প্রকাশিত : ২৮ অক্টোবর, ২০২০ ০৭:৫৩

হযরত শাহ্ বন্দেগী (রহঃ) কওমী মাদ্রাসা,মাজার কমপ্লেক্স ব‍্যাবস্থাপনা কমিটির বিরুদ্ধে অনিয়ম দূর্নীতির অভিযোগ।

ষ্টাফ রিপোর্টার
হযরত শাহ্ বন্দেগী (রহঃ) কওমী মাদ্রাসা,মাজার কমপ্লেক্স ব‍্যাবস্থাপনা কমিটির বিরুদ্ধে অনিয়ম দূর্নীতির অভিযোগ।

চলতি সপ্তাহে বগুড়ার শেরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর "হযরত শাহ্ বন্দেগী (রহঃ) কওমী মাদ্রাসা,মাজার কমপ্লেক্স" ব‍্যাবস্থাপনা কমিটির বিরুদ্ধে অনিয়ম দূর্নীতি সহ সেচ্ছাচারিতার একটি লিখিত অভিযোগ করেন শাহ বন্দেগী ইউনিয়ন যুবলীগ সভাপতি মোঃ রেজাউল করিম।সরেজমিনে ও এলাকাবাসী সুত্রে জানা গেছে, লড়াকু সৈনিক গাজী শাহ্ বন্দেগীর মাজার জিয়ারতে প্রায় প্রতিনিয়ত দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে অসংখ্য মানুষ ছুটে আসেন। দান দক্ষিণা করেন অনেকেই। তাছাড়া একবার বাৎসরিক ওরস উযযাপন হয় গাজী শাহ্ বন্দেগীর স্মরণে। চলে ওরসের নামে চাঁদা তোলার 

মহাউৎসব। জানাযায়,এলেম শিক্ষায় এক সময়ে বহু অঞ্চল জুড়ে সুক্ষ‍্যাতি ছিলো হযরত শাহ্ বন্দেগী (রহঃ) কওমী মাদ্রাসার। এ প্রতিষ্ঠানের রয়েছে বহু প্রতিষ্ঠিত সাবেক ছাত্র। এই কওমী মাদ্রাসার নিজস্ব আয়ের উৎস বলতে ১৬ টি দোকান ০১ টি পুকুর ও বছরে একটি ইসলামী জালসা। মাদ্রাসার এতিমখানা চলে দুই চার উপজেলার সহ সারাদেশের বিত্তবান মানুষের দানের টাকায়। এ প্রতিবেদন লেখা পযর্ন্ত এই মাদ্রাসার শিক্ষার্থী সংখ্যা ও মাসিক ব‍্যয়ের তথ্য জানতে মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক আব্দুল মান্নানের সাথে যোগাযোগ করা হলে,তিনি জানান বর্তমানে শিক্ষার্থী সংখ্যা অর্ধশত ও শিক্ষকদের বেতন ভাতা ও এতিম শিক্ষার্থীদের তিন বেলা খাদ্য সামগ্রী বাবদ মাসিক ব‍্যায় প্রায় লাখ টাকা। মাদ্রাসার দায়িত্ব প্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আব্দুল মান্নানের গ্রামের বাড়ী প্বার্শবর্তী জেলার তারাশ উপজেলায়।

খোজ নিয়ে জানা গেছে মান্নান এই মাদ্রাসায় যোগ দেওয়ার পরে তার পারিবারিক অবস্থার উন্নয়ন হয়ছে। অতিতে এই মাদ্রাসার শিক্ষার্থী সংখ্যা ছিলো বর্তমান শিক্ষার্থীদের কয়েক গুন। স্থানীয় পরিবারগুলো দায়িত্বও নিতেন একজন শিক্ষার্থীর তিন বেলা খাবারের। স্থানীয় কয়েকজন অভিযোগ করে বলেন পাশ্ববর্তী একটি প্রাইভেট মাদ্রাসায় বাচ্চাদের বেতন দিয়ে শিক্ষা গ্রহন করাচ্ছেন অভিভাবকরা। কিন্তু শাহ বন্দেগী মাদ্রাসায় ফ্রি শিক্ষা ব‍্যবস্থা থাকলেও শিক্ষার্থী সংকট কেন ?

শাহ বন্দেগী ঈদগাহ মাঠে দুইটি ঈদের নামাজ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও বিগত কয়েক বছরে ঈদ উৎসব বর্ষা মৌসুমে হওয়ায় সম্ভব হয়নি মুসুল্লিদের মাঠে ঈদের জামায়াত আদায়। সামান্য বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা অন‍্যতম সমস্যা গুরুত্বপূর্ণ এই প্রাচীন ঈদগাহ মাঠে। এই কমপ্লেক্সের দুইটি মসজিদে কিছুটা উন্নয়ন দৃশ্যমান হলেও তা প্রায় ১০ বছর আগের।

এদিকে অনুসন্ধানে জানাগেছে, কওমী মাদ্রাসা পরিচালনায় সরকারের কিছু নিতিমালা থাকলেও তা মানা হচ্ছে না। বিগত সময়ে এই প্রতিষ্ঠান গুলির ব‍্যাংক হিসাব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও ব‍্যবস্থাপনা কমিটি মনোনীত ব‍্যাক্তির যৌথ স্বাক্ষরে পরিচালনা হতো। চলমান কমিটির সেচ্ছাচারিতায় তা মানা হচ্ছে না। আভিযোগ আছে এই কমপ্লেক্স প্রতিষ্ঠানে বর্তমানে আদৌ ব‍‍্যাংক হিসাবে লেন দেন হয় কি না? প্রভাবশালী কয়েকজন এলাকবাসী দাবী করেন এ'রকম গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রাচীন প্রতিষ্ঠানে ০৫ টি ধর্মীয় অঙ্গ প্রতিষ্ঠান রয়েছে সেখানকার কওমী মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক জুম্মার নামাজের ইমামতী করতে পারেন না।

এই ব‍্যর্থতা কার ? খোঁজ নিয়ে জানা গেছে ২০ বছর পূর্বে উপজেলার পাঁচআনা মৌজার মৃত রইস উদ্দিন এই মাদ্রাসায় ০৮ শতাংশ জমি দান করেন। বর্তমানে কমিটির ব‍্যক্তিগত স্বার্থ চরিতার্থ করতে সে জমিটুকুও বছর তিনেক আগে বিক্রি করা হয়েছে। অভিযোগ বিষয়ে জানতে মাজার কমপ্লেক্স ব‍্যাবস্থাপনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব ফজলুল হকের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন দানে পাওয়া সারে সাত শতাংশ জমি কমিটির সিদ্ধান্তে বিক্রয় করা হয়েছে আর যৌথ ব‍্যাংক হিসাব ইউএনও মহোদ্বয়ের সাথে আগে ছিলো এখন নেই।

ইতিহাস বীদগনের বর্ননা থেকে জানা গেছে, প্রায় ৪০০ বছর পূর্বে বগুড়া জেলায় বিশেষত শেরপুর উপজেলায় অমুসলিম সম্প্রদায়ের মাঝে আল্লাহ তায়ালার বানী ও তাঁর পছন্দনীয় ধর্ম ইসলামের দাওয়াত প্রচারের জন্য হযরত শাহ বন্দেগী (রঃ) আমৃত্যু কঠোর সাধনা করে গেছেন। হযরত সদরুদ্দিন বন্দেগী (রহঃ) অত্যাচারীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধকরেন। যুদ্ধে জয়ী হওয়ার কারনে শাহ বন্দেগী ‘‘গাজী‘‘ উপাধি পেয়েছিলেন তিনি।

তৎকালীন রাজা বল্লাল সেন বাহিনীর সাথে যুদ্ধে হযরত শাহ্ তুর্কান শহীদ হয়েছেন এই সংবাদ পাওয়ার পর বাবা আদম শহীদ (রহঃ) শাহ্ বন্দেগী সহ কয়েক জনকে সঙ্গে নিয়ে শেরপুরে আসেন। যুদ্ধে শহীদ হওয়া শাহ্ তুর্কান (রহঃ) এর দাফন সম্পন্ন করে বাবা আদম শহীদ বল্লাল সেন বাহীনির সাথে যুদ্ধের প্রস্তুতি গ্রহণ করেন। ততক্ষনে (তথ্য বিভ্রাটে) মহাযুদ্ধের খবর পেয়ে তৎকালীন হিন্দু রাজা বল্লাল সেন ও তার বাহিনী আত্মহত্যা করেন। 

ফলে বিনা যুদ্ধে বাবা আদম শহীদ, শাহ্ বন্দেগী সহ মুসলিম বাহিনী জয়লাভ করে। যুদ্ধে জয়লাভের পর বাবা আদম শহীদ সহ তার অন্যান্য সফর সঙ্গীদের নিয়ে জেলার আদম দীঘি থানায় চলে গেলেও হযরত গাজী শাহ্ বন্দেগী (রহঃ) শেরপুর উপজেলার খন্দকার টোলা গ্রামে স্থায়ী বসবাস শুরু করেন। এখানেই তিনি ইন্তেকাল করেন। তিনি সহ তার দুই পুত্র এখানে সমাহিত আছেন। তার এই সমাধি স্থানকে ঘিরে বর্তমানে খন্দকারটোলায় গড়ে উঠেছে হযরত শাহ্ বন্দেগী (রহঃ) কওমী মাদ্রাসা,দুইটি মসজিদ,ঈদগাহ মাঠ ও (মাজার) গাজী শাহ্ বন্দেগীর সমাধী। ঐতিহাসিক এই মাজার কমপ্লেক্স ব‍্যাবস্থাপনা কমিটির বিরুদ্ধে অনিয়ম দূর্নীতির অভিযোগ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা লিয়াকত আলী শেখ জানান অভিযোগ তদন্ত করে যথাযথ ব‍্যবস্থা নিশ্চিত করা হবে।

দৈনিক চাঁদনী বাজার/সাজ্জাদ হোসাইন

উপরে