জয়পুরহাটে দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে শিকলবন্দি রানুর জীবন
জয়পুরহাট সদর উপজেলার দোঁগাছী ইউনিয়নের জিতারপুর গ্রামের রানু খাতুন (২০)। চিকিৎসার অভাবে দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে শিকলবন্দি অবস্থায় রয়েছেন তিনি। সরেজমিনে জিতারপুর গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, বাড়ির পাশে একটি গাছের সঙ্গে দুইটা তালা দিয়ে পায়ে শিকল বাঁধা অবস্থায় দাঁড়িয়ে রয়েছেন রানু। প্রথম দেখাতে কেউ বুঝতেই পারবে না যে তাকে কেউ বেঁধে রেখেছে।
রানুর মা মঞ্জুয়ারা বেগম জানান, ছোটবেলা থেকেই রানু কথা বলতে পারে না। এরপর তার বয়স যখন ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে, ঠিক তখনই তার আচরণ অন্যদের তুলনায় ভিন্ন দেখা দেয়। কাউকে সহ্য করতে পারে না। এ অবস্থায় তাকে বিভিন্ন কবিরাজ ও ডাক্তার দেখানো হলেও কোনো লাভ হয়নি। তবে সংসারে অভাবের কারণে বড় ধরনের কোনো মানসিক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসককে দেখানো সম্ভব হয়নি। আর সে কারণে রানুকে দিনের বেলা বাড়ির পাশের একটি গাছের সঙ্গে শিকলে বন্দি করে রাখা হয়। রাতে ঘরের বারান্দায় খুঁটির সঙ্গে বেঁধে শুয়ে রাখা হয়। প্রতিদিন এ অমানবিক দৃশ্য মা হিসেবে দেখতে খুব কষ্ট হয়, কিন্তু কোনো উপায় নেই।
রানুর বাবা আব্দুর রহিম বলেন, দরিদ্র পরিবারে এক ছেলে ও দুই মেয়েকে নিয়ে আমার সংসার। এক সময় স্থানীয় ইটভাটায় দিন মজুরির কাজ করে সংসার চালালেও বর্তমানে একচোখ অন্ধ হয়ে যাওয়ায় আমি বেকার হয়ে পড়েছি। এ অবস্থায় দু’মুঠো ভাত যোগান দিতেই যেখানে হিমশিম খায় সেখানে মেয়েকে চিকিৎসা করাবো কিভাবে। রানুর ছোট বোন স্থানীয় মঙ্গলবাড়ি ডিগ্রি কলেজের এইচএসসি পরীক্ষার্থী পিংকি বলেন, বোনের এ করুণ অবস্থা দেখে নিজের খুব খারাপ লাগে। কিন্তু উপায় নেই। তাকে যদি ছেড়ে দেওয়া হয়, তাহলে সে সবাইকে মারধর করে কিংবা বাড়ি ছেড়ে চলে যায়। অভাবের এ সংসারে বড় ভাই রহমানও স্ত্রী-সন্তান নিয়ে ঢাকায় থাকার সুবাধে কোনো সাহায্য করতে পারেন না। আত্মীয় স্বজন ও প্রতিবন্ধি ভাতার কার্ড থেকে মাসে যেটুকু সাহায্য সহযোগিতা পাই, তা দিয়েই কোনোমতে সংসার চলে। তবে সমাজের কোনো বিত্তবান যদি চিকিৎসা ব্যয় করতে এগিয়ে আসেন, তাহলে হয়তো বোনটিকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে।
এ ব্যাপারে দোঁগাছী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান জহুরুল ইসলাম জানান, বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে খুব শিগগিরই পরিবারটির বিষয়ে ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে সাহায্য সহযোগিতা করা হবে। জেলা সমাজসেবা অধিদফতরের উপ-পরিচালক সেলিম শাহ বলেন, মেয়েটির ব্যাপারে খোঁজ নিয়ে সরকারিভাবে সাহায্য সহযোগিতা করা হবে।জয়পুরহাট সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মিল্টন চন্দ্র রায় বলেন, আধুনিকতার এই যুগে এসেও একটি মেয়েকে শিকলে বেঁধে রাখা হয়েছে, তা বড়ই বিস্ময়কর। আমরা যত দ্রুত সম্ভব মেয়েটিকে উদ্ধার করে সরকারি খরচে চিকিৎসা দেওয়ার ব্যবস্থা করবো।