জীবিকার তাগিদে ধান চাষ, লাভের অঙ্ক প্রায় শুন্য

বৈশাখের কাঠফাটা রোদ আর প্রচণ্ড গরমে মাঠে ঘাম ঝরাচ্ছেন কৃষকরা। সোনালী ধানের শীষে মাঠ ভরে উঠলেও কৃষকের মুখে হাসি নেই। কারণ—ফসল ঘরে তুলেও মেটানো যাচ্ছে না চাষের খরচ। লাভের হিসাব যেন শুন্যর কাছাকাছি এসে দাঁড়িয়েছে।
বগুড়া জেলা ও শেরপুর উপজেলার কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বর্তমানে এক বিঘা জমিতে ধান চাষ করতে চাষিদের গুনতে হচ্ছে প্রায় ৩০ থেকে ৩২ হাজার টাকা। জমি লিজ বাবদ বিঘাপ্রতি গড়ে ২০-২২ হাজার টাকা, চারা লাগানো থেকে কাটা পর্যন্ত খরচ আরও ১০-১০.৫ হাজার টাকা। এর পাশাপাশি শ্রমিক সংকট ও মজুরি বৃদ্ধি যেন বাড়তি দুর্ভোগ।
কৃষকরা বলছেন, ধান কাটার মৌসুমে শ্রমিক পাওয়া যায় না, আর যাঁরা আসে, তাঁদের মজুরি বিঘাপ্রতি ৪৫০০ থেকে ৫০০০ টাকা পর্যন্ত। অন্যদিকে হাটে ধানের দামও আশানুরূপ নয়। শেরপুর ও শাজাহানপুরে সুবল লতা ধানের দাম মণপ্রতি ১২০০-১২৫০ টাকা, কাটারি ধান ১২৫০-১৩০০ টাকা এবং মোটা চালের ধান ৯৫০-১০০০ টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে।
শেরপুরের কৃষক জিহাদ আহমেদ বলেন, "নিজের জমি আর নিজের হাতে কামলা দিলে হয়তো পাঁচ হাজার টাকা বাঁচানো যায়। কিন্তু নিজের শ্রম ও সময়ের দাম ধরলে লাভ থাকে না বললেই চলে।"
আরেক কৃষক ইউসুফ আলী জানান, “এ বছর ১০ বিঘা জমিতে ধান চাষ করেছি। জমির লিজ বাদ দিলে বিঘাপ্রতি ৪৫০০ টাকা লাভ হয়েছে। কিন্তু শ্রম ধরলে কিছুই থাকে না। সরকার যদি ধান কাটার মেশিন সহজলভ্য করে, তাহলে খরচ কিছুটা কমবে।”
মির্জাপুরের কৃষক কামরুল ইসলাম অভিযোগ করেন, “৩০ বিঘা জমিতে ধান চাষ করেছি। ফলন ভালো হলেও কৃষি অফিস থেকে কেউ আসেনি, কোনো পরামর্শ পাইনি। পরামর্শ পেলে হয়তো উৎপাদন আরও বাড়তো, খরচ কমতো।”
জেলা কৃষি বিভাগ বলছে, তারা মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের সমস্যা সম্পর্কে অবগত এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে কাজ করছে। শেরপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ফারজানা আক্তার বলেন, “আমরা কৃষকদের স্বার্থ রক্ষায় সচেষ্ট। আশা করছি, সরকার খুব শীঘ্রই এ বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নেবে।”
বগুড়া জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক (শস্য) নাজমুল হক মন্ডল জানান, “মাঠ পর্যায়ে আমাদের উপ-সহকারীরা নিয়মিত কৃষকদের পরামর্শ দিচ্ছেন। উৎপাদন খরচ কমানো ও ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করতে আমরা বিভিন্ন পদক্ষেপ নিচ্ছি।”
এদিকে, অভ্যন্তরীণ বাজার থেকে বোরো ধান সংগ্রহে সরকার ১৭.৫ লাখ টন সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। এর মধ্যে সাড়ে ৩ লাখ টন ধান এবং ১৪ লাখ টন সেদ্ধ চাল সংগ্রহ করা হবে। ধান সংগ্রহ মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে কেজিপ্রতি ৩৬ টাকা, আর সেদ্ধ চাল ৪৯ টাকা।
তবে কৃষকদের প্রশ্ন, এই সরকারি সংগ্রহের সুফল মাঠ পর্যায়ে আদৌ পৌঁছাবে কিনা?