প্রকাশিত : ৩০ জুলাই, ২০১৯ ১৭:৪৬

নন্দীগ্রামে টুং-টাং শব্দে মূখর কামার পল্লীগুলো

নন্দীগ্রাম (বগুড়া) থেকে মো: ফজলুর রহমানঃ
নন্দীগ্রামে টুং-টাং শব্দে মূখর কামার পল্লীগুলো

আসন্ন পবিত্র ঈদ-উল আযহাকে সামনে রেখে ব্যস্ত সময় পার করছে বগুড়ার নন্দীগ্রাম উপজেলার কামার শিল্পীরা । ভোর হতে শুরু করে গভীর রাত পর্যন্ত পৌর এলাকায় কামার পল্লীগুলোতে ব্যস্ততার চিত্র দেখা যায় । কোরবানির পশুর মাংস কাটাকাটি আর চামরা ছাড়ানোর জন্য অন্যতম অনুসংগ দা, ছুরি, চাপাতি, বটিসহ বিভিন্ন ধরনের পন্য তৈরীতে ব্যস্ত সময় পার করছে তারা ।

ঈদকে সামনে রেখে বিভিন্ন স্থান থেকে লোকজন এসে কামার শিল্পীদের কাছে গরু কাটার দা, চাপাতি, ছুরি সহ নানা জিনিস ক্রয় করছেন । আবার অনেকে ঘরে থাকা পুরোনো দা, ছুরি, চাপাতি ধার কাটাতে আসছেন । ঈদুল আযহার অন্যতম ওয়াজিব পশু জবাই করা । আর জবাই করার অন্যতম উপাদান এসব পন্য । সারা বছর তৈরীকৃত এসব পন্য যত বিক্রি হয় তার চেয়ে বেশি বিক্রি হয় ঈদুল আযহাকে উপলক্ষ করে ।

কারন হিসেবে, পশু জবাহ করার জন্য ধারালো অস্ত্রের প্রয়োজন । আর ঈদ চলে যাওয়ার পর এসব অস্ত্র সবাই রক্ষিত করে রাখেনা । আর যারাও রাখেন সেগুলোতে মরিচা পরে নষ্ট হয়ে থাকে । তাই প্রতি বছর নতুন নতুন অস্ত্রের প্রয়োজন পড়ে ।

আর সে কারনেই ঈদকে কেন্দ্র করে দা, ছুরি, চাপাতি বটি সহ নানা পন্য তৈরীতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে কামার শিল্পীরা । নন্দীগ্রাম পৌর এলাকার বাজার সংলগ্ন নিখিল চন্দ্র কর্মকার জানান , বর্তমানে কোরবানির কাজে ব্যবহৃত ধারালো অস্ত্রের মধ্যে বটি প্রকার ভেদে ৪শ থেকে ৫শ টাকা, দা ২শ থেকে ৩শ টাকা, ৮ ইঞ্চি থেকে ১০ ইঞ্চি পর্যন্ত মজুরী দেড়শ থেকে ২শ টাকা , ১২ ইঞ্চি থেকে ১৫ ইঞ্চি ৪শ থেকে ৫শ টাকা এবং ছোট আকৃতির ছুরি ৫০ থেকে ২শ টাকা দামে বিক্রয় হচ্ছে । পুরাতন বাজারের কর্মকার রবি চন্দ্র জানায়, গত বছরের তুলনায় এবছর এসব জিনিসের বিক্রি কম হওয়ায় বিপাকে পড়েছি । তবে ঈদ যত ঘনিয়ে আসবে বিক্রি তত বেশি হবে বলে আসা করছি । বছরের অন্যান্য সময়ের চেয়ে কোরবানীর সময়টাতে আমাদের কাজের চাপ অনেক বেড়ে যায় । সেই সঙ্গে বেড়ে যায় তাদের আয় রোজগারও ।

অন্য ওমরপুর হাটের শাহীন কর্মকার জানান, কামার শিল্পের অতি প্রয়োজনীয় জ্বালানী হচ্ছে কয়লা , কিন্তু এই কয়লা এখন আর তেমন পাওয়া যায় না ,গ্রামে ঘুরে ঘুরে এই কয়লা সংগ্রহ করতে হয় । এই কয়লার অপ্রতুলতায় দাম অনেক বেড়ে গেছে বেড়েছে লোহার দামও । লোহা ও কয়লার দাম বাড়লেও সে অনুসারে কামার শিল্পের উৎপাদিত পন্যর দাম বাড়েনি ।

ইসব পুরের স্বদেব কর্মকার জানান ,ঈদ উপলক্ষে এক মাস কাজের চাপ থাকলেও পরবর্তী ১১ মাস তেমন কোন কাজ হয়না । এর কারনে অনেকে বাধ্য হয়ে পৈত্রিক এ পেশা বাদ দিয়ে অন্য পেশায় চলে যাচ্ছে । এছাড়া অন্য সময়ে দিনে ২শ থেকে ৩শ টাকা রোজগার করেও সংসার চালানো কষ্ট সাধ্য হয় । সরকার মৎস্য আহোরনকারী জেলেদের সাহায্য প্রদান করলেও আমাদের এরকম কোন ব্যবস্থা নেই । তাই আমরা শিল্পীদের সরকারি সাহায্য বা অনুদানের দাবি জানাচ্ছি ।

 

উপরে