প্রকাশিত : ১১ অক্টোবর, ২০২০ ০১:৩০

বিকাশ কোন উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে মুখ ফিরিয়ে নিতে পারে লাখো লাখো গ্রাহক

অভিনব প্রতারণায় সর্বশান্ত হচ্ছে দেশের সাধারণ গ্রাহক
ষ্টাফ রিপোর্টার
বিকাশ কোন উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে
মুখ ফিরিয়ে নিতে পারে লাখো লাখো গ্রাহক

দেশে বিকাশ প্রতারণা নিত্য নৈমত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রতিদিন কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে প্রতারকরা। কিন্তু বিকাশ কর্তৃপক্ষ কোন ব্যবস্থা গ্রহণ নিচ্ছে না বলে আতঙ্কিত গ্রাহকরা একসময় মুখ ফিরিয়ে নিতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বাজার বিশ্লেষকরা। প্রতিদিন দেশের কোন না কোন স্থানে হাজার হাজার মানুষের কাছে বিভিন্ন মোবাইল অপারেটর এমনকি বিকাশ কাস্টমার কেয়ারের হুবহু নাম্বার কিন্তু সামনে একটি যোগ চিহ্ন বসিয়ে +১৬২৪৭ থেকে কল দিয়ে বলা হয় ‘স্যার বিকাশ হেড অফিস থেকে বলছি, আপনার বিকাশ এ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

এ সময় তারা গ্রাহককে নানা ধরনের বিভ্রান্তিকর বক্তব্য দিয়ে বলেন, ‘এ্যাকাউন্টটি ফেরত পেতে হলে আপনাকে নতুন কোড খুলতে হবে। বিকাশ থেকে আপনার মোবাইলে একটি মেসেজ যাবে ৬ ডিজিটের। আপনি দ্রুত মেসেজ নাম্বারটি আমাদেরকে জানালেই আপনার এ্যাকাউন্ট চালু হয়ে যাবে। অধিকাংশ বিকাশ গ্রাহকই তার টাকা রক্ষা করার জন্য এসময় হতবাক হয়ে যান এবং তিনি অসেচতন অবস্থায় তারা যা বলে সেটাই করে বসেন। এ সময় প্রতারক তার এ্যাকাউন্টে সর্বশেষ লেনদেন লেন দেন কত হয়েছে সেটিও জানতে চায়। সহজ সরল গ্রাহকেরা তাদের সর্বশেষ লেনদেনের কথা বলার পাশাপাশি ছয়টি নাম্বার বিশিষ্ট মেসেজটিও সে প্রতারককে বলে দেয়। ফলে দ্রুত প্রতারক তার এ্যাকাউন্ট থেকে টাকা নিজের এ্যাকাউন্টে পার করে নেয়।

গ্রাহক বুঝতেই পারে না তার এ্যাকাউন্টের টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে। যখন টাকা তুলতে যান ঠিক তখনই তিনি জানতে পারেন তার টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে। এটি গোটা দেশের সামগ্রিক চিত্র। প্রতিদিন এরকম হাজার হাজার গ্রাহক বিকাশ কাস্টমার কেয়ার অফিসে গিয়ে অভিযোগ দিলেও টাকা উদ্ধারের কোন ব্যবস্থাই গ্রহণ করতে পারে না বিকাশ কর্তৃপক্ষ। উল্লেখ্য যে ছয় ডিজিটের যে মেসেজটি গ্রাহকের মোবাইল ফোন নাম্বারে আসে তা ইংরেজিতে লেখা। ফলে অনেক অল্প শিক্ষিত গ্রাহক বুঝতেই পারে না সেই মেসেজে তাকে অন্য কাউকে শেয়ার করতে নিষেধ করা আছে।

গতকাল শনিবার সকালে চেলোপাড়ার অলোক কুমার তালুকদার মিহির নামের এক ব্যক্তির মোবাইল ফোনে ০১৭০৬৮৪৭২৩৯ নাম্বার থেকে একটি কল করে এক প্রতারক। এই প্রতারক তার মোবাইল ফোনে আসা বিকাশ এ্যাকাউন্টের ৮ হাজার ২শ টাকা এইভাবেই প্রতারণা করে হাতিয়ে নেয়। তিনি বিকাশ বিকাশ অফিসে গিয়ে দেখেন তার মতন ৬০-৭০ জন মানুষ একই অভিযোগ নিয়ে এসেছেন। এসময় বিকাশ কাস্টমার কেয়ারের পক্ষ থেকে শান্তনা দিয়ে বলা হয় আপনার টাকা এ সময়ে-এত নাম্বারে ক্যাশ আউট হয়ে গেছে। পরে সে নাম্বারে কল দিলে দেখা যায় নাম্বারটি বন্ধ।

এখন গ্রাহকের প্রশ্ন কেন ৬ ডিজিটের নাম্বার ইংরেজিতে বিকাশ থেকে পাঠানো হয়। তারা কি জানে না বাংলাদেশের মানুষ বাংলায় কথা বলেন এবং লেখেন। একটি বিকাশ সূত্রে জানা গেছে, বিষয়টি বিকাশ কর্তৃপক্ষ জানে যে, এ ধরনের প্রতারনা প্রতিদিনই ঘটছে এবং গরীব এবং অর্ধশিক্ষিত মানুষদের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে প্রতারকরা। কিন্তু যেহেতু টাকাটি এক এ্যাকাউন্ট থেকে আরেক এ্যাকাউন্টে পার হয়ে যাচ্ছে তাতে বিকাশ তার কমিশন  ঠিকমতই পেয়ে যাচ্ছে। ঐ সূত্র জানায় যে কারনে বিকাশ এটি বন্ধ করতে তেমন আগ্রহী নয়। তবে এ ধরনের প্রতারনা যদি বন্ধ না হয় তাহলে ভুক্তভোগী গ্রাহকরা ধীরে ধীরে বিকাশ থেকে মুখ সরিয়ে নিতে বাধ্য হবেন। ভুক্তভোগী অনেকেই মনে করেন এসব প্রতারনা বন্ধ করার জন্য বিকাশকেই মুখ্য ভূমিকা রাখতে হবে। নচেৎ একদিন এর খেসারত দিতে হবে বিকাশকেই। 

এখানে উল্লেখ করা দরকার বিকাশের এ্যাকাউন্ট নাম্বারগুলো প্রতারকরা পায় কিভাবে? কতিপয় অসাধু এজেন্ট বিকাশে টাকা পাঠানোর যে লেনদেন করা হয় তার একেকটি পৃষ্ঠা ৩০০ টাকার বিনিময়ে প্রতারক চক্রদের কাছে বিক্রি করে দেয়। তারা আবার মোবাইল ফোনে ছবি তুলে দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রতারকদের কাছে পাঠিয়ে দেয়। ফলে সেখান থেকে তারা প্রতি পৃষ্ঠার জন্য পায় ১০০০ টাকা। ঐ পৃষ্ঠায় যার এ্যাকাউন্টে ১০ হাজার কিংবা ২০ হাজার টাকা ঢুকেছে প্রতারক তাকে ফোন দিয়ে বলে, ‘স্যার আপনার এ্যাকাউন্টে সর্বশেষ ১০ হাজার টাকা ঢুকেছে’।

এতে গ্রাহকরা অনেকটা নিশ্চিত হয়ে মনে করে বিকাশ অফিস থেকেই তাকে কল করা হয়েছে।  কিন্তু তার চাইতেও বড় সর্বনাশটি হচ্ছে বিকাশের থেকে পাঠানো ৬ ডিজিটের মেসেজটি। এটি বাংলায় করা দরকার এবং প্রতিটি গ্রাহককে মেসেজ দিয়ে জানিয়ে দেওয়া উচিত বিকাশ কারও এ্যাকাউন্ট বন্ধ করে না। আপনারা ১৬২৪৭ ছাড়া কোন + চিহ্ন দেওয়া কল বিশ্বাস করবেন না।  

দৈনিক চাঁদনী বাজার/সাজ্জাদ হোসাইন

উপরে