বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা সাকিব খানকে গভীর রাতে গ্রেপ্তার, ঢাকায় নেওয়া হয়েছে

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বগুড়া জেলা কমিটির সাবেক সদস্যসচিব সাকিব খানকে গ্রেপ্তার করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। সোমবার রাত পৌনে চারটার দিকে বগুড়া শহরের নারুলী এলাকার নিজ বাসা থেকে তাঁকে আটক করা হয়। পরে রাতেই তাঁকে ঢাকায় নেওয়া হয়।
বগুড়ার পুলিশ সুপার জেদান আল মুসা জানান, শাহবাগ থানায় দায়ের করা একটি মামলায় সাকিব খানকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে কী অভিযোগ আনা হয়েছে, সে বিষয়ে বিস্তারিত জানাতে পারবেন শাহবাগ থানা-পুলিশ।
র্যাব-১২ এর বগুড়া স্পেশাল কোম্পানি কমান্ডার স্কোয়াড্রন লিডার ফিরোজ আহমেদ বলেন, “ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের একটি দল সাকিব খানকে গ্রেপ্তার করেছে। র্যাব অভিযান পরিচালনায় তাদের সহযোগিতা করেছে।”
শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খালিদ মনসুর বলেন, “সাকিব খানের বিরুদ্ধে প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। পছন্দসই স্থানে বদলি ও পদায়নের প্রতিশ্রুতি দিয়ে তিনি প্রতারণা করেছেন বলে অভিযোগ করা হয়েছে। এই অভিযোগের ভিত্তিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে নিযুক্ত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী খোদা বখস চৌধুরীর নির্দেশে সাইবার সুরক্ষা আইনে একটি মামলা দায়ের করা হয়।”
পরিবারের অভিযোগ: ‘মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হয়েছে’
সাকিব খানের বাবা ফরহাদ হোসেন দাবি করেন, “ভিত্তিহীন অভিযোগে আমার ছেলেকে ফাঁসানো হয়েছে। প্রতারণার কোনো ঘটনায় সাকিব জড়িত নয়। সাম্প্রতিক সময়ে সে সরকারের সমালোচনামূলক কিছু পোস্ট ফেসবুকে দিয়েছিল। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে পুলিশ তাঁকে মিথ্যা মামলায় গ্রেপ্তার করেছে।”
তিনি আরও বলেন, “৭ জুলাই থেকে বগুড়ায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছিল সাকিব। সেই সময় গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা আমাকে তুলে নিয়ে ভয় দেখিয়েছিল। এখন সেই আন্দোলনের নেতাদের হয়রানি করা হচ্ছে। আমরা আদালতে জামিনের আবেদন করেছি, দ্রুত মুক্তির আশায় আছি।”
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সরকারের সমালোচনা
সাকিব খানের ফেসবুক প্রোফাইল ঘেঁটে দেখা যায়, ১৯ অক্টোবর তিনি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদল সদস্য জুবায়েদ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় সরকারের “চরম ব্যর্থতা”র সমালোচনা করেন। তিনি লিখেছিলেন,
“এই ঘটনাটি নিছক কোনো দুর্ঘটনা নয়—এটি একটি পরিকল্পিত রাজনৈতিক খুনের আশঙ্কা স্পষ্ট। ন্যায়বিচার না পাওয়া পর্যন্ত আমরা নীরব থাকব না।”
এর আগে ১৮ অক্টোবর তিনি প্রধান উপদেষ্টার ফেসবুক পেজ থেকে প্রকাশিত একটি সরকারি বিবৃতি শেয়ার করে লেখেন, “আপনার বিবৃতি আপনার পকেটে রাখেন, জনগণের সঙ্গে তামাশা বন্ধ করেন।”
রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া
বগুড়া জেলা এনসিপি সমন্বয়কারী দলের সদস্য শওকত ইমরান বলেন, “তাঁকে গ্রেপ্তারের কারণ পুলিশ পরিষ্কারভাবে জানাক। ব্যক্তিগত অপরাধে জড়িত থাকলে দল তার দায় নেবে না। তবে সরকারের সমালোচনার কারণে যদি হয়রানি করা হয়, তাহলে দল তাঁর পাশে থাকবে এবং প্রতিবাদ কর্মসূচি ঘোষণা করবে।”
শাহবাগ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. আসাদুজ্জামান বলেন, “স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিশেষ সহকারীর করা অভিযোগের ভিত্তিতে সাইবার সুরক্ষা আইনে মামলা করা হয়েছে। অভিযোগ প্রমাণিত না হলে তদন্তেই তা পরিষ্কার হয়ে যাবে।”
বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণা
সাকিব খানের গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে আজ বিকেলে বগুড়া শহরের সাতমাথায় বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশের ডাক দিয়েছে ‘ভয়েস অব জুলাই, বগুড়া’। সংগঠনের পক্ষ থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশসহ সব ‘কালো আইন’ বাতিল এবং সাকিব খানের নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করা হয়েছে।