প্রকাশিত : ৫ অক্টোবর, ২০২০ ২১:৪২

বগুড়ায় করোনায় ৪২টি প্রত্ন এলাকা বন্ধ শুন্যের কোঠায় নেমে এসেছে পর্যটক

এইচ আলিম
বগুড়ায় করোনায় ৪২টি প্রত্ন এলাকা বন্ধ 
শুন্যের কোঠায় নেমে এসেছে পর্যটক

বগুড়ায় প্রায় শুন্যের কোঠায় নেমে এসেছে পর্যটক। নতুন করে সেজে ওঠার পর করোনা ভাইরাসের কারণে প্রায় ৭ মাস ধরে বন্ধ রয়েছে মহাস্থানগড়, ভাসুবিহার, গোবিন্দ ভিটা, জাদুঘর। এর সাথে ৪২টি প্রত্নতত্ত্ব এলাকা বন্ধ থাকায় বগুড়ায় পর্যটকদের দেখা যাচ্ছে না। পর্যটক না থাকার সুবাদে হোটেল, মোটলের ব্যবসাও লোকসানে নেমেছে। পর্যটন এলাকাগুলোতে গড়ে উঠা স্থানীয় ক্ষুদে ব্যবসায়িরাও রয়েছে দারুন সংকটে। 

জানা যায়, দেশে মার্চ মাস থেকে করোনা ভাইরাসের কারণে নানা সংকটের সৃষ্টি হয়। এরই মধ্যে ১৮ মার্চ থেকে বগুড়ার মহাস্থানগড়, ভাসুবিহার, গোবিন্দ ভিটা, জাদুঘর, পরশুরামের প্যালেস, সিংহদার, শিলাদেবীর ঘাটসহ জেলার প্রায় ৪২টি প্রত্ন স্থান বন্ধ রয়েছে। বগুড়ার এই ৪২টি প্রত্ন স্থানে করোনার পূর্বে নানা দেশে থেকে পর্যটকগ ও দেশের দর্শনার্থীরা আসতেন। বগুড়ার মহাস্থানগড়ে সারাবছরই দেশী ও বিদেশি পর্যটক কম বেশি দেখা গেলেও নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি মাসে সবচেয়ে বেশি পর্যটক দেখা মিলতো। এর সাথে বিভিন্ন ছুটিতে বগুড়ার পর্যটন স্পটগুলোতে সাধারণ মানুষের ভিড় থাকতো চোখে পড়ার মত। কিন্তু দেশে করোনা ভাইরাসের প্রভাবে এখন উল্টো চিত্র দেখা যাচ্ছে। মহাস্থানগড়ে গত ৭ মাসে কোন দেশি বিদেশি পর্যটক দেখা যায়নি।

করোনা ভাইরাসের কারণে বন্ধ রয়েছে। সে কারনে পর্যটক না থাকায় বগুড়া শহরের বিভিন্ন এলাকায় গড়ে উঠা হোটেল মোটলেও তেমন কোন আয় নেই। পর্যটন এলাকার আশপাশে খুদে ব্যবসায়িদের এক সময়ে দেখা গেলেও এখন দেখা যাচ্ছে না। তারা পেশা বদল করে দিনমজুর কেউ বা আবার ভিন্ন পেশা বেছে নিয়েছেন। বগুড়ার মহাস্থানগড়কে সার্ক কালচারাল সিটির জন্য প্রস্তাবিত হওয়ায় পর থেকে পর্যটকদের আকর্ষণের অন্যতম কেন্দ্র হয়ে উঠেছিল বগুড়ার মহাস্থানগড়। পর্যটক বৃদ্ধির কারণে এলাকায় প্রসার ঘটে ব্যবসা বাণিজ্যর। খ্রিষ্টপূর্ব ৩য় শতাব্দী থেকে খ্রিষ্টীয় ১৫ শতাব্দীর মধ্যবর্তী সময়ে মহাস্থানগড় এক সমৃদ্ধ জনপদ হিসেবে বিস্তার লাভ করে। বেশ কয়েক শতাব্দী পর্যন্ত এখানে অসংখ্য রাজা রাজত্ব করেন। মহাস্থানগড় ছিল সে সময়ের রাজধানী।

এর ভেতর রয়েছে মৌর্য, গুপ্ত, সেন, পাল ও সামন্ত রাজবংশের পদচারনা। মহাস্থানগড় দেখতে গত ফেব্রুয়ারি মাসেও প্রতিদিন শতশত মানুষ দূর দুরান্ত থেকে আসতেন।  মহাস্থানগড় ছাড়াও, নবাববাড়ি, গোকুলের মেধ বা বেহুলা লক্ষিন্দারের বাসর ঘর, ভাসুবিহার, মহাস্থান যাদুঘর, বগুড়ার শেরপুরে মোঘল আমলে নির্মিত খেরুয়া মসজিদ, কয়েক’শ বছরের পুরানো রানী ভবানী মন্দির, সাউদিয়া পার্ক, মসল্লা গবেষনা কেন্দ্র, নওগাঁর পাহাড়পুর পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে প্রতিদিন দেশি বিদেশী পর্যটকদের ভিড় দেখা যেত। এখন আর সেই ভিড় নেই। প্রায় পর্যটক শুণ্য হয়ে আছে বগুড়ার ৪২টি প্রত্ন এলাকা। 

বগুড়া শহরের শতবর্ষি আকবরিয়া আবাসিক হোটেলের কর্মকর্তারা জানান, করোনার আগে বিভিন্ন অঞ্চল এমনকি বিদেশি পর্যটক উঠেতো। করোনার কারনে কোন পর্যটক নেই। পর্যটক না থাকায় কিছু কিছু সংকটও সৃষ্টি হয়েছে। এমন অবস্থা বেশি চললে সংকটগুলো প্রকট আকার ধারণ করতে পারে। বগুড়ার মহাস্থানগড় এলাকার পাশে চা ও কফি বিক্রেতারা জানান, গত ফেব্রুয়ারি মাসেও তাদের ব্যবসা জমজমাট ছিল। এখন নেই। দুই চারজন পথচারি ছাড়া কোন পর্যটক বা দর্শনার্থীও নেই। পর্যটক না থাকায় অনেকেই ব্যবসা গুটিয়ে নিয়েছেন। 

বগুড়ার প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর আঞ্চলিক কার্যালয়ের পরিচালক নাহিদ সুলতানা জানান, বগুড়ায় ৪২টি প্রত্ন স্থান রয়েছে। দেশে করোনা ভাইরাসের কারনে মার্চ মাস থেকে দর্শনার্থীদের জন্য প্রত্ন এলাকাগুলো অধিদপ্তর থেকেই বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। 

দৈনিক চাঁদনী বাজার/সাজ্জাদ হোসাইন

উপরে