প্রকাশিত : ১৮ ফেব্রুয়ারী, ২০১৯ ২২:৫০

যথাযোগ্য মর্যাদায় রাবিতে শিক্ষক দিবস পালিত

অনলাইন ডেস্ক
যথাযোগ্য মর্যাদায় রাবিতে শিক্ষক দিবস পালিত
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সোমবার সকালে জোহা স্মারক বক্তৃতা দেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক শ্যামল চক্রবর্তী। ছবি : সংগৃহীত

যথাযোগ্য মর্যাদায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শহীদ ড. জোহা দিবস ও শিক্ষক দিবস পালিত হয়েছে। ঊনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থানকালে আজকের দিনে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন প্রক্টর ও রসায়ন বিভাগের শিক্ষক ড. সৈয়দ মুহম্মদ শামসুজ্জোহা পাকিস্তানি সেনাদের গুলিতে নিহত হন। তিনিই এ দেশের প্রথম শহীদ বুদ্ধিজীবী। দিনটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘শিক্ষক দিবস’ হিসেবে পালিত হয়ে আসছে।

দিবসটি উপলক্ষে আজ সোমবার ভোরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ভবনসহ অন্যান্য ভবনে কালো পতাকা উত্তোলন করা হয়। সকাল ৭টার দিকে উপাচার্য অধ্যাপক এম আব্দুস সোবহান, উপ-উপাচার্য অধ্যাপক আনন্দ কুমার সাহা, অধ্যাপক চৌধুরী মো. জাকারিয়া, কোষাধ্যক্ষ এ কে এম মোস্তাফিজুর রহমান আল-আরিফ ও রেজিস্ট্রার এম এ বারীসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা শহীদ ড. জোহার সমাধি ও জোহা স্মৃতিফলকে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে এক মিনিট নীরবতা পালন করেন।

এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগ, আবাসিক হল, পেশাজীবী সমিতি, ছাত্র রাজনৈতিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন পুষ্পস্তবক অর্পণ করে। সকাল সাড়ে ৮টায় অফিসার সমিতি কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয় আলোচনা সভা। সকাল ১০টায় শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ সিনেট ভবনে জোহা স্মারক বক্তৃতা। এতে স্মারক বক্তা ছিলেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক শ্যামল চক্রবর্তী।

অনুষ্ঠানে অধ্যাপক শ্যামল চক্রবর্তী বলেন, ‘যে সব গুণাবলির জন্য একজন পাঠদাতা প্রকৃত শিক্ষকের মর্যাদা লাভ করেন, ড. শামসুজ্জোহা নিঃসন্দেহে সেই স্থান অর্জন করেছেন। শিক্ষক সমাজ জাতির মেরুদণ্ড। তবে ভঙ্গুর মেরুদণ্ড নিয়ে দিন অতিবাহিত করলে জাতির ঋজু মেরুদণ্ড নির্মাণ হয় না। ড. জোহা নিজের জীবন দান করে আমাদের এটাই জানিয়ে গিয়েছিলেন। তাঁর প্রত্যয়ী আত্মত্যানে তৈরি হয়েছে পাকিস্তানের বন্দিশালা থেকে মুক্ত বাংলাদেশ।’

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক এম আব্দুস সোবহানসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা শহীদ ড. জোহার সমাধি ও জোহা স্মৃতিফলকে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে এক মিনিট নীরবতা পালন করেন। ছবি : এনটিভি

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. আব্দুস সোবহান বলেন, ‘শহীদ ড. জোহা একজন নির্ভীক শিক্ষক ছিলেন। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বাহিনীর হাত থেকে শিক্ষার্থীদের বাঁচাতে বলিষ্ঠ কণ্ঠে তিনি বলেছিলেন, কোনো ছাত্রের গায়ে গুলি লাগার আগে, যেন আমার গায়ে গুলি লাগে। তাঁর আত্মত্যাগ বিফলে যায়নি। তাঁর আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে দেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম আরো বেগবান হয়েছে। তিনি আমাদের অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে থাকবেন।’

শিক্ষক দিবসের কর্মসূচিতে আরো ছিল বাদ জোহর কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে কোরআন খানি ও বিশেষ মোনাজাত। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় কাজী নজরুল ইসলাম মিলনায়তনে দোয়া মাহফিল ও প্রদীপ প্রজ্বালন। এ দিন শহীদ স্মৃতি সংগ্রহশালা সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত ছিল।

ড. সৈয়দ মুহম্মদ শামসুজ্জোহা ১৯৩৪ সালের ১ মে পশ্চিমবঙ্গের বাঁকুড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৫৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রসায়নে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। এর কিছুদিনের মধ্যেই তিনি লন্ডনে একটি স্কলারশিপ পান। ১৯৬৪ সালে তিনি লন্ডন থেকে ফিরে এসে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগে যোগ দেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরের দায়িত্ব পালনকালে ১৯৬৯ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি  আইয়ুববিরোধী আন্দোলনের সময় পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর আক্রমণের মুখে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের রক্ষা করতে গিয়ে শহীদ হন তিনি।

উপরে