প্রকাশিত : ৮ সেপ্টেম্বর, ২০২০ ২১:১১

বগুড়ায় ভূমি সংক্রান্ত কার্যক্রম প্রশ্নবোধক!

অনিয়ম দূর্নিতির নতুন সংযোজন % পার্সেন্টেজ!
শেরপুর(বগুড়া)প্রতিনিধিঃ
বগুড়ায় ভূমি সংক্রান্ত কার্যক্রম প্রশ্নবোধক!

ভূমি সংক্রান্ত কার্যক্রমে অনিয়ম দূূর্নীতি নতুন কোনো ঘটনা নয়। তবে অতি পুরাতন এই ঘটনার সাথে প্রথমবার যুক্ত হয়েছে % (পার্সেন্টেজ)! বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা বিনির্মানে বর্তমান সরকারের উন্নয়ন কার্যক্রমের অংশ হিসেবে ঢাকা-বগুড়া মহাসড়ক প্রশস্ত কার্যক্রম চলমান রয়েছে। আর এই প্রশস্ত কার্যক্রমে স্থাপনা ও জায়গা ক্ষতিপূরনের অর্থপ্রাপ্তিতে বগুড়া জেলার শেরপুর উপজেলার মির্জাপুরের কিছু ভূমি মালিকদের পৌষ মাস আর কিছু মালিকদের সর্বনাশ হয়ে দেখা দিয়েছে।

কতিপয় কর্মকর্তার দৃশ্যমান দুর্নীতিকে আড়াল করে নিয়ম নীতির তোয়ক্কা ছাড়াই চলছে বগুড়ার শেরপুরের ভূমি অধিগ্রহন কার্যক্রম। এ সকল কার্যক্রমে জেলা প্রসাশকের প্রভাব পরছে না অধীনস্তদের উপর। তাদের প্রশ্নবোধক কার্যক্রম থেকে বাদ পরছে না সংযোজন পেশার মানুষও। প্রায় সবাইকে দিতে হচ্ছে % পার্সেন্টেজ! সরেজমিনে অনুসন্ধানে গেলে এমন অসংখ অভিযোগ করেন ভুক্তভোগীরা। ন্যায় বিচারে জেলা প্রসাশকের আশ্বাস আর কতদুর?

এমন একাধিক ঘটনায় ভূমি মালিকদের মধ্যে জন্মেছে প্রশ্নের পাহাড়। রোমহর্ষক ইতিহাস সৃষ্টি হচ্ছে অধিগ্রহন কর্মকান্ডে। অধিগ্রহনকৃত ভূমির ক্ষতিপূরনের টাকা পেতে শতকরা দশ থেকে পনের টাকা ঘুষ দিতে হচ্ছে অধিগ্রহন শাখায়। এখানে লক্ষ করা যাচ্ছে কিছু কিছু অবৈধ আপত্তির প্রেক্ষিতেই প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্থ ভূমি মালিকদের ক্ষতিপূরনের টাকা আটকে রাখা হচ্ছে। আবার আদালতে মামলা চলমান থাকার পরেও অতি উৎসাহী হয়ে অবৈধ ভাবে ভুল ব্যাক্তিকে কোনো প্রকার তদন্ত বা নোটিশ ছাড়াই ক্ষতিপূরনের টাকা প্রদান করা হচ্ছে।

এমন এক ঘটনায় গত (১৮আগষ্ট) ন্যায় বিচারের প্রার্থনায় জেলা প্রসাশক বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন, বগুড়ার শেরপুরের শ্রী নিলয় কুন্ডু। অভিযোগ সুত্রে জানা যায়, শেরপুর উপজেলার মির্জাপুর ইউপির মদনপুর মৌজার ১৭৭ দাগের ০.৩০২৯ একর সম্পত্তি সরকারি অধিগ্রহনের আওতায় পরে, যার জে.এল নং ৯৮। উক্ত সম্পত্তির পৈতৃক সুত্রে এক তৃতীয়াংশের মালিক ভুক্তভোগী নিলয় কুন্ডু।  উক্ত দাগের সম্পত্তি সহ আরও অন্যান্য মোট ৯টি খতিয়ানের সম্পত্তি সঠিক বন্টনের লক্ষে নিলয় কুন্ডু বাদী হয়ে ২৫৯/১৪ নং বন্টন মোকদ্দমা দায়ের করেন এবং বর্তমানে তা যুগ্ম জেলা জর্জ-১ আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। যার ১নং বিবাদী শ্রী সমীর কুন্ডু।

এই মোকদ্দমা সংক্রান্ত বিষয়ে গত ৬ নভেম্বর ২০১৯ ইং তারিখে জেলা প্রসাশকের অবগতির জন্য একটি দরখাস্তও প্রদান করেন নিলয় কুন্ডু। এর আগে তিনি জেলা প্রসাশকের কার্যালয় কতৃক প্রদেয় ৭ ধারা এবং পরবর্তীতে ৮ ধারার চুরান্ত নোটিশ প্রাপ্ত হয়। এর আগেও ৭ ধারা নোটিশ প্রাপ্ত হওয়ার পর একটি আবেদন ভূমি অধিগ্রহন কার্যালয় বরারবর স্বশরীরে প্রদান করেন, যার কোনো রিসিভ কপি অফিস কতৃক প্রদান করা হয়নি। বিষয়টি অবগত হওয়ার পর উক্ত মোকদ্দমার বিষয়ে অবগত হয়ে ভূমি অধিগ্রহন কার্যালয় থেকে ২১জানুয়ারী ২০২০ইং তারিখে বন্টন মোকদ্দমা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত পেমেন্ট বন্ধ রাখার আদেশ দেয়া হয়।

বগুড়া জেলা প্রসাশকের কার্যালয়ে অধিগ্রহন শাখার সার্ভেয়ার মো: আশরাফ মুঠো ফোনে ওই আদেশের ব্যাপারে নিশ্চিত করেন। তবে আদেশের সার্টিফাই কপি দিতে অস্বীকৃতি জানান তিনি। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে উক্ত আদেশের ৮দিন আগেই ১৩জানুয়ারী ২০২০ইং তারিখে কোনো প্রকার নোটিশ ছাড়াই ভূমির উপরিস্থিত অবকাঠামোর ক্ষতিপূরণ প্রদান করা হয়েছে মর্মে অধিগ্রহন কার্যালয় থেকে জানানো হয়।


মামলার বিষয়ে দুই মাস আগে অবগত করার পরেও কোনো প্রকার নোটিশ ছাড়াই অতি উৎসাহী হয়ে অবকাঠামোর টাকা প্রদানের কারণ জানতে চাইলে তৎকালীন কর্তব্যরত বগুড়ার অধিগ্রহন কর্মকর্তা সাদিয়া আফরিন সংবাদ কর্মীদের আশ্বাস দিয়ে বলেন, আমরা প্রতিটি ক্ষতিপূরণের টাকা দেয়ার সময় তিন শত টাকার স্ট্যাম্প সহ প্রয়োজনীয় ফর্ম পূরণের মাধ্যমে চেক প্রদান করে থাকি।

আর উক্ত ফর্মের উল্লেখ্য শর্তাবলী অনুযায়ী যে কোনো ভুল ভ্রান্তির জন্য টাকা গ্রহনকারীর বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার ব্যাপারে উল্লেখ করা আছে। আমি বিষয়টি দেখছি। কিন্তু তার কয়েকদিন পরেই তিনি সোনাতলা উপজেলার নির্বহী অফিসার হিসেবে যোগদান করেন। এরপর শুরু হয় টেবিলে টেবিলে ধন্যা।

এর পরবর্তীতে একদল সংবাদকর্মী গত ১৮আগষ্ট নির্ভীক ও দায়িত্বশীল জেলা প্রসাশক জনাব মো: জিয়াউল হকের কাছে বিষয়টি উপস্থাপন করলে তিনি গনমাধ্যম কর্মীদের ন্যায়বিচারের আশ্বাস দিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যাবস্থা গ্রহন ও তাৎক্ষনিক পদক্ষেপের জন্য অতিরিক্ত জেলা প্রসাশক (রাজস্ব) মো: মালেককে নির্দেশ প্রদান করেন। এর পরেও চলে গেছে অনেকদিন।

পরবর্তীতে  এ বিষয়ে বুধবার (২সেপ্টেম্বর) বিকেল ৪টা ১১মিনিটে মুঠোফোন ০১৭৩৩-৩৩৫৪০৪ নম্বরে বগুড়ার অতিরিক্ত জেলা প্রসাশক (রাজস্ব) মো: মালেক জানান, শ্রী নিলয় কুন্ডুর আবেদনে জায়গার ক্ষতিপূরণ দাবি করেছেন, কিন্তু জায়গার উপরিস্থিত অবকাঠামোর ক্ষতিপূরণ দাবি করেননি, তাই অবকাঠামোর ক্ষতিপূরণ অন্য ওয়ারিশকে প্রদান করা হয়েছে।

যদি আবেদন করতো তাহলে বিবেচনা করা যেতো। বগুড়ার অতিরিক্ত জেলা প্রসাশক (রাজস্ব) এর গনমাধ্যমের নিকট উপস্থাপিত এই বাক্যগুলো অনেকটাই অসামঞ্জস্যপূর্ণ যা আদালত অবমাননার সামিল বলে মনে হয়েছে। তিনি আরও বলেন, পরবর্তীতে আমাদের কাছে অন্যান্য ওয়ারিশরা মিসকেস করলে শুনানি করে ভূমির টাকা ছাড় করা হবে।

দৈনিক চাঁদনী বাজার/সাজ্জাদ হোসাইন

উপরে