প্রকাশিত : ২৮ জুলাই, ২০১৯ ১৮:৫৩

বগুড়ায় পানি কমছে আর দুর্ভোগের চিত্র ফুটে উঠছে

ষ্টাফ রিপোর্টার
বগুড়ায় পানি কমছে আর দুর্ভোগের চিত্র ফুটে উঠছে
ছবি: প্রতীকী

পানি কমছে আর দুর্ভোগের চিত্র ফুটে উঠছে। বানভাসিদের নানা সংকট সৃষ্টি হচ্ছে। রোগ বালাই বাড়ছে। বগুড়ার দুটি নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে সৃষ্ট বন্যা পরিস্থিতির কোন উন্নয়ন হয়নি। এরই মধ্যে আরো আরো একটি উপজেলায় বন্যা দেখা দিয়েছে। জেলার শাজাহানপুর উপজেলার ৫টি ইউনিয়নের নতুন করে বন্যার পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে ৩৯৬ হেক্টর জমির ফসল। আর সরকারিভাবে পানিবন্দি হয়ে আছে ২৩ গ্রামের মানুষ। রোববার দুপুরে বগুড়া পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, জেলার যমুনা নদীর পানি বিপদসীমার ২ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে এবং বাঙালি নদীর পানি কমলেও রয়েছে বিপদসীমার ৮১ সেন্টিমিটার উপরে।

জেলায় নতুন করে বন্যা দেখা দেয়ায় শাজাহানপুর উপজেলায় আমরুল ইউনিয়নের বড় নগর, রাধানগর, গোবিন্দপুর, লক্ষিপুর, শৈলধুকরী, পলিপলাশ, ক্ষূদ্র ফুলকোট, ফুলকোট সহ আশপাশের মোট ৯টি গ্রারে ৫ শতাধিক পরিবার এবং চোপিনগর ইউনিয়নের বিল কেশপাথার, কচুয়াদহ, তাইরপাড়া সহ আশপাশের গ্রামে ব্যপক বন্যায় কয়েক হাজার মানুষ পানি বন্দী হয়ে পড়েছে। রাস্তা, স্কুল এবং বাড়ি ঘর তলিয়ে গেছে।

বাঙালী নদী হয়ে বন্যার পানি ঢুকছে এই এলাকায়। উপজেলায় বেশ কয়েকটি স্থানে অপরিকল্পিত বাঁধ থাকলেও করতোয়া নদীতে পানি বৃদ্ধি পেয়ে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। উপজেলার মাঝিড়া, বি-ব্লক এবং ডেমাজানি এলাকায় বন্যা হয়ে সবজি আবাদের ব্যপক ক্ষতি হয়েছে। লক্ষিপুর, ক্ষূদ্র ফুলকোট এবং গোবিন্দপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় পানিতে তলিয়েছে।গোবিন্দপুর মাদ্রাসার ভেতরেও পানি ঢোকা অবস্থা। বিল কেশপাথার সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে মাঠে পানি এসেছে এবং যে কোন সময় স্কুলে প্রবেশ করবে।

শাজাহানপুর উপজেলার গোবিন্দপুর গ্রামের খোরশেদ আলমের স্ত্রী তাহেরা বেগম (৪৫) সহ অনেকে জানান, বন্যা খুব দ্রুত তাদের বাড়িতে এসেছে। ঈদে বিক্রির জন্য গরু পালন করেছিল। ঘরের ভেতরে সহ সবদিকে পানি থৈ থৈ করছে। গরুর খাবার সংকট সৃষ্টি হয়েছে।

বগুড়া জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তার কার্যালয় সুত্রে জানা যায়, জেলার সারিয়াকান্দি, সোনাতলা, ধুনট, ও গাবতলী উপজেলার পর পর এবার নিমজ্জিত হলো শাজাহানপুর উপজেলা। বঙালি নদীতে পানি বৃদ্ধি পেয়ে এই উপজেলার ৫টি ইউনিয়নের ২৩টি গ্রামে পানি প্রবেশ করেছে। পানি প্রবেশ করে বাড়িঘর, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, রাস্তাঘাটে বন্যার পানি প্রবেশ করেছে।

বগুড়া শাজাহানপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো: নুর আলম জানান, উপজেলার ৫টি উইনিয়নে বন্যা দেখা দিয়েছে। চুুপিনগর, আমরুল, খোট্টাপাড়া, মাদলা ও আড়িয়া ইউনিয়নে বেশ কিছু গ্রামে পানি প্রবেশ করেছে। গত বৃহস্পতিবার থেকে এই এলাকায় বন্যা দেখা পাওয়া গেছে। এই উপজেলায় আউশ ধান, ১৮, পাট ৩৪, শাক ২১০, আমন বীজতলা ১২১, হলুদ, কলা ও পেঁপে মিলে মোট ৩৯৬ হেক্টর জমির ফসল পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে।

বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা শামসুন নাহার শিউলি জানান, ২৩টি গ্রামে বন্যার পানি উঠেছে। এপর্যন্ত ২২ হাজার ৫০০ জন পানি বন্দি হয়েছে। বানভাসিদের জন্য ক্রাণ সামগ্রী চেয়ে পাঠানো হয়েছে।

বগুড়া জেলা প্রশান সুত্রে জানা যায়, জেলার ৫টি উপজেলার প্রায় পৌনে ৩ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। রবিবার বিকাল পর্যন্ত সরকারিভাবে বলা হচ্ছে ২৫৪টি গ্রাম পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের সংখ্যা ৬৭ হাজার ৫০৭ জন। ২০টি কমিউনিটি ক্লিনিক, ৪০টি মাধ্যমিক স্কুল, ১৫৬টি প্রাথমিক স্কুল নিমজ্জিত হয়েছে। শনিবারের পর রোববারও দুই নদীতে পানি কমেছে।

বগুড়া জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আজাহার আলী মন্ডল জানান, প্রথম দিকে ৩টি উপজেলায় বন্যা দেখা দিলেও এখন ৫টি উপজেলায় বন্যা সৃষ্টি হয়েছে। নতুন করে নিমজ্জিত হয়েছে জেলার শাজাহানপুর উপজেলা কয়েকটি এলাকা। ২ লাখ ৬৭ হাজার ৪৪৪ জন মানুষ ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।

দ্রুত গবাদিপশু ও শিশু খাদ্য বিতরণ বরা হবে। বন্যা জনিত কারনে এ পর্যন্ত জেলার তিন উপজেলায় গত কয়েকদিনে ৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে সারিয়াকান্দি উপজেলায় সাপে কেটে ১ জন, সোনাতলা উপজেলায় ২ জন এবং গাবতলী উপজেলায় পানিতে ডুবে ১জনের মৃত্যু হয়েছে। বগুড়ার বন্যা কবলিত সারিয়াকান্দি, সোনাতলা, ধুনট ও নতুন করে গাবতলী উপজেলার বিস্তর্ণ এলাকার গোচারণ ভুমি পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় দেখা দিয়েছে গো-খাদ্য সংকট।

উপরে