তিস্তাপাড়ে ফের বন্যা, ডুবলো লালমনিরহাটের ২০ হাজার পরিবার | Daily Chandni Bazar তিস্তাপাড়ে ফের বন্যা, ডুবলো লালমনিরহাটের ২০ হাজার পরিবার | Daily Chandni Bazar
logo
প্রকাশিত : ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০২০ ১৬:৪৭
তিস্তাপাড়ে ফের বন্যা, ডুবলো লালমনিরহাটের ২০ হাজার পরিবার
লালমনিরহাট প্রতিনিধি

তিস্তাপাড়ে ফের বন্যা, ডুবলো লালমনিরহাটের ২০ হাজার পরিবার

দুই সপ্তাহ ধরে টানা ভারি বর্ষন ও উজানের পাহাড়ি ঢলে তিস্তা নদীর পানি বিপদসীমার ২৭ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে তিস্তার বামতীরে লালমনিরহাটের প্রায় ২০ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। বৃহস্পতিবার (২৪ সেপ্টেম্বর) সকাল ৯টায় দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারেজের ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানি প্রবাহ রেকর্ড করা হয় ৫২ দশমিক ৮৭ সেন্টিমিটার। যা (স্বাভাবিক ৫২ দশমিক ৬০ সেন্টিমিটার) বিপৎসীমার ২৭ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।জানা গেছে, জন্মলগ্ন থেকে খনন না করায় তিস্তা নদীর তলদেশ ভরাট হওয়ায় উজানের সামান্য ঢলেই তিস্তার দুই তীর প্লাবিত হয়ে লালমনিরহাটে ভয়াবহ বন্যা দেখা দেয়। পানিবন্দি হয়ে পড়ে হাজার হাজার পরিবার। পানি কমতে শুরু করলে তীব্র্র ভাঙনের মুখে পড়ে নদীর পাড়ের বসতভিটা, ফসলি জমি ও স্থাপনা।

বুধবার (২৩ সেপ্টেম্বর) সকাল থেকে দিনভর ভারি বৃষ্টিপাতের সাথে উজানে ভারতের পাহাড়ি ঢলের মাত্রা বেড়ে গেলে তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি পায়। বুধবার সন্ধা থেকে তিস্তা নদীর পানি প্রবাহ বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ব্যারেজ রক্ষার্থে মুলস্রোত ধারার সকল জলকপাট খুলে পানি প্রবাহ নিয়ন্ত্রন করছে ব্যারাজ কর্তৃপক্ষ।ফলে তিস্তা নদীর বাম তীরে লালমনিরহাটের ৫টি উপজেলার প্রায় ২০ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। তিস্তার চরাঞ্চল ও নদী তীরবর্তী এলাকার রাস্তা-ঘাট ডুবে গিয়ে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে চরাঞ্চলের মানুষ।

দীর্ঘদিন সংস্কার না করায় ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধগুলো। বন্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধ ওয়াব্দা আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা রজবপাড়া, চৌরাহা ও কুটিরপাড়সহ প্রায় শতাধিক স্থানে ঝুঁকিপুর্ন হয়ে পড়েছে। স্থানীয়রা বাঁধটি রক্ষায় মাটি ও বস্তা দিয়ে রক্ষার চেষ্টা করছে। এ বাঁধ উপচে বা ধ্বসে গেলে হাজার হাজার হেক্টর আবাদি জমি জলাবদ্ধতায় পরিনত হবে। বেড়ে যাবে পানি বন্দি পরিবারের সংখ্যা। দ্রুত ব্যবস্থা নিতে সরকারের ঊর্দ্ধতন মহলের দৃষ্টিকার্ষন করেন নদীপাড়ের মানুষ।

রজবপাড়া গ্রামের মানজেদুল ইসলাম ডলার বলেন, একদিকে নদী ভাঙন। অন্যদিকে বন্যা। এতে নদীপাড়ের মানুষ কাহিল হয়ে পড়েছে। ওয়াব্দা বাঁধটি উপচে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাউকে পাওয়া যায়নি। রাতভর গ্রামবাসী চেষ্টা করে কোন রকম আটকে রেখেছি। তবে পানি আরো বাড়লে ওয়াব্দা বাঁধ রক্ষা করা সম্ভব হবে না। এ বাঁধ ভেঙে গেলে কয়েক হাজার হেক্টর আবাদি জমি পানিতে ডুবে যাবে। দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানান তিনি।চৌকি/খাটের উপর মাচাং বানিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন পানিবন্দি পরিবারের মানুষগুলো। কেউ কেউ ঘর-বাড়ি ছেড়ে উঁচু বাঁধ বা পার্শ্ববর্তী গ্রামে আশ্রয় নিয়েছেন। খুব কষ্টে পড়েছেন বৃদ্ধ, প্রতিবন্ধী ও শিশুরা। গবাদি পশু-পাখি নিয়েও চরম বিপাকে পানিবন্দি পরিবারগুলো। শুকনো খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দিয়েছে বন্যা দুর্গত এলাকায়।

টানা দুই সপ্তাহ ধরে বৃষ্টির সাথে যুক্ত হওয়ায় এ বন্যায় জেলার হাজার হাজার হেক্টর জমির আমন ধান পানিতে ডুবে গেছে। টানা বৃষ্টিতে পঁচে নষ্ট হচ্ছে কৃষকের সবজি ক্ষেত। চলমান বৃষ্টি আর বন্যায় ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছেন জেলার কৃষকরা। আমনের লোকসানের শ্বঙ্কায় পড়েছেন জেলার কৃষক পরিবারগুলো। অপর দিকে টানা বৃষ্টিতে কর্মহীন হয়ে পড়া শ্রমজীবী পরিবারগুলো পড়েছেন চরম খাদ্য সংকটে।আদিতমারী উপজেলার গোবর্দ্ধন গ্রামে সাহেদ মিয়া বলেন, দুই দিন ধরে পানিবন্দি আছি। গত এক মাস ধরে থেমে থেমে বন্যা হচ্ছে। ২/৪ দিন টানা পানিবন্দি থাকতে হয়েছে। তিস্তার তলদেশ ভরাট হওয়ায় সামান্যতেই ভয়াবহ বন্যা দেখা দেয়। চলতি বছরে ৫ম বারের মত পানিবন্দি হয়ে পড়েছি। এবারের পানির বেগ অনেক বেশি। গত বন্যার চেয়ে এ বন্যায় পানিবন্দি পরিবারের সংখ্যা অনেক বেশি। 

 তিস্তা ব্যারেজ সেচ প্রকল্পের ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম বলেন, বুধবার সন্ধ্যা থেকে পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করে প্রবাহিত হচ্ছে।বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা এবং সকাল ৯ টায় বিপৎসীমার ২৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহ রেকর্ড করা হয়েছে। ব্যারেজ রক্ষার জন্য সবগুলো জলকপাট খুলে পানি প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। এ বন্যা কিছুটা সময় স্থায়ী হতে পারে বলেও জানান তিনি।লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক আবু জাফর বলেন, তিস্তার তলদেশ ভরাট হওয়ায় সামান্যতেই এ জেলায় বন্যা দেখা দেয়। চলমান বন্যায় পানিবন্দি পরিবারগুলোর খোঁজ খবর নিতে সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

দৈনিক চাঁদনী বাজার/সাজ্জাদ হোসাইন