প্রকাশিত : ৭ আগস্ট, ২০১৯ ০৮:৩২

মুসলিম স্থাপত্যের নিদর্শন বগুড়ার খেরুয়া মসজিদ

প্রবীর মোহন্তঃ
মুসলিম স্থাপত্যের নিদর্শন বগুড়ার খেরুয়া মসজিদ
ছবি: চাঁদনী বাজার

মুসলিম স্থাপত্যের এক অপুর্ব নিদর্শন বগুড়ার খেরুয়া মসজিদ। প্রায় সাড়ে চার’শ বছর ধরে আজও ইতিহাসের স্বাক্ষী হয়ে রয়েছে। মসজিদের সামনে সবুজ ঘাসে ঢাকা, আর গাছগাছালি দিয়ে ঘেরা প্রায় ৫৯ শতাংশ জায়গায় গ্রামীন সবুজ শ্যামল পরিবেশে খেরুয়া মসজিদটির সু-নিপুন নির্মান শৈলী যে কোন পর্যটকদের আকর্শনীয় করে তুলতে পারে। চুন ও সুড়কি দিয়ে গাঁথা লাল ইটের দেয়ালগুলো ১.৮১ মিটার চওড়া তার উপর ভর করেই টিকে আছে ৩ গম্বুজের এই মসজিদটি। মিনার,গম্বুজ, নকশা ও ইটের গাঁথুনিতে বর্তমানে আনা হয়েছে নান্দনিক বৈচিত্র। 

মুঘল-পূর্ব সুলতানি আমলের স্থাপত্যশৈলীর সঙ্গে সমন্বয়ে নির্মিত মসজিদটি বগুড়া শহরের জিরো পয়েন্ট সাতমাথা থেকে ঢাকা-বগুড়া মহাসড়ক ধরে প্রায় ২০কিলোমিটার দক্ষিণে আসলে শেরপুর উপজেলা শহর। এখান থেকে মাত্র দেড় কিলোমিটারের পথ। শহরের ধুনটমোড় থেকে মাজারগেট হয়ে দক্ষিণ-পশ্চিমে গেলেই দেখা মিলবে এই মসজিদটির। মাজারগেটে প্রবেশ পথে প্রতœতত্ত্ব অধিদপ্তরের লাগানো একটি দিক নির্দেনামূলক সাইনবোর্ড চোখে পড়বে। এছাড়া মসজিদটি কিছুটা গ্রামের ভেতর। তাই পাকা সড়ক বাদে সামান্য মেঠো পথ পাড়ি দিতে হবে। মসজিদের সামনে রয়েছে একটি কবর। সব সময় পরিস্কার পরিচ্ছন্ন থাকে মসজিদ প্রাঙ্গন। সবমিলিয়ে চমৎকার ছায়াযুক্ত সুন্দর পরিবেশ অবস্থিত এই মসজিদটি দেশ-বিদেশের পর্যটকদের ভীষণভাবে আকর্ষিত করে।

মসজিদের সামনের দেয়ালের উৎকীর্ণ শিলালিপি থেকে জানাযায়, ১৫৮২ সালে জওহর আলী কাকশালের পুত্র মির্জা মুরাদ খানের পৃষ্ঠপোষকায় ৯৮৯ হিজরীর ২৬ জিলকদ মসজিদটির ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন। মসজিদের উত্তর-দক্ষিণের দৈর্ঘ্য ১৭ দশমিক ৩৪ মিটার। পুর্ব-পশ্চিমের প্রস্থ ৭ দশমিক ৫ মিটার। ভেতরের দৈর্ঘ্য ১৩ দশমিক ৭২ মিটার ও প্রস্থ ৩ দশমিক ৮ মিটার। মসজিদের নির্মাণ শৈলীতে বৈচিত্র আনতে ছোট খিলনাকৃত প্যানেলের সারি রয়েছে বাঁকানো কার্ণিশের নিচ দিয়ে। সামনের দেয়ালে মাঝের বড় দরজার দু’পাশে বসানো রয়েছে দু’টো শিলালিপি খন্ড। একটি শিলালিপি বর্তমানে দেয়াল স্থাপিত রয়েছে। আরেকটি পাকিস্থানের করাচী যাদুঘরে সংরক্ষিত রয়েছে। এছাড়া মসজিদে কিছু পোড়ামাটির অলঙ্কার ছিলো। যা এখন চোখে পড়ে না। মসজিদের উত্তর-দক্ষিণ দেয়ালে রয়েছে একটি করে দরজা। তিনটি দরজা সামনে। মাঝেরটি আকারে বেশ বড়। এই দরজার দু’পাশে দেয়ালে বসানো রয়েছে দু’টো শিলালিপি। চারকোণে চারটি অষ্টভূজ মিনার। পশ্চিম দেয়ালে ভেতরের রয়েছে আয়তকার তিনটি মিহরাম। আকারের দিক দিয়ে মাঝেরটি তুলনামূলক বড়। 

স্থাপত্য বিশারদদের মতে, খেরুয়া মসজিদে সুলতানী ও মোঘল আমলের মধ্যবর্তী স্থাপত্য নিদর্শন প্রকাশ পেয়েছে। এতে বার কোনা ও আট কোনা কলাম ব্যবহার করা হয়েছে। যা বাংলার স্থাপত্য শিল্পে বিরল। ৯০ এর দশকে প্রতœতত্ত্ব বিভাগ এই মসজিদটি সংস্কার করার ফলে আগের অবস্থা ফিরে এসেছে। প্রতœতত্ব বিভাগ ১৯৮৮ সাল থেকে দেখাশোনার জন্য একজন খাদেম নিয়োগ করেছেন। বর্তমানে এখানে নিয়মিত পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ও জুম্মার নামাজ আদায় করা হয়।

দেশ ও বিদেশের বহু পর্যটক দর্শনার্থী ও স্থাপত্য বিশারদরা এই মসজিদ পরিদর্শন করেছেন। ভ্রমন পিয়াসী মানুষের যেমন তৃষ্ণা মেটাবে তেমনি মুসলিম স্থাপত্য সম্পর্কে নতুন প্রজন্মের মাঝে ধারনা জোগাবে। 
মসজিদের তত্ত্বাবধায়ক আব্দুস সামাদ প্রামানিক জানান, মসজিদটি প্রতœতত্ত্ব অধিদপ্তর সংরক্ষণের দায়িত্ব নেওয়ার পর চারদিকে সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করা হয়েছে। এখানকার পরিবেশ সুন্দর আকর্ষণীয় করতে তুলতে বিভিন্ন প্রজাতির গাছপালা লাগানো হয়েছে। তবে আশাপাশ থেকে যদি কিছু জায়গা নিয়ে পার্ক সিস্টেম করা যেতো তাহলে আরও ভাল হতো। তাছাড়া মসজিদের চারিদিকে ঘর তুলে এর সৌন্দর্য নষ্ট হচ্ছে। যা ভবিষ্যতের জন্য হয়তো পর্যটক বিমুখ হতে পারে। 

 

উপরে