-মেইল চালাচালির পর মেহেতা তাঁর উদ্দিষ্ট বোর্ড-গেমটি বানাতে সক্ষম হয়।

মেহতার পরিবার তাকে সব ধরনের সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে। তার প্রকৌশলী বাবা প্রতিষ্ঠানের উপদেষ্টা। মা মার্কেটিং ও সোশ্যাল মিডিয়া সামলান। আর ওর ছোট ভাইটির কাজ হলো নতুন নতুন গেম টেস্ট করা।

কোডারবানিজের পর মেহেতা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসংক্রান্ত আরও একটি খেলা উদ্ভাবন করেছে। এর নাম কোডারমাইন্ডজ। ছোট ছোট কোডিংয়ের মাধ্যমে এই বোর্ড গেমে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সম্পর্কে ধারণা লাভ করা যায়।

সিএনবিসিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে মেহতা তার খেলা সম্পর্কে দাবি করেছে, এর মাধ্যমে প্রোগ্রামিংয়ের বেসিক সবই জানা সম্ভব। ছবি: সংগৃহীত
সিএনবিসিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে মেহতা তার খেলা সম্পর্কে দাবি করেছে, এর মাধ্যমে প্রোগ্রামিংয়ের বেসিক সবই জানা সম্ভব। ছবি: সংগৃহীত

মেহেতা কোডিংয়ের ব্যাপারে খুবই নিষ্ঠাবান ও আগ্রহী। তার ধারণা, আগামী ১০ থেকে ১৫ বছরের মধ্যে পৃথিবী অনেক বেশি প্রোগ্রামিংয়ের ওপর নির্ভরশীল হয়ে যাবে।

২০১৮ সালের এপ্রিল থেকে এ পর্যন্ত প্রায় দুই লাখ ডলারের গেম বিক্রি করেছে মেহেতা ও তার কোম্পানি। শুরুতে নিজের ওয়েবসাইট থেকেই মেহেতা তার গেমগুলো বিক্রি করলেও এখন আমাজন গেম বিক্রির দায়িত্ব নিয়েছে। বিক্রির টাকার বেশির ভাগ আবার প্রতিষ্ঠানেই বিনিয়োগ করছে মেহেতা। এর পাশাপাশি নিজের পড়ালেখার জন্য টাকা জমাচ্ছে সে। তবে তার কমিউনিটিতে গৃহহীন লোকদের পাশে দাঁড়াতেও ভোলেনি সে।

নিজের কোম্পানিতে কাজ করার পাশাপাশি গুগলেও কাজ করার ইচ্ছে আছে তার। ২০১৬ সালে সে সময়কার ফার্স্ট লেডি মিশেল ওবামার কাছ থেকে পাওয়া উৎসাহের কথা সে সুযোগ পেলেই বলে।

উপরে