প্রকাশিত : ২ আগস্ট, ২০১৯ ০২:০৭

ধুনটে হাট-বাজার খাশ আদায়ে অনিয়ম...

নেপথ্যে স্থানীয় আ: লীগ ! প্রশাসন নিরব ?
নাজমুস সাকিব আপেল (ষ্টাফ রিপোর্টার) :
ধুনটে হাট-বাজার খাশ আদায়ে অনিয়ম...

হাট-বাজার ইজারা নীতিমালা অনুযায়ী বারংবার বহুল প্রচার ও ঢোল শহরৎ এর পরেও হাট-বাজার ইজারা বন্দোবস্ত না হইলে উপজেলা হাট বাজার ইজারা মূল্যায়ন কমিটির মনোনীত সরকারী কর্মচারী অথবা স্থানীয় ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা দ্বায়িত্বপ্রাপ্ত হইয়া খাজনা আদায় করিবে অথবা হাট-বাজার ইজারা মূল্যায়ন কমিটি ঢোল সহরৎ করিয়া বহুল প্রাচারের মাধ্যমে খোলা ডাকের ব্যাবস্থা করিয়া সর্বোচ্চ দরদতাকে এক বা একাধিক সপ্তাহের জন্য হাট-বাজার ইজারা প্রদানের কথা নিতিমালাতে বলা হলেও.... নিয়মবহির্ভূত ভাবে কাগজে কলমে খাস আদায় দেখিয়ে মাসের পর মাস নাম মাত্র দামে বগুড়া'র ধুনট উপজেলার গোসাইবাড়ী হাটটি দেওয়া হয়েছে ইউনিয়ন আওয়ামিলীগ নেতা লিয়াকত আলী লিটন কে। 

অনুসন্ধানে হাট-বাজার ঘুরে জানা যায়,বাংলা ১৪২৬ সালের পহেলা বৈশাখ থেকে নিয়মিত লিয়াকত আলী লিটন টোল আদায় করেছে । গরু ও ছাগল মহাল নিজ লোকবল দিয়ে খাজনা আদায় করালেও  প্রতিদিনের সকাল-বিকাল বাজার ও অন্যান্য মহাল সমূহ সাব-ইজারা প্রদান করে অগ্রীম টাকা গ্রহন করেছে লিটন। বাজারের বেশ কয়েকজন ব্যাবসায়ী জানান, গোসাইবাড়ী হাট ও বাজারের চলতি বছরের ইজারা মূল্য বাইশ লক্ষ টাকায় ইজারা না হওয়ায় হাটের খাজনা সরকার নিজে আদায় (খাস কালেকশান) করার কথা থাকলেও মূলত ৩/৪ মাস যাবৎ হাট বাজারের খাজনা আদায় করছে লিটন। ইউনিয়ন ভূমি অফিস অথবা ইউ এন ও অফিসে হাট- বাজারের ওপেন ডাক হলে আমরা দুই চার জন ব্যাবসায়ী হাট ডাকে অংশ নিতে পারতাম ! তা কই। কখন কোন দিকে হাটের ডাক হয় কেউ কিছুই বলতে পারে না। 

এ বিষয়ে গোসাইবাড়ী ইউনিয়ন ভূমি অফিসের উপ-সহকারী ভূমি কর্মকর্তার ও গোসাইবাড়ী হাট ইজারা কমিটির সদস্য মোঃ কামাল হায়দার এর বক্তব্য জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, ইউএনও স্যার হাট-বাজার ইজারা কমিটির সভাপতি,গতকাল রাজস্ব মিটিং এ স্যার আমার দৃষ্টি আকর্ষন করে বলেন হাট-বাজারে বিষয়ে রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা থাকে,এখানে মাত্ববরি না করার ইঙ্গিত দিয়েছেন আমাকে (কামাল)। অপর প্রশ্নের জবাবে কামাল হায়দার বলেনঃ  তিন মাস যাবৎ লিটন খাস আদায় করে জমা দিচ্ছেন,কতো টাকা জমা দিয়েছেন সেটা সি/এ চন্দন বলতে পারবেন।

নির্ভরযোগ্য একাধিক সূত্রমতে গোসাইবাড়ী হাট-বাজার থেকে সপ্তাহে ০৬ দিন সকাল-বিকাল বাজার বাবদ ০৩ লক্ষ টাকা, হাটের তোহা বাজার বাবদ ০২ লক্ষ টাকা, মাংশ মহাল-০২ লক্ষ ২০ হাজার টাকা,মাছ মহাল-০২ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা, কাচা সবজী মহাল- ০১ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা, এছারাও হাস-মুরগি,ফার্নিচার,কাপর, মন্ডা মিঠাই,ভ্যান-সাইকেল,শষ্য সহ বেশ কয়েকটি মহাল  সাব-ইজারার নামে মহাল অনুযায়ী দায়িত্বরত ব্যক্তির নিকট হতে প্রায় ১৫ থেকে ১৬ লক্ষ টাকা অগ্রিম আদায় করেছেন লিয়াকত আলী লিটন। গোসাইবাড়ী হাট-বাজার থেকে চলতি বছরের বিগত ১১০ দিনে সরকারের আয় কত হয়েছে ? এমন প্রশ্নের জবাবে ধুনট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জনাবা, রাজিয়া সুলতানা বলেন ১০ই শ্রাবন পর্যন্ত, অর্থাৎ একশত পাঁচ দিনে ৩৭৫০০০ (তিন লক্ষ পচাত্বর হাজার টাকা) খাস আদায় হয়েছে,খাস আদায়ের দায়িত্বে আছে লিয়াকত আলী লিটন। 

এদিকে লিটন সাহেবের মুঠোফোনে একাধিকবার কল ও খুদে বার্তা দিয়েও তার বক্তব্য পাওয়া যায়নী। জেলার ধুনট উপজেলার গোসাইবাড়ী হাট-বাজার খাস আদায় সংক্রান্ত অনিয়মের বিষয়ে স্থানীয় সরকার শাখা, বগুড়া'র উপ-পরিচালাক জনাবা,সুফিয়া নাজিম মহোদ্বয়ের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি ''চাদনী বাজার''কে বলেন আমি গত ১৫ দিন ছুটিতে ছিলাম আজকেই কাজে যোগ দিয়েছি এ বিষয়ে কোন অভিযোগ আছে কিনা আমার জানা নেই। তারপরেও বিষয় টি দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য ইউএনও ধুনট কে নিদের্শ দিবো। এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত গোসাইবাড়ী হাট-বাজারটি সাপ্তাহিক,পাক্ষিক বা মাসিক ইজারা প্রদানের লক্ষে কোন প্রকার নোটিশ বা প্রচারের খবর পাওয়া যায়নী বলে স্থানীয় ভাবে নিশ্চিত হওয়া গেছে।

প্রসঙ্গত বাংলা ১৪২৩ সালে গোসাইবাড়ী হাট-বাজারে শতাধিক অবৈধ দখলদারের নামে তৎকালীন সহকারি কমিশনার (ভূমি),ধুনট বাদী হয়ে রাজস্ব আদালতে উচ্ছেদ মামলা দায়ের করেন,যাহার মামলা নং-মিস উচ্ছেদ ০৭(১৩)১৬-১৭। সেই সকল অবৈধ দখলকারীর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন এই  লিয়াকত আলী লিটন,পরবর্তীতে তিনিই (লিটন) বাংলা ১৪২৪ সালে হাটটি ইজারা প্রাপ্ত হয়ে ক্ষতির অজুহাত দেখিয়ে  উল্লেখিত উচ্ছেদ মামলার প্রসঙ্গ ধরে মহামান্য হাইকোর্টে ক্ষতিপূরন চেয়ে রিট আবেদনের ভিত্তিতে বাংলা ১৪২৫ সালে এক বছর গোসাইবাড়ী হাট বাজার ভোগ দখল করেন, সেখানেও রাষ্ট্রপক্ষের ভূমিকা ছিলো নিরব !

উপরে