প্রকাশিত : ২ আগস্ট, ২০১৯ ০২:৫৯

বগুড়ার ৩৬ লাখ মানুষের জন্য ৩৭৬ বেসরকারি ক্লিনিকই ভরসা

এইচ আলিম
বগুড়ার ৩৬ লাখ মানুষের জন্য ৩৭৬ বেসরকারি ক্লিনিকই ভরসা

বগুড়ার প্রায় ৩৬ লাখ মানুষের জন্য ৩৭৬ টি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক হাসপাতলই ভরসা। বগুড়ার সরকারি হাসপাতালের পাশাপাশি বেসরকারি ক্লিনিকগুলোর স্বাস্থ্য সেবায় রাখছে ভূমিকা। জেলা উপজেলা মিলিয়ে সরকারি হাসপাতাল থাকলেও শয্যা সংকটে রোগীরা সুস্থ্য হতে ছুটছে বেসরকারি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে। নানা সংকটের মধ্যেও বগুড়াবাসির চিকিৎসা সেবায় রাখছে বেসরকারি ক্লিনিকগুলো বিশেষ অবদান। অনেকেই বলছেন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে সরকারি সহযোগিতার মাধ্যমে আরো এগিয়ে নেয়া হলে বগুড়ার চিকিৎসাসেবার ক্ষেত্রে আরো এগিয়ে যাবে ধাপ।

বগুড়া সিভিল সার্জন ডা. গওসুল আজিম চৌধুরী জানান, গত ২০১৮ সালের জুলাই মাস থেকে ২০১৯ সালের সেপ্টম্বরের মধ্যে জেলার সকল বেসরকারি ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক বা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে অনলাইনে আবেদন করে নতুন করে লাইসেন্স নিতে হবে। এমনই নির্র্দেশনা রয়েছে। গত প্রায় এক বছরে এ পর্যন্ত আবেদন করেছে ৩৭৬টি। এরমধ্যে বগুড়া সদরে ২১২টি, সোনাতলা উপজেলায় ১৪টি, শিবগঞ্জ উপজেলায় ২৫টি, শেরপুর উপজেলায় ৩৯টি, শাজাহানপুরে ১০টি, সারিয়াকান্দিতে ৪টা, নন্দীগ্রামে ৭টা, গাবতলী উপজেলায় ৫টি, দুপচাঁচিয়া উপজেলায় ৪১টি, ধুনট উপজেলায় ৯টি, আদমদিঘি উপজেলায় ১০টি। সময় রয়েছে প্রায় দুই মাস। আবেদনকৃতদের সরকারিভাবে বেসরকারি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক বা হাসপাতালের অনুমোদন দেয়া হবে। যদিও ২০১৮ সালে বগুড়া জেলায় ২০৮ বেসরকারি হাসপাতাল, প্যাথলজি সেন্টার, ক্লিনিক এর হিসাব পাওয়া যায়।

এদিকে বলা হচ্ছে, এই হিসাবের বাহিরেও বেশ কিছু ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার গড়ে উঠেছে। সময়ের চাহিদার সাথে বেড়েছে এসব বেসরকারি স্বাস্থ্য বিষয়ক বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। জেলা শহর ছাড়াও ১২ উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়েও এখন ছোট ছোট ক্লিনিক চালু করেছে স্থানীয়রা। যদিও অভিযোগ রয়েছে কিছু নাম সর্বস্ব বেসরকারি ক্লিনিকের কারণে নামী ক্লিনিক কর্তৃপক্ষকে পড়তে হয় নানা ঝামেলায়।

বগুড়া পৌরসভা সুত্রে জানা যায়, বগুড়া সদর উপজেলায় নাগরিক রয়েছে প্রায় ৬ লাখ। আর ভোটার রয়েছে ৩ লাখ ৮৭ হাজার ৪০০ জন। এই পরিমান ভোটার থাকলে জেলায় গড়ে প্রায় ৩৬ লাখ মানুষ বসবাস করে। এই পরিমান নাগরিকের জন্য জেলায় চিকিৎসা প্রদানের শয্যা কম রয়েছে। কম থাকার কারণে সরকারি হাসপাতালে সিট ক্যাপাসিটি না থাকায় অনেক নাগরকি অসুস্থ্য হলে বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে ছুটতে হচ্ছে।

এক হিসেবে দেখা যায়, বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে ৫০০ এবং মোহাম্মদ আলী হাসপাতালে ২৫০ সব মিলিয়ে প্রায় ৭৫০ শয্য রয়েছে জেলায়। এর সাথে ১১টি উপজেলায় রয়েছে ১১টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। ৩৬ লাখের বিপরীতে এই শয্য  সংখ্যা একেবারেই কম।

বগুড়া জেলা সিভিল সার্জন এর কার্যালয় সুত্রে জানা যায়, বেসরকারি ১০ শস্যার একটি ক্লিনিকে ৩ জন এমবিবিএস ডাক্তার, ৬ জন নার্স, বিশেষজ্ঞ সার্জরীর ডাক্তার, গাইনী ডাক্তার, মেডিসিন, এ্্যানসথিসিয়া ডাক্তার থাকার নিয়ম রয়েছে। শয্যা সংখ্যা যদি দ্বিগুণ হয়, সেক্ষেত্রে ডাক্তার, নার্স, বিশেষঞ্জ চিকিৎসক থাকতে হবে। এ ছাড়া প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের পরিবেশের ছাড়পত্র থাকতে হবে। সার্বক্ষনিক পরিচ্ছন্নকর্মী, নার্স, আয়া ওয়ার্ড বয় থাকতে হবে। এখন প্রশাসনের কড়াকড়ি নিয়মের জন্য বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোও সচতেন বাড়ছে। আগের থেকে অনেক ক্লিনিক এখন তাদের জনবল বাড়িয়েছে। আগের থেকে বেড়েছে সেবিকা ও চিকিৎসকের সংখ্যা। পরিস্কার পরিচ্ছিন্নতার বিষয়েও নিয়েছ বেশ কিছু পদক্ষেপ।

বগুড়া শহরের ঠনঠনিয়া ডক্টর কিøনিক ইউনিট ২ এ বক্ষের সমস্যায় ভুগতে থাকা রোগী নিয়ে আসা আরেফিন ফয়সাল নামের এক স্বজন জানান, সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা সেবাও বেড়েছে। কিন্তু সেখানে শয্যা কম। মেঝেতে থাকতে হবে। রোগীর কথা চিন্তা করে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে নিয়ে এসেছেন।প্রথমে ডাক্তার দেখাবেন তারপর ডাক্তার বললে তিনি ভর্তি করাবেন।

বগুড়া শহরের শামসুন নাহার ক্লিনিকে হৃদরোগের জন্য রোগী নিয়ে আসা রহমান মন্ডল জানান, তার ছেলে কলেজে পড়ে। কয়েকদিন ধরে তার শ^াস প্রশ^াসে সমস্যা হচ্ছে তাই ডাক্তারের কাছে নিয়ে আসছেন। তিনি জানান, ছেলে কলেজে পড়ে বলে সরকারি হাসপাতালে নিতে পারেন নি। কলেজ না থাকায় বেসরকারি ক্লিনিকে এসেছেন।

তাদেরমতো আরো সহস্র রোগী এসেছেন জেলার পপুলার ডায়াগনস্টিক স্টোরে, ল্যাবএইড, মালেকা ডায়াগনস্টিক স্টেন্টার, ইবনে সিনা, ইসলামী হাসপাতাল, সিটি ক্লিনিক, সাইক জেনারেল হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারসহ এমন অনেক নাম রয়েছে বগুড়ায়। এসব হাসপাতাল ও ক্লিনিকে প্রতিদিন হাজার মানুষ সেবা গ্রহণ করছে।

বগুড়ার ৫০০ শয্যা শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট বগুড়া মোহাম্মদ আলী হাসপাতাল, জেলার ১২টি উজেলা হেলথ কমপ্লেক্স মিলিয়েও শয্যা সংকট থাকছে। এই সংকট দূর করতে বেসরকারি ক্লিনিক ও হাসপাতালগুলো অবদান রাখছে। এই সব ক্লিনিকগুলো আরো সহযোগিতা করা হলে বগুড়ার রোগীরা আরো বেশি সেবা পাবে অনেকেই মতামত দিয়েছেন।

এদিকে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতাল ৫০০ শয্যার হলেও গড়ে রোগী থাকছে ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৪০০ করে। নতুন, পুরাতন ও বর্হিবিভাগ মিলিয়ে গড়ে প্রতিদিন রুগী আসছে প্রায় ৩ হাজার। রোগীর চাপে বেড সংকুলান না হওয়ার কারণে ওয়ার্ডার বাহিরে, মেঝে, করিডরে ভর্তি হয়ে রোগী থাকছে। জায়গা সংকুলান না হওয়ায় মেজেতে রেখে চিকিৎসা প্রদান করতে হচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে।

বগুড়াসহ আশেপাশের জেলাগুলোর মানুষকে আধুনিক চিকিৎসা সেবা দিতে বগুড়ায় প্রতিষ্ঠা করা হয় শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল। ৫শ’ শয্যার এই হাসপাতালটি আধুনিক চিকিৎসা কেন্দ্র হিসেবে যাত্রা শুরু করার পর রোগীদের চাপ বাড়তে থাকে। বগুড়া শহর থেকে ৫ কিলোমিটার দুরে ছিলিমপুর এলাকায় ৩৩ একর জমির উপর ২২৩ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয় এ হাসপাতালটি।

বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. মো. আরিফুর রহমান তালুকদার জানান, ৫শ’ শয্যা বিশিষ্ট শজিমেক হাসপাতাল হলেও এখানে প্রতিদিন প্রায় ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৪০০ রোগী  ভর্তি থাকে। কখনো কখনো এই সংখ্যা দেড় হাজার হয়। স্থান সংকুলান না হওয়ায় হাসপাতালের মেঝেতে রাখতে হচ্ছে। রোগীরা এই কারণে ভোগান্তির শিকার হয়। কিন্তু মেঝেতে থাকলেও চিকিৎসা সেবা দিতে হয়। যতটা পারছি আমরা সেবা দিচ্ছি। হাসপাতালে যে জনবল ও স্থাপনা আছে তাও ৫০০ বেডের জনবল।

বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতালের পরিচালক বি: জেনারেল মোহাম্মদ গোলাম রসুল জানান, আমাদের হাসপাতালের রোগীর চাপ আছে। বর্হিবিভাগ থেকে শুরু করে ওয়ার্ডে রোগী চাপ প্রচুর। আমাদের যে বরাদ্ধ ও জনবল আছে তা দিয়ে সেবা প্রদান করা হচ্ছে। হাসপাতালের সার্বিক উন্নয়নের জন্য প্রস্তাব প্রদান করা হয়েছে।

উপরে