"সরকার বদলায়, বিপ্লব হয়—তবুও শিক্ষা ক্যাডারে পদোন্নতির আলো জোটে না!"
“সরকার যায়, সরকার আসে; বিপ্লব হয়—কিন্তু শিক্ষায় বৈষম্য নিরসন হয় না, বরং বনসাই হয়ে রয়।”
এই হৃদয়স্পর্শী উক্তিটি দিয়ে নিজেদের দীর্ঘদিনের পদোন্নতি বঞ্চনার প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন শুরু করেন বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডার প্রভাষক পরিষদ, বগুড়া শাখা। ৯ নভেম্বর ২০২৫ রবিবার বগুড়া প্রেস ক্লাবে অনুষ্ঠিত এ সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের নেতৃবৃন্দ শিক্ষা ক্যাডারের দীর্ঘদিনের বৈষম্য, প্রশাসনিক উদাসীনতা ও অনিয়মের বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সরকারি আজিজুল হক কলেজের প্রভাষক মো. ওয়ালি উল্লাহ, যিনি শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তাদের ন্যায্য পদোন্নতির দাবিতে সরকার ও সংশ্লিষ্ট দপ্তরের প্রতি দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান।
১২ বছরেও পদোন্নতি নয়, বৈষম্যের শিকার শিক্ষা ক্যাডার
প্রভাষক পরিষদের নেতৃবৃন্দ অভিযোগ করেন, ‘২৪ এর গৌরবোজ্জ্বল বিপ্লব পরবর্তী সময়ে প্রায় সব ক্যাডারের কর্মকর্তারা একাধিক টায়ারে পদোন্নতি পেয়েছেন। এমনকি অনেক মৃত কর্মকর্তার পরিবারও আর্থিক সুবিধা পেয়েছে। কিন্তু শিক্ষা ক্যাডারের প্রভাষকরা ১২ বছর পেরিয়ে গেলেও একটিও পদোন্নতি পাননি।’
তারা বলেন, “স্বাস্থ্য, প্রশাসন, ব্যাংক, বিশ্ববিদ্যালয় এমনকি এমপিওভুক্ত শিক্ষক পর্যন্ত ৬ষ্ঠ গ্রেডে পৌঁছে গেছেন; অথচ আমরা এখনও পদোন্নতির অপেক্ষায়। এটা শুধু অবিচার নয়, রাষ্ট্রীয় বৈষম্যেরও দৃষ্টান্ত।”
বিমাতাসুলভ আচরণের অভিযোগ
প্রভাষক পরিষদ অভিযোগ করে বলেন, শিক্ষা প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তারা শিক্ষা ক্যাডারের সঙ্গে বরাবরের মতোই বিমাতাসুলভ আচরণ করছেন। ৬ষ্ঠ ও ৩৭তম ব্যাচের অন্যান্য ক্যাডারের কর্মকর্তারা ইতোমধ্যেই পদোন্নতি পেয়েছেন, কিন্তু শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তারা নিয়মিত পদোন্নতি থেকে বঞ্চিত।
তারা প্রশ্ন রাখেন, “নিয়মিত পদোন্নতি, পদ সৃষ্টি ও আপগ্রেডেশন নিশ্চিত করার দায়িত্ব কার? কেন সুপারনিউমারারি পদ তৈরি করে ভূতাপেক্ষ পদোন্নতি দেওয়া হয় না? শিক্ষা ক্যাডার কি রাষ্ট্রের অবহেলিত সন্তান?”
নানা সমস্যায় জর্জরিত বৃহত্তম ক্যাডার
সংগঠনের নেতারা আরও বলেন, শুধু পদোন্নতি নয়—রাজনৈতিক বিবেচনায় কলেজ জাতীয়করণ, ক্যাডারে অধিভুক্তকরণে বৈষম্য, অধিদপ্তর বিভাজন, পদ ও পরিধি সংকোচন, আপগ্রেডেশনের স্থবিরতা এবং সাত কলেজ ইস্যুসহ নানা সংকটে শিক্ষা ক্যাডার জর্জরিত।
তাদের দাবি, “কনিষ্ঠ সদস্যরাই এখন সবচেয়ে নাজুক অবস্থায়। সরাসরি নিয়োগপ্রাপ্ত মেধাবী কর্মকর্তারা ৫ বছরের পদোন্নতির জন্য অপেক্ষা করতে করতে ১২ বছর পার করছেন—এটি শিক্ষাব্যবস্থার জন্য অপমানজনক।”
দাবি বাস্তবায়নের সময়সীমা ঘোষণা
বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডার প্রভাষক পরিষদ তাদের চার দফা দাবি উপস্থাপন করেন—
১. অবিলম্বে পদোন্নতির DPC সভা সম্পন্ন করতে হবে।
২. ১২ নভেম্বরের মধ্যে ৩৭তম ব্যাচ পর্যন্ত প্রভাষকদের ভূতাপেক্ষ পদোন্নতির G.O জারি করতে হবে।
৩. ৫৭তম ব্যাচ পর্যন্ত যোগ্য সকলের জন্য সুপারনিউমারারি পদ সৃষ্টি করতে হবে।
৪. পদোন্নতি সমস্যার স্থায়ী সমাধানের জন্য পদ-আপগ্রেডেশন বাস্তবায়ন করতে হবে।
তারা সতর্ক করে বলেন, “যদি ১২ নভেম্বরের মধ্যে দাবি পূরণ না হয়, তবে ১৬ নভেম্বর থেকে ‘No Promotion, No Work’ কর্মসূচি ঘোষণা করে লাগাতার অবস্থান ধর্মঘট পালন করা হবে।”
শেষ কথা
বক্তারা বলেন, “আমরা রাষ্ট্রপতির আদেশে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তা; কিন্তু পদোন্নতি না হওয়ায় আমাদের মর্যাদা ও সম্মান ক্ষুণ্ন হচ্ছে। আমরা আশা করি, সরকার শিক্ষা ক্যাডারের প্রতি ন্যায্য আচরণ করবে এবং বৈষম্যের চক্র ভেঙে শিক্ষাক্ষেত্রে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করবে।”
