প্রকাশিত : ২১ অক্টোবর, ২০২৫ ০০:১৭

বগুড়ায় ফিরছে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট : কোন টিকিট লাগবে না

নিজস্ব প্রতিবেদক
বগুড়ায় ফিরছে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট : কোন টিকিট লাগবে না
শহীদ চান্দু স্টেডিয়াম। ছবি- কালের কণ্ঠ হতে সংগৃহীত।

দীর্ঘ ১৯ বছরের অপেক্ষা। এক প্রজন্মের ক্রিকেটপ্রেমীর বুকের ভেতর জমে থাকা অপূর্ণ স্বপ্ন। অবশেষে সেই স্বপ্ন বাস্তব হতে যাচ্ছে—আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ফিরছে বগুড়ার শহীদ চান্দু স্টেডিয়ামে।

২০০৬ সালের পর এই প্রথম আবারও বিদেশি দলের পদচারণায় মুখর হতে যাচ্ছে ঐতিহ্যবাহী এই স্টেডিয়াম। তবে এবার মাঠে নামছে অনূর্ধ্ব-১৯ দলের তরুণ টাইগাররা। আফগানিস্তান অনূর্ধ্ব-১৯ ও বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দলের মধ্যকার দুটি একদিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচের মাধ্যমে আবারও জেগে উঠছে বগুড়ার ক্রিকেট।

১৯ বছরের আক্ষেপ ঘুচছে

২০০৬ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সর্বশেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচের পর ধীরে ধীরে অবহেলার অন্ধকারে ঢেকে যায় চান্দু স্টেডিয়াম।
কখনও এনসিএল, কখনও অনুশীলন ক্যাম্প—তবে আন্তর্জাতিক ম্যাচ যেন কেবলই অতীতের গল্প হয়ে গিয়েছিল।

সেই আক্ষেপ ঘুচছে ২০২৫ সালের অক্টোবরে।
আগামী ২৮ ও ৩১ অক্টোবর শহীদ চান্দু স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হবে দুইটি ওয়ানডে ম্যাচ।
সবচেয়ে বড় কথা, দর্শকদের কোনো টিকিট লাগবে না—বিনামূল্যে গ্যালারিতে বসে দেখা যাবে ম্যাচ।

বগুড়া জেলা ক্রীড়া সংস্থার সদস্য মমিনুর রশিদ শাইন জানান,

“আফগানিস্তান অনূর্ধ্ব-১৯ দল ২০ অক্টোবর বগুড়ায় পৌঁছাবে। একদিন বিশ্রামের পর ২২ অক্টোবর থেকে তারা অনুশীলন শুরু করবে। প্রথম দুটি ওয়ানডে বগুড়ায়, বাকি তিনটি রাজশাহীতে অনুষ্ঠিত হবে।”

ঐতিহ্যবাহী চান্দুর ইতিহাস

২০০৪ সালে এই মাঠে খেলেছিলেন জিম্বাবুয়ের তারকা ব্রেন্ডন টেইলরএলটন চিকামবুরা
২০০৬ সালে পিচে দেখা গিয়েছিল শ্রীলঙ্কার কিংবদন্তি সাঙ্গাকারা, জয়বর্ধনে, চামিন্দা ভাসদের।
এরপর থেকে মাঠটি কার্যত পরিত্যক্ত হয়ে পড়ে।

দেশের অন্যতম সেরা ব্যাটিং উইকেট হিসেবে খ্যাত এই মাঠে আবারও আন্তর্জাতিক ম্যাচ ফিরছে—যা বগুড়ার ক্রিকেট ইতিহাসে নতুন প্রাণ সঞ্চার করেছে।

 ক্রিকেট শহরের নতুন প্রাণ

বগুড়ার ক্রিকেটপ্রেমীরা মুখিয়ে আছেন মাঠমুখী হতে।
তাদের আশা, এই দুই ম্যাচই হোক নতুন অধ্যায়ের সূচনা।
দর্শকদের উপস্থিতিই হবে সেই বার্তা, যা বিসিবিকে ভাবাবে—চান্দু স্টেডিয়ামে নিয়মিত আন্তর্জাতিক ম্যাচ আয়োজনের জন্য।

বিসিবি পরিচালকের আশাবাদ

সম্প্রতি বগুড়ার আরডিএ মিলনায়তনে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বিসিবির নবনির্বাচিত পরিচালক মোখছেদুল কামাল বাবু বলেন,

“ক্রিকেট আমাদের জাতীয় ঐক্যের প্রতীক। বগুড়ার মানুষ হিসেবে আমার প্রথম লক্ষ্য চান্দু স্টেডিয়াম সংস্কার করা ও আন্তর্জাতিক ম্যাচ ফিরিয়ে আনা।”

তিনি আরও বলেন,

“যদি বগুড়ায় বিমানবন্দর সচল থাকত, তাহলে বিপিএলের তিন-চারটি ম্যাচও এখানে আয়োজন করা যেত। তবুও অনূর্ধ্ব-১৯ সিরিজ দিয়ে শুরুটা হচ্ছে—এটাই বড় আনন্দ।”

 ভবিষ্যতের প্রত্যাশা

দীর্ঘ অপেক্ষার অবসানে এখন বগুড়ার কণ্ঠে একটাই সুর—
“চান্দু স্টেডিয়ামে ক্রিকেট ফিরেছে, এবার যেন আলোর রেখা নিভে না যায়।”

তরুণ ক্রিকেটাররা গা গরম করবে মাঠে, আর গ্যালারিতে জ্বলে উঠবে উল্লাসের আগুন।
এই দুটি ম্যাচই যদি বগুড়াকে ফের ক্রিকেট মানচিত্রে ফিরিয়ে আনে—
তাহলে এই প্রত্যাবর্তনই হবে ইতিহাসের এক নতুন সূচনা।

উপরে