প্রকাশিত : ১০ আগস্ট, ২০১৯ ১৯:১১

ঢাকার ট্যানারী মালিকদের কাছ থেকে বগুড়ার ব্যবসায়িরা পাবেন ৩০ কোটি টাকা

এইচ আলিম
ঢাকার ট্যানারী মালিকদের কাছ থেকে
বগুড়ার ব্যবসায়িরা পাবেন ৩০ কোটি টাকা

গত বছর বগুড়ায় চামড়ার ছিল হ-য-ব-র-ল। সর্বনিম্ন রেকর্ড দরে চামড়া ব্যবসায়িরা কোরবানীর পশুর চামড়া সংগ্রহ করেছিল। বিক্রেতারাও উপায় না পেয়ে কম দামেই চামড়া বিক্রি করেছে। এবছর কি হবে তা নিয়ে শংকায় রয়েছে চামড়ার মালিক, ফরিড়া, চামড়ার ব্যবসায়ি ও কোরবানী দাতারা। সরকারিভাবে চামড়ার দাম বেঁধে দেয়া হলেও বগুড়ার ব্যাবসায়িরা বলছেন এখনো তারা বকেয়া টাকা পাননি। টাকা না পেলে কি দিয়ে চামড়া কেনা হবে। বগুড়া জেলা চামড়া ব্যবসায়ী সমিতির সদস্যরা বলছেন, জেলায় সব মিলিয়ে ঢাকার ট্যানারী মালিকদের কাছ থেকে পাবেন প্রায় ৩০ কোট টাকা। এই টাকা পড়ে আছে গত কয়েক বছরের বেশি সময় ধরে। 

বগুড়ার চমড়ার বাজার হিসেবে খ্যাত জেলা শহরে বাদুরতলা এলাকা ঘুরে জানা গেছে, গত কোরবানীর ঈদে চামড়ার বাজারে ধস ছিল। বগুড়া জেলা শহর ও উপজেলা পর্যায় থেকে সর্বত্র ছাগলের চামড়া বিক্রি হয়েছে ২০ থেকে ৫০ টাকা করে। আর গরুর চামড়া বিক্রি হয়েছে ৪০০ থেকে ৯০০ টাকা পর্যন্ত। চামড়ার বাজার ধস নিয়ে চামড়া ব্যবসায়িরা নানা অজুহাতে একে অপরকে দুষছেন। দুষণ আর দোষার মধ্যে দিয়েই বগুড়ার চামড়ার ব্যবসায়িরা প্রায় ৩ লাখ পশুর চামড়া সংগ্রহ করে ছিল। 

বগুড়া জেলা চামড়া মালিক সমিতি সুত্রে জানা যায়, ২০১৭ সালের যে গরুর চামড়া বিক্রি হয়েছে ১৬ থেকে ১৮ শত টাকা সেই সাইজের চামড়া ২০১৮ সালের কোরবানীর ঈদে বিক্রি হয়েছে ৭০০ থেকে ৮০০ টাকায়। এর আগে ২০১৬ সালে বিক্রি হয়েছে ১৩০০ থেকে ১৪০০ টাকায়। ২০১৮ সালে সকল গরুর চামড়ায় বিক্রি হয়েছে সব্বোর্চ ৯০০ টাকায়। দুই একটি স্থানে ১০০০ থেকে ১২০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। ঢাকার ট্যানারী মালিকরা যেমন দাম দিয়েছে তেমন দামেই বগুড়ায় চামড়া কিনতে হয়েছে বলে ব্যবসায়িরা জানান। এই সমিতির আওতায় সদস্য রযেছে ৩৮৭ জন। যারা প্রত্যেকেই এবার চামড়া কেনার জন্য প্রস্তুতি শুরু করেছে। 

গত বছর বগুড়া শহরের সাতমাথা, চামড়া পট্টি, চকসুত্রাপুর, বাদুড়তলা, চকযাদু ক্রসলেন, থানা মোড়, চেলোপাড়া, শহরের বাহিরে ঠনঠনিয়া, কলোনী, বনানী, মাটিডালি, শাকপালা সহ কমপক্ষে একশতটি স্পটে কোরবানীর ঈদের দিন চামড়া সংগ্রহ করেছে চামড়া ব্যবসায়িরা। উপজেলা পর্যায় থেকে নেয়া চামড়া বিক্রি হয়েছে শহরের চামড়ার চেয়ে কম দামে। গত বছর ছিল বগুড়ায় সবচেয়ে কমদাম। 
এবছর বগুড়ায় কোরবানির চামড়ার বাজার নিয়ে চিন্তিত চামড়া ব্যবসায়িরা। গত কয়েক মাস ধরে অব্যাহত চামড়ার দরপরতন, প্রক্রিয়াজাত করার প্রধান কাঁচামাল লবনের দ্বিগুণ মূল্য বৃদ্ধি, শ্রমিকের বাড়তি মজুরির চাপ এবং গত কয়েক বছরের বকেয়া টাকা পরিশোধ না করার কারণে এই বছরও চামড়ার বাজারে ধস দেখা দিতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন ব্যবসায়ীরা।

বগুড়ার চকসুত্রাপুরের চামড়ার ব্যবসায়িরা বলছেন, গত কয়েকবছর ধরে বিক্রিত চামড়ার দাম পাওয়া যাচ্ছে না। ঢাকার মালিকরা বলছে দিব দিচ্ছি করেও চামড়ার দাম দেয়নি। এবছর এখনো টাকা পাওয়া যায়নি। শনিবার পর্যন্ত ঢাকার মালিকদের সাথে একাধিকবার যোগযোগ করেও কোন টাকা যাওয়া যাচ্ছে না। এই টাকা না পাওয়া গেলে কি দিয়ে বগুড়ার ব্যবসায়িরা চামড়া কিনবে। এদিকে ব্যাংক থেকে প্রায় ৬শত কোটি টাকা চামড়া ব্যবসায়িদের ঋণ দেয়া হয়েছে। ঋণ দেয়ার পরেও বগুড়ার চামড়া ব্যবসায়িদের পাওনা টাকা পরিশোধ করা হয়নি। 
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এবছর জেলা শহরের গরুর চামড়া প্রতি বর্গফুট ৩৫ থেকে ৪০ টাকা, খাসির চামড়া ১৮ থেকে ২০ টাকা, বকরির চামড়া ১৩ থেকে ১৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।

বগুড়ার একাধিক ব্যবসায়ীর অভিযোগ, বগুড়ার বাজার থেকে প্রায় শত কোটি টাকার ওপরে চামড়া কেনাবেচা হয়। কিন্তু চামড়ার রপ্তানি কমে যাওয়ার অজুহাত তুলে বকেয়া টাকা দিতে বিলম্ব করা হচ্ছে। ঈদে চামড়া না দিলে বাকি টাকা পরিশোধ করা হবে না, এমন শর্ত জুড়ে দেয়ায় বগুড়ার ব্যবসায়িরা এখন ধার দেনা করে চামড়া কেনার প্রস্তুতি শুরু করেছে।

বগুড়া জেলা চামড়া ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আব্দুুল মতিন সরকার জানান, ঢাকার ট্যানারী মালিকদের কাছ থেকে ঈদের আগে পাওনা টাকা পাওয়া যাচ্ছে না। বগুড়া ও শেরপুর উপজেলার চামড়া মালিকদের মোট পাওনা প্রায় ৩০ কোটি টাকা। এবছর ঢাকার চামড়া মালিকরা কোন টাকা দেবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে। তাদের অনুরোধ করা হয়েছে। তারপরও বগুড়ার ক্ষুদ্র ও চামড়া ব্যবসায়িরা এখনো বকেয়া টাকা পায় নি। টাকা না পেলে চামড়া কেনা কষ্টকর হয়ে উঠবে। অনেকেই হয়তো ধান দেনা করে চামড়া কেনাবেচা করবে। এই ব্যবসা না করতে পারলে সারা বছর লোকসানে থাকতে হবে। সমিতির সদস্য রয়েছে ৩৮৭ জন।

উপরে