বগুড়া সাইবার পুলিশের অভিযানে হবিগঞ্জ ও লক্ষীপুর থেকে ক্রিপ্টোকারেন্সী চক্রের ৩ সদস্য গ্রেফতার
বগুড়া সাইবার পুলিশের অভিযানে বাংলাদেশে অবৈধ ক্রিপ্টোকারেন্সী বা বিটকয়েন চক্রের ৩ সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ২৩ ও ২৪ এপ্রিল টানা ২ দিনের অভিযানে হবিগঞ্জ ও লক্ষীপুর জেলা থেকে এই চক্রের মূল হোতাসহ তাদের গ্রেফতার করে সাইবার পুলিশ বগুড়ার একটি বিশেষ টিম। এ সময় তাদের কাছ থেকে অবৈধ এই কাজে ব্যবহৃত ২টি ল্যাপটপ, ১৬টি মোবাইল, ২০টি মোবাইলের সিমকার্ড ও এই ব্যবসার কাজে ব্যবহৃত দুটি ওয়েবসাইট উদ্ধার করা হয়েছে। বগুড়া জেলা পুলিশ সুপার আলী আশরাফ ভূঞা বিপিএম (বার) এর দিকনির্দেশনায় এবং সাইবার পুলিশ বগুড়ার ইন্সপেক্টর এমরান মাহমুদ তুহিনের নেতৃত্বে গ্রেফতার হওয়া এই চক্রের মূল হোতা হলো হবিগঞ্জের মাধবপুর থানার আন্দিউড়া গ্রামের মৃত শাহ মো: হিরণের ছেলে আহসান হাবিব ওরফে শাহ মো. তানিম (২২)। সেই সাথে গ্রেফতার হওয়া এই চক্রের বাকি ২ সদস্য হলেন হবিগঞ্জের একই গ্রামের বাদশা মিয়ার ছেলে সোহেল মিয়া ওরফে কাজী সোহেল (২৭) এবং লক্ষ্মীপুর জেলার রায়পুর থানার বামনী গ্রামের বেলাল হোসেনের ছেলে মারুফ হোসাইন ওরফে মারুফ বিল্লাহ (২৫)। আসামীদের তাদের নিজ নিজ এলাকা মাধবপুর ও রায়পুর থানা এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। শুক্রবার সকালে এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে তার কার্যালয়ে বগুড়া জেলা পুলিশ সুপার আলী আশরাফ ভূঞা বিপিএম (বার) জানান, অনলাইনে যেসব ডিজিটাল মুদ্রা পাওয়া যায় সেগুলোকে ক্রিপ্টোকারেন্সি বলে। এই ক্রিপ্টোকারেন্সি বা অনলাইনে বিটকয়েন ট্রানজেকশনের সময় আদান-প্রদানকারীদের তথ্য গোপন থাকে এবং বেশিরভাগ সময়েই থাকে অজ্ঞাত। এ ধরনের মুদ্রার বিনিময়ে ব্যবহার করা হয় ক্রিপ্টোগ্রাফি নামের একটি পদ্ধতি। এই পদ্ধতিতে প্রচলিত ভাষা বা সংকেতে লেখা তথ্য এমন একটি কোডে লেখা হয়, যা ভেঙে তথ্যের নাগাল পাওয়া প্রায় অসম্ভব। ফলে বাংলাদেশে এ সকল ক্রিপ্টোকারেন্সি জুয়া খেলা বা কালো টাকাকে সরকারের চোখ থেকে লুকানোর জন্য ব্যবহৃত হয় যার ব্যবহার দিন দিন বেড়েই চলেছে। জেলা পুলিশ সুপার আরও বলেন, প্রাথমিক তদন্তে পাওয়া গ্রেফতারকৃত এই চক্র ২০১৭ সালের ২০ ডিসেম্বর এবং ২০১৮ সালের ১৪ জানুয়ারীতে খোলা ২ টি অবৈধ ওয়েবসাইট ইজিপেইডবিডি.কম এবং বিডিডলারক্যাশ.কম এর মাধ্যমে অবৈধ ই-ট্রাঞ্জেকশন করে আসছিল যা ব্যপক বৃদ্ধি পায় গত ৫-৬ মাসে। গ্রেফতারকৃত এই চক্রের ব্যবহৃত ওয়েবসাইট বর্তমানে ব্যবহারকারীর সংখ্যা প্রায় ৭ হাজার ৩৬২জন এবং এখন পর্যন্ত প্রায় ২৭ হাজার ৮শ’রও অধিক এক্সচেঞ্জ সম্পন্ন হয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে তিনি আরও জানান, গ্রেফতারকৃতদের কাছ থেকে বিকাশ, রকেট এবং কিছু মোবাইল ব্যাংকিংয়ের একাউন্ট পাওয়া গেছে। যার মধ্যে শুধুমাত্র বিকাশেই প্রায় ৫ লক্ষ ২৬ হাজার টাকা পাওয়া গেছে। গ্রাহকদের সাথে এসব মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে লেনদেন করত এবং অবৈধ ক্রিপ্টোকারেন্সির লেনদেনের টাকা তারা এসকল একাউন্টেই জমা রাখত। অনেক সময় গ্রাহকের টাকা নিয়ে কারেন্সি না দিয়ে মোটা অংকের অর্থ আত্মসাতের ঘটনা ঘটিয়েছে বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আসামীরা জানিয়েছে বলে জানান তিনি। উল্লেখ্য, ক্রিপ্টোকারেন্সির মাধ্যমে যেসব কারেন্সি এক্সচেঞ্জ করা হয়ে থাকে তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে বিটকয়েন, বিটকয়েন ক্যাশ, স্ক্রিল, লাইটকয়েন, ওয়েবমানি, ইথেরিয়াম, পারফেক্ট মানি ইত্যাদি। বাংলাদেশে অবৈধ এসব ক্রিপ্টোকারেন্সির মধ্যে সবচেয়ে বেশি মূল্যবান বিটকয়েন। বর্তমান বাজারে আনুমানিক একটি বিটকয়েনের মূল্য প্রায় ৮ হাজার ডলার বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়। অনেকেই তাই বেশি লাভের আশায় বিটকয়েন কিনে রেখে দাম বাড়লে বিক্রির আশায় এই ব্যবসায় ঝুঁকছে। সেই সাথে বিপিএল এবং আইপিএল এর সময় ৩৬৫ বেট নামক আন্তর্জাতিক অনলাইনে জুয়ার আসরে অংশ নিতেও বাংলাদেশ থেকে এসব ক্রিপ্টোকারেন্সি কেনাবেচার প্রবণতা বেড়েছে। যা দুই একটি দেশে বৈধ হলেও বাংলাদেশে সম্পূর্ণ অবৈধ। ভবিষ্যতেও সাইবার পুলিশ বগুড়ার এই অভিযান চলমান থাকবে এবং এসব চক্রের সাথে জড়িতদের তিনি সময় থাকতে সুপথে ফিরে আসার আহবান জানান না হলে পরিস্থিতি ভয়াবহ হবে বলে হুশিয়ারি দেন তিনি। গ্রেফতারকৃত ৩ জন আসামীর বিরুদ্ধে ইতিমধ্যে বগুড়া সদর থানায় ২০১৮ সালের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ৩০ এর ১(খ) ধারায় মামলা ঋজু হয়েছে। পুলিশ সুপার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যদের মাঝে উপস্থিত ছিলেন জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) সনাতন চক্রবর্তী, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তাপস কুমার পাল, বগুড়া সদর থানার অফিসার ইনচার্জ এস.এম বদিউজ্জামান, জেলা গোয়েন্দা শাখার ইন্সপেক্টর আসলাম আলী, ডিএসবির ইন্সপেক্টর আশিক সহ জেলা পুলিশের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাবৃন্দ।