প্রকাশিত : ১২ আগস্ট, ২০২৪ ০১:২৬

শিক্ষার্থীদের রং তুলির আঁচড়ে পুন্ড্রনগরী বগুড়া ফিরে পাচ্ছে তার চিরচেনা রুপ

ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা থেকে নৈশপ্রহরীর ভূমিকাতেও শিক্ষার্থীরা
সঞ্জু রায়ঃ
শিক্ষার্থীদের রং তুলির আঁচড়ে পুন্ড্রনগরী বগুড়া ফিরে পাচ্ছে তার চিরচেনা রুপ
বগুড়া শহরের বিভিন্ন দেয়ালে ছবি আকছে শিক্ষার্থীরা। ছবি- চাঁদনী বাজার
শিক্ষার্থীদের নানা সৃজনশীল উদ্যোগে অপরুপ সাঁজে সেজে উঠতে শুরু করেছে উত্তরের প্রাণকেন্দ্র বগুড়া। বিধ্বস্ত বগুড়াকে পুনরুর্জীবিত করতে মাঠে নেমেছেন কোমলমতি শিক্ষার্থীরা। কেউবা রং তুলি হাতে দেয়ালে আঁকছেন গ্রাফিতি, কেউবা নিয়োজিত হয়েছেন ট্রাফিক পুলিশের ভূমিকায় আবার অনেকে দলবদ্ধভাবে নেমেছেন শহর পরিছন্নতার কাজে, করছেন বৃক্ষরোপণও । এ যেন স্বাধীন বাংলাদেশে তারুণ্যের এক অন্যরকম রূপ দেখছে বগুড়াবাসী।
এদিকে কোটা সংস্কার আন্দোলনে বগুড়ার দামাল সন্তানদের কর্মসূচিতে শুরু থেকেই উত্তাল ছিলো উত্তরের প্রাণকেন্দ্র বগুড়া। দিনশেষে ঐক্যবদ্ধ শক্তি আর তারুণ্যের জোয়ারে বিজয় হয়েছে ছাত্র জনতার কিন্তু আন্দোলনে যেন এক প্রকার বিধ্বস্ত হয়ে যায় প্রিয় শহর বগুড়া। তাইতো বিজয় উল্লাশের আনন্দের সাথেই নিজেদের প্রাণের শহরকে পরিচ্ছন্ন করে অপরূপ সাজে সাঁজানোর দায়িত্বটাও যেন পালন করছে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা। শহরের জলেশ্বরীতলা, পুলিশ সুপারের কার্যালয় এলাকা, সার্কিট হাউজ এলাকা, সাতমাথাসহ বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে ঘুরে দেখা যায়, শিক্ষার্থীদের রং তুলি আঁচড়ে বগুড়া শহরের দেয়ালগুলোতে যেন ফুঁটে উঠতে শুরু করেছে বর্তমান প্রজন্মের মেধা ও বুদ্ধিদীপ্ত চেতনার। দেশপ্রেম ও দায়িত্বের জায়গা থেকে এইকাজে অংশ নিচ্ছেন ছোট বড় সকল বয়সী শিক্ষার্থী। 
এ বিষয়ে শিক্ষার্থীদের মাঝে মাহমুদ আল জিহাদ ও মৌমিতা আক্তারের সাথে কথা বললে শিশুসুলভ আচরণে তারা তাদের অনুভূতি প্রকাশকালে বলেন, এই দেশটা আমাদের আর এই শহরেই আমাদের জন্ম। আন্দোলনে যেহেতু বগুড়া শহর কিছুটা হলেও অস্থিতিশীল হয়েছে নষ্ট হয়েছে আমাদের শহরের সৌন্দর্য্য। তাই নিজেদের দায়বদ্ধতা ও দেশপ্রেম থেকেই আমরা শহরকে আবারো নতুন করে সাজানোর কাজে নেমেছি। তারা তাদের নিজেদের টাকা দিয়ে দেয়ালে গ্রাফিতে আঁকাসহ নিজেদের অন্তরের নানা অনুভূতিগুলো শব্দে প্রকাশ করে তা দেয়াল লিখন এর মাধ্যমে তুলে ধরছেন তারা। ইতিমধ্যেই শহরের অধিকাংশ দেয়ালেই ফুটে উঠেছে তাদের চিত্রকর্ম।
এদিকে সড়কে যখন চিরচেনা সেই ট্রাফিক পুলিশের অনুপস্থিতি তখন সেই দায়িত্বও কাঁধে তুলে নিয়েছে শিক্ষার্থীরা। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত সড়কের শৃঙ্খলা ফেরাতে দায়িত্ব পালন করছেন তারা যাতে বদলে গেছে চিরচেনা যানজটের নগরী বগুড়ার চিত্র। হেলমেটবিহীন চালকদেরও সতর্ক করছেন শিক্ষার্থীরা যাতে শহরের এখন অধিকাংশ মোটরসাইকেল চালকের মাথায় দেখা মিলছে হেলমেটের।
শুধু গ্রাফীতি আঁকা কিংবা ট্রাফিক পুলিশের ভূমিকায় নয় দলবদ্ধভাবে ঝাড়ুহাতে সড়ক পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার কাজ করছে শিক্ষার্থীরা, সবার মাঝেই দেখা মেলে এক অন্যরকম উচ্ছাস ও ইতিবাচক পরিবর্তন আনার দৃঢ় আকাঙ্ক্ষা। পাশাপাশি কোটা সংস্কার আন্দোলনে নিহতদের স্মরণে সড়কের ডিভাইডার ও নিজ নিজ এলাকায় বাস্তবায়ন করছেন বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি।
তারুণ্যের জোয়ারে ছিনিয়ে আনা বিজয়ের উল্লাসের পাশাপাশি শিক্ষার্থীরাই আজ চেষ্টা করে যাচ্ছে শহরবাসীর  নিরাপত্তা বিধানেও । বলছেন, তারা দেশ সংস্কারের কাজে নেমেছেন পর্যায়ক্রমে এই দেশকে সাজানো হবে মনের মাধুরীতে যেখানে থাকবে না কোন বৈষম্য আর দুর্নীতি।
এ বিষয়ে বগুড়া জলেশ্বরীতলার বাসিন্দা রিগ্যান হোসেন বলেন, বর্তমানে সারাদেশে রাষ্ট্র সংস্কারের কাজ চলছে যার দায়িত্ব নিয়েছে সাধারণ শিক্ষার্থীরাই। শুধু দিনের বেলাতে দেয়ালে দেয়ালে গ্রাফিতি কিংবা চিত্রকর্ম অঙ্কনই নয় বগুড়ার শিক্ষার্থীরা ট্রাফিকের দায়িত্ব পালনসহ বিভিন্ন দলে ভাগ হয়ে রাতের বেলা বিভিন্ন মন্দির ও এলাকার পাহারা দেয়াতেও নিয়োজিত হয়েছেন। শিক্ষার্থীরা শুরু করেছে বাজার মনিটরিং কার্যক্রমও এভাবে একের পর এক দেশের প্রয়োজনে সকল কার্যক্রমই হাতে নেবে শিক্ষার্থীরা।
পুন্ড্রনগরী বগুড়ায় কোটা সংস্কার আন্দোলনে বগুড়ার তরুণ প্রজন্ম দেখিয়ে দিয়েছে তাদের বাঁধভাঙ্গা সাহস আর প্রকাশ করেছে তাদের বুদ্ধিদীপ্ত চেতনার। দেশের ভার যখন আমাদের তরুণ প্রজন্মের কাঁধে তখন সম্ভাবনার আলো আর বেশি দূরে নয়। শিক্ষার্থীদের হাত ধরেই বগুড়া আবারো ধীরে ধীরে ফিরুক তার চিরচেনা রূপে প্রত্যাশা সকলের। 
উপরে