সোনাতলা সরকারী নাজির আখতার কলেজ সমস্যার ভারে ভারাক্রান্ত
বগুড়া জেলায় সরকারী কলেজের অবস্থানের দিক থেকে সোনাতলা সরকারী নাজির আখতার কলেজটি চতুর্থ। ওই কলেজটি জাতীয়করণে ৩৪ বছর পরও শিক্ষকের শূন্যতা কাটেনি। এমনকি বর্তমানে কলেজটিতে দুইটি বিভাগে (ইংরেজী ও তথ্য প্রযুক্তি) বিষয়ে কোন শিক্ষক নেই। এছাড়াও খন্ডকালীন শিক্ষক দিয়ে চলছে অনার্স ক্লাসের পাঠদান। অপরদিকে দীর্ঘদিনেও কলেজটিতে শিক্ষকের নতুন পদ সৃষ্টি ও বিষয় খোলার আবেদন ফাইল বন্দি রয়েছে।
বগুড়া জেলা সদর থেকে প্রায় ৩১ কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত সোনাতলা উপজেলা। ১৯৬৭ সালে এলাকার গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গ ও শিক্ষানুরাগী ব্যক্তিবর্গের যৌথ প্রচেষ্টায় প্রতিষ্ঠিত হয় সোনাতলা নাজির আখতার কলেজ। প্রতিষ্ঠার মাত্র ১৭ বছরের মাথায় তৎকালীন এরশাদ সরকারের শাসনামলে ১৯৮৪ সালে কলেজটি জাতীয়করণের মর্যাদা পায়। প্রতিষ্ঠা লগ্ন থেকে জাতীয়করণের পূর্ব পর্যন্ত কলেজটিতে ছাত্রছাত্রীতে জমজমাট ও পাবলিক পরীক্ষায় ইর্ষান্বিত ফলাফল করলেও জাতীয়করণের পর থেকে কলেজটিতে ফলাফলের ধসের পাশাপাশি ছাত্রছাত্রী কমতে শুরু করে। কাগজে কলমে কলেজটিতে উচ্চ মাধ্যমিক, ডিগ্রী পাস ও ৬ বিষয়ে অনার্স পর্যায়ে ৩ হাজার শিক্ষার্থী অধ্যয়ন করার কথা দাবি করলেও প্রতিনিয়ত ৩ থেকে ৪শ’ এর অধিক শিক্ষার্থী কলেজ উপস্থিত থাকে না। এমনকি প্রতিদিন দেড়টার পর ওই কলেজের কোন শিক্ষক কলেজে অবস্থান করেন না বলে স্থানীয় লোকজন অভিযোগ করেন। স্থানীয়রা জানান, কলেজ ছুটির পূর্বে আন্তঃনগর ট্রেন (লালমনি এক্সপ্রেস) যোগে জেলা সদরের যাওয়ার জন্য শিক্ষক শিক্ষিকাগণ দ্রুত কলেজ ত্যাগ করে।
কলেজটিতে ৩৩ জন শিক্ষকের পদ থাকলেও বর্তমানে ২৫টি পদে শিক্ষক শিক্ষিকা কর্মরত থাকলেও ৮টি পদ শূন্য রয়েছে। এর মধ্যে ইংরেজী ও তথ্য প্রযুক্তি বিষয়ে কোন শিক্ষক নেই। কলেজটিতে ৬টি বিষয়ে অনার্স কোর্স চালু থাকলেও নেই বেতনভুক্ত কোন শিক্ষক শিক্ষিকা। খন্ডকালীন শিক্ষক দিয়ে চলছে অনার্স কোর্সের পাঠদান।
কলেজ কর্তৃপক্ষ কলেজে শিক্ষকের নতুন পদ সৃষ্টি ও বিষয় খোলার আবেদন গত বছরের ১২ ফেব্রুয়ারী শিক্ষা সচিব বরাবর দাখিল কররেও আজও ওই কলেজে শিক্ষকের নতুন পদ সৃষ্টি ও বিষয় খোলার অনুমতি পায়নি। অপরদিকে ওই কলেজে আরও ৩টি বিষয়ে অনার্স কোর্স চালু ও ৬ বিষয়ে মাষ্টার্স কোর্স খোলার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলেও সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
কলেজটিতে শিক্ষক স্বল্পতার পাশাপাশি প্রতিষ্ঠাকালীন সময়ের প্রতিষ্ঠিত প্রায় ২শ ফিট দীর্ঘ দক্ষিন মুখী দ্বিতল একটি ভবন পাঠদানের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। যেকোন সময় ভবনটি ধ্বসে পড়ে ছাত্রছাত্রীর প্রানহানী ঘটার আশংকা রয়েছে।
অত্র কলেজের দ্বাদশ শ্রেণীর শিক্ষার্থী মিনারুল ইসলাম, সানোয়ার ইসলাম, নাজমিন খাতুন, বেবী আকতার জানান, অত্র কলেজে ইংরেজী ও তথ্য প্রযুক্তি বিষয়ে কোন শিক্ষক না থাকায় খন্ডকালীন শিক্ষক দিয়ে ক্লাস তেমনটি ভাল হয় না। অপরদিকে অনার্স ক্লাসের কয়েক জন শিক্ষার্থী জানান, খন্ডকালীন শিক্ষকদের দায় দায়িত্ব তেমনটি না থাকায় কোন রকম খুড়িয়ে খুড়িয়ে চলছে অনার্স ক্লাসের পাঠদান।
অত্র কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মোঃ মাহবুবুল ইসলাম জানান, বর্তমানে কলেজটিতে শিক্ষার মান বেড়েছে। ফলে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় গত ২০১৬ সালে বিজ্ঞান বিভাগে ৪৮.৫৩%, মানবিক বিভাগে ৬২.১০%, ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে ৩৮.২৪%। ২০১৭ সালে বিজ্ঞান বিভাগে ৭৮.৫৭%, মানবিক বিভাগে ৫৭.৫১%, ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে ৭৫.৫৬% এবং ২০১৮ সালে বিজ্ঞান বিভাগে ৪২.৭৪%, মানবিক বিভাগে ৬৩.৭১% ও ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে ৫০.৬৫% শিক্ষার্থী উত্তীর্ণ হয়েছে। কলেজটিতে লেখাপড়ার মান বৃদ্ধির দাবি করলেও সরকারী সুযোগ সুবিধার দিক থেকে পিছিয়ে রয়েছে। নেই পর্যাপ্ত শ্রেণীকক্ষ। একটি বিশাল খেলার মাঠ থাকলেও মাঠটি স্থানীয়দের পদচারনায় এবং গো চারন ভুমিতে পরিনত হয়েছে।
উল্লেখ্য, কলেজটিতে ১১ জন অধ্যাপক ও ১১ জন সহযোগী অধ্যাপকের পদ থাকলেও বর্তমানে সবগুলি পদ শূন্য রয়েছে। কলেজটিতে অধ্যাপক ও সহযোগী অধ্যাপক পদে কোন শিক্ষক শিক্ষিকা নেই।