বগুড়ায় এক বছরে ৯৩৬ মাদক আসামি খালাস, ৪৪ পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যাখ্যা তলব

বগুড়ায় সাক্ষ্যগ্রহণে গাফিলতি, আদালতে হাজির না হওয়া এবং সরকারি আইন কর্মকর্তাদের দুর্বলতার কারণে এক বছরে ৬৬৫টি মাদক মামলায় প্রায় এক হাজার আসামি খালাস পেয়েছেন। এসব মামলায় ৪৪ জন পুলিশ ও র্যাব কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আদালতে সাক্ষ্য না দেওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে ব্যাখ্যা তলবের সিদ্ধান্ত হয়েছে।
বগুড়া জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সূত্রে জানা যায়, ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত এক হাজার চারটি মাদক মামলার রায় ঘোষণা করা হয়। এসব মামলায় আসামির সংখ্যা ছিল ১ হাজার ৩৫১ জন। এর মধ্যে ৬৬৫টি মামলায় পুলিশের অনুপস্থিতি এবং অসংলগ্ন ও বিভ্রান্তিকর সাক্ষ্যের কারণে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় ৯৩৬ জন আসামি খালাস পান।
এসব মামলার অধিকাংশই দায়ের করেছিলেন পুলিশ, র্যাব ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা। তবে অভিযোগপত্র জমা দেওয়ার পর মামলার বিচারপ্রক্রিয়ায় তারা দায়িত্বশীল আচরণ করেননি। আদালত পুলিশের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৭ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত দায়ের হওয়া ১,০০৪টি মামলার মধ্যে ২২টি মামলায় বাদী ও তদন্ত কর্মকর্তা আদালতে সাক্ষ্য দেননি। আবার অনেক সাক্ষী এলোমেলো ও উল্টাপাল্টা সাক্ষ্য দিয়েছেন, যা মামলার ভিত্তি দুর্বল করে দেয়।
এই প্রতিবেদনের ভিত্তিতে জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয় থেকে গত ১ জুলাই ২২টি মামলার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ৪৪ জন তদন্ত কর্মকর্তা ও জব্দ তালিকা প্রস্তুতকারীদের বিরুদ্ধে ব্যাখ্যা তলব করা হয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বগুড়ার পুলিশ সুপার জেদান আল মুসা বলেন, “আদালতের রায় নিয়ে মন্তব্য করা সঠিক হবে না। বিষয়টি আমাদের অভ্যন্তরীণ। আমরা এসব নিয়ে পর্যালোচনা করছি।”
বগুড়া জেলা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট আব্দুল বাছেদ বলেন, “এত বিপুল সংখ্যক মাদক মামলায় আসামিদের খালাস পাওয়া দুঃখজনক। তবে এর পেছনে শুধু পুলিশের নয়, মামলার বাদী ও তদন্তকারী কর্মকর্তাদের গাফিলতির পাশাপাশি সরকার পক্ষে মামলার পরিচালনায় আইন কর্মকর্তাদের দুর্বলতাও দায়ী।”
তিনি আরও বলেন, “গত বছরের ৫ আগস্ট ফ্যাসিস্ট সরকার ক্ষমতা ছেড়ে দিলেও তাদের নিয়োগপ্রাপ্ত আইন কর্মকর্তারা দায়িত্বে ছিলেন ২২ অক্টোবর পর্যন্ত। আমরা দায়িত্ব নিই ২৩ অক্টোবর। তখন অনেক মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ ও শুনানি শেষ হয়ে গিয়েছিল, ফলে আমাদের কিছুই করার ছিল না। তবে এখন আমরা কঠোর অবস্থানে রয়েছি।”
এ ঘটনায় জেলা পুলিশের পাশাপাশি প্রশাসন এবং বিচার বিভাগের বিভিন্ন মহলে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।