প্রকাশিত : ৭ আগস্ট, ২০১৯ ০৮:২৬

বগুড়ায় বন্যায় ৫ হাজার পুকুরের অর্ধশত কোটি টাকার মাছ ভেসে গেছে

এইচ আলিম
বগুড়ায় বন্যায় ৫ হাজার পুকুরের 
অর্ধশত কোটি টাকার মাছ ভেসে গেছে
ছবি: প্রতীকী

বগুড়ায় চলতি বছর বন্যায় অর্ধশত কোটি টাকার মাছ ভেসে গেছে। বন্যার কারণে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে ৫ হাজার পুকুরের। পুকুরগুলোতে থাকা বিভিন্ন প্রজাতির কয়েক হাজার টন মাছ ভেসে গেছে। জেলার মৎস্য কর্মকর্তারা বলছেন, এ পর্যন্ত বন্যায় জেলার ৬টি উপজেলার প্রায় ৫৩ কোটি ৮৭ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।

বগুড়া জেলা মৎস্য অফিসের কর্মকর্তারা বলছেন, বগুড়া জেলায় ৫৯ হাজার ২৬৮টি পুকুর রয়েছে। মাছ চাষি রয়েছে প্রায় ২৬ হাজার ২০৭ জন। বিল রয়েছে ৯৯টি। গত জুলাই মাসের মাঝামঝি সময় থেকে শুরু হওয়া বন্যায় ৪ আগস্ট পর্যন্ত জেলায় মোট ৫ হাজার ১২১টি পুকুর ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্থ চাষির সংখ্যা ৪ হাজার ৩৮১ জন। ক্ষতিগ্রস্থ সকল পুকুরেই বাণিজ্যিকভাবে মাছ চাষ করা হতো। মৎস্য কর্মকর্তার্ াবলছেন, প্রায় অর্ধশত প্রজাতির বিভিন্ন মাছ চাষ হতো এসব পুকুরগুলোতে। এরমধ্যে কয়েকটি পুকুরে ডিম ফোটানো হতো। জেলায় যমুনা ও বাঙালি নদীতে পানি বৃদ্ধি পেয়ে সারিয়াকান্দি, সোনাতলা, ধুনট, গাবতলী, শাজাহানপুর ও শেরপুর উপজেলায় ব্যাপক বন্যা দেখা দেয়।

কৃষি ক্ষেত্রে ৬টি উপজেলা মিলিয়ে ২৫ হাজার ৩৪৯ হেক্টর ফসলের ক্ষতি হয়। আর মাছের ক্ষতি দাঁড়িয়েছে আর্থিকভাবে ৫৩ কোটি ৮৭ লাখ।
জানা যায়, বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলায় যমুনা নদীতে পানি বৃদ্ধির ফলে বাঙালি নদীতেও পানি বৃদ্ধি পায়। বাঙালি নদীতে পানি বৃদ্ধির সাথে সাথে জেলার বিস্তৃর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়। বাঙালি নদীর পানি অন্যান্য নদী দিয়ে নেমে যেতে না পেরে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করে বাড়িঘর, রাস্তাঘাট, ফসলের পাশাপাশি মাছের ক্ষতি করে। বাঙালি নদীর পানি নেমে যেতে না পাড়ার কারণে জেলা সদরের করতোয়া নদীতে পানি বৃদ্ধি পেয়ে নিচুঁ এলাকায় বন্যা দেখা দেয়। কোথাও নদীর পাড় পানিতে সমান হয়ে যায়। আবারো দ্বিতীয় দফায় বন্যার আশংকা করছেন আবহাওয়াবিদগণ। উজানে ভারি বর্ষণ এর পাশাপাশি পাহাড়ি ঢল দেখা দিলে এই বন্যার সম্ভাবনা রয়েছে। ভারি বর্ষণ না হলে বন্যার আশংকাও কমে যাবে। 
বগুড়ায় যমুনা ও বাঙালি নদীতে পানি বৃদ্ধি পেয়ে সৃষ্ট বন্যায় এ পর্যন্ত প্রায় ৪ হাজারের বেশি মাছ চাষি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্থ চাষিরা বলছেন, সরকারিভাবে কোন অনুদান বা সহযোগিতা পাওয়া গেলে নতুন করে মাছ চাষ করা যেত। কোন কোন উপজেলায় পুকুরের পাড় ভেঙ্গে গেছে। মাছের জন্য রাখা খাবারও ভেসে গেছে। পানিতে তলিয়ে থাকায় পুকুরের বা বিলের কোন চিহৃ দেখা যাচ্ছে না। অবকাঠামো মেরামত করে মাছ চাষে ফিরতে গেলে যে পুঁজির দরকার তা তাদের এখন সংগ্রহ করা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে।
বগুড়ার গাবতলী উপজেলার মাছুনদী বিল পাড়ের মাছ চাষিরা জানান, নতুন করে আবার শুরু করতে হবে। বিলে পানি বৃদ্ধি পেলে সেটি আটকানো যায় না। বিশালবড় বিলের পাড় তেমন একটা নেই। বন্যার পানির সাথে বিলের সব মাছ ভেসে গেছে। গত কয়েকদিনে নৌকা করে কেউ কেউ মাছ ধরার চেষ্টা করেও তেমন সফল হতে পারেনি। বন্যার পানি কমতে শুরু করেছে। কমে গেলে বিলে মাছ ছাড়ার বিষয়ে ভাবা হবে। 
বগুড়ার গাবতলী উপজেলার কাতলাহার বিল এলাকার মাছ চাষিরা জানান, বিলে মাছ চাষ করে দির্ঘদিন ধরেই। সারিয়াকান্দি ও সোনাতলায় বন্যা দেখা দেয় প্রথমে। বগুড়ার গাবতলী নদী থেকে অনেক দূরে। কিন্তু রাতারাতি পানি বৃদ্ধি পেয়ে বাঙালি নদীর উভয় পাড় ভেসে যায়। এর সাথে বিলের মাছও ভেসে যায়। বিলের বিভিন্ন প্রজাতির মাছ ছিল। ছোট যেমন মাছ ছিল, বড় মাছও ছিল। তিনি জানান, প্রায় ১৩ থেকে ১৪ লাখ টাকার মাছ ভেসে গেছে।
বগুড়া জেলা প্রশাসনের ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আজাহার আলী মন্ডলের দেয়া তথ্য মতে ১ আগস্ট পর্যন্ত প্রায় দেড় হাজার মেট্রিক টনেরও বেশি মাছ ভেসে গেছে। বন্যায় পানি বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে বন্যা এলাকার ক্ষতিগ্রস্থ পুকুরে মাছ নেই। পুকুরগুলোকে নতুন করে আবার তৈরী করে মাছ চাষ করতে হবে। 
বগুড়ার গাবতলী উপজেলার মৎস্য কর্মকর্তা আয়েশা খাতুন জানান, উপজেলায় পুকুর রয়েছে ৪ হাজার। দেড়শতটির মত পুকুরের ক্ষতি হয়েছে। উপজেলায় কয়েকটি বিল রয়েছে। এরমধ্যে কাতলাহার বিলটিও ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। কাতলাহার বিলের প্রায় ১৪ লাখ টাকার মত মাছ ভেসে গেছে। বিলটি এখন বন্যার পানিতে ডুবে আছে। এছাড়া রয়েছে উপজেলার আনিছুর রহমানের বিসমিল্লাহ হ্যাচারী, যেখানে প্রায় কোটি টাকার মাছ ক্ষতি বা ভেসে গেছে। 
বগুড়ার সোনাতলা উপজেলার মৎস্য কর্মকর্তা ইমদাদুল হক জানান, উপজেলার ৩ হাজার ৩০০টি পুকুর রয়েছে। এরমধ্যে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে ৩ হাজারটি। মাছ চাষি রয়েছে প্রায় ২ হাজার ৫০০ জন। সবগুলো পুকুরই বাঙালি নদীর পানিতে ডুবে গেছে। পুকুরগুলোর পাড় ভেঙ্গে গেছে। গত ২ মাস আগে বেশিরভাগ পুকুরে রেনু ছাড়া হয়েছিল। কোন কোন পুকুরে ছিল বড় মাছ। এইসব পুকুরের মধ্যে সিংহভাগ পুকুর ছিল বাণিজ্যিকভাবে চাষের। ক্ষতিগ্রস্থ মাছ চাষিরা সরকারিভাবে সহযোগিতা পেলে নতুন করে তারা শুরু করতে পারবে। এই জন্য বিশেষ বরাদ্দ চেয়ে সংশ্লিষ্ট বিভাগে পত্র প্রেরণ করা হয়েছে। অনেক মাছ চাষি আছেন যারা সহযোগিতা পেতে অফিসে আসছেন। 
বগুড়া জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো: তোফাজ উদ্দিন আহমেদ জানান, বগুড়ায় মোট বিল রয়েছে ৯৯টি। পুকুর প্রায় ৫৯ হাজার ২৬৮টি। এরমধ্যে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে প্রায় ৫ হাজার ১২১টি পুকুরের। অবকাঠামো ধরে আর্থিক ক্ষতির পরিমান প্রায় ৫৩ কোটি ৮৭ লাখ টাকা। সরকারি সহযোগিতা প্রদানের জন্য বলা হয়েছে। বন্যার পানি কমতে শুরু করেছে। ক্ষতিগ্রস্থ পুকুরের মধ্যে সিংহভাগ পুকুর বাণিজ্যিকভাবে মাছের চাষবাস হতো।

উপরে