প্রকাশিত : ১৪ আগস্ট, ২০১৯ ১৯:৫০

নওগাঁয় কোরবানীর চামড়া সিন্ডিকেটের মাধ্যমে কম দামে বিক্রির অভিযোগ..

এতিমরা তাদের হক থেকে বঞ্চিত।
নওগাঁ প্রতিনিধি:
নওগাঁয় কোরবানীর চামড়া সিন্ডিকেটের মাধ্যমে কম দামে বিক্রির অভিযোগ..

নওগাঁয় এবার কুরবানির পশুর চামড়া বিক্রি হয়েছে পানির দরে। গত কয়েক বছরের মধ্যে এত কমদাম কখনও হয় নাই। গরুর চামড়া ১০০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৪০০ টাকা এবং ছাগলের ১০ থেকে ২০টাকায় এবং-ভেড়ার চামড়া বিক্রি হয়েছে ৫ টাকা থেকে ১০ টাকা দরে । এই মূল্য অবনতির বড় শিকার হয়েছে দুঃস্থ মানুষ এবং ধর্মীয় ও সামাজিক প্রতিষ্ঠানগুলো। বছরের বৃহৎ এই আয় থেকে বঞ্চিত হওয়ায় অনেক প্রতিষ্ঠানের মাথায় হাত পড়েছে।

প্রতিষ্টানগুলো কিভাবে চলবে তা নিয়ে দুঃচিন্তায় পড়েছেন তারা। চামড়ার চাহিদা না থাকার অজুহাতে এবার ন্যায্যমূল্য দেয়নি এখানকার ব্যবসায়ীরা। ফলে কুরবানির পশুর চামড়া নিয়ে বিপাকে পড়েন জেলাবাসী। এ কারণে চামড়া বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছে পানির দরে। ভ’ক্তভোগীদের অভিযোগ, চামড়া ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে চামড়ার দাম কমিয়ে ফেলা হয়েছে। 

ব্যবসায়ীরা বলছেন, বেশি দরে চামড়া কিনে প্রতিবছরই তাদের লোকসান গুণতে হয়। এ জন্য এবার তারা বেশ ‘সতর্ক’ হয়েই চামড়া কিনেছেন। গতবছর ঢাকার বাইরে গরুর প্রতি বর্গফুট চামড়া ৪০ টাকা ও খাসির চামড়া সারা দেশেই ২২ টাকা দরে কিনেছেন ব্যবসায়ীরা। এবারও তারা একই দর চূড়ান্ত করে নিয়েছিলেন সরকারের কাছ থেকে। অন্য বছর সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দরে চামড়া বিক্রি হলেও এবার তা হয়নি।

জেলা জুড়ে মৌসুমী চামড়া ব্যবসায়ীদের দৌরাত্ম্য ছিল অনেক কম। ফলে চামড়া কেনার সময় ব্যবসায়ীরা এবার বেমালুম চেপে গিয়েছেন সরকার নির্ধারিত দাম। কোথাও কোথাও চামড়া বিক্রি হয়েছে নির্ধারিত দামের চেয়েও কম টাকায়। গত কয়েকটি কুরবানির ঈদে চামড়া এতো কম মূল্যে বিক্রি হতে দেখা যায়নি। অন্য বছরগুলোর তুলনায় এবার মৌসুমি ব্যবসায়ীর দাপটও ছিল কম। ফলে চামড়ার বাজারে ‘রাজত্ব’ করেছেন প্রকৃত ব্যবসায়ীরাই।

তারা চামড়া বিক্রেতাদের বলেছেন, গত বছরের চামড়ার প্রায় অর্ধেক এখনো রয়ে গেছে ঢাকার ট্যানারিগুলোতে। তাছাড়া ট্যানারিগুলো স্থানান্তর করতে গিয়েও টালমাটাল ব্যবসায়ীরা। ফলে নতুন করে চামড়া কেনার আগ্রহ ছিলো না তাদের। তারা চামড়া কিনছেন ঝুঁকি নিয়ে। ট্যানারি মালিকরা চামড়া না নিলে তারা লোকসান গুণবেন। এ জন্য তারা চামড়া বেশি দামে কিনতে পারছেন না।

জেলার একাধিক মৌসুমী চামড়া ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, গত কয়েক বছর চামড়া ব্যবসা করে মহাজনের কাছে তাদের লাখ লাখ টাকা বকেয়া পড়েছে। তাই এবার সতর্কতার সঙ্গে চামড়া কিনেছেন। তারা আরো বলেন গরুর চামড়া ১০০ থেকে ৪০০ টাকার মধ্যে কিনেছেন।

ভরমাধাইমুড়ি সিদ্দিকিয়া দারুল উলুম কাওমি মাদ্রার শিক্ষক মতিউর রহমান জানান, এবার চামড়ার দাম হওয়ার কারণে অনেক গ্রামে ছাগল-ভেড়ার চামড়া কেউ কিনতেও পর্যন্ত যায়নি। অনেক কুরবানিদাতা পশুর চামড়া মাটিতে পুঁতে ফেলেছে। আবার কেউ কেউ নদীর পানিতে ভাসিয়ে দিয়েছে।

এদিকে চামড়ার দাম কম হওয়ায় কোরবানি দাতারা হতাশ হন। তারা বলেন, মাত্র কয়েক বছর আগে একটি গরুর চামড়া দুই হাজার থেকে আড়াই হাজারে এবং ছাগলের চামড়া ২০০ থেকে ৫০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। পশুর মূল্য অনেক বেড়ে গেলেও চামড়ার দাম কমে যায়। অথচ চামড়ার সামগ্রী কিনতে গেলে অনেক দাম দিয়ে কিনতে হয়। চামড়ার দাম কম হওয়ায় জেলার বিভিন্ন মাদ্রাসার এতিম শিশুদের হক নষ্ট করা হয়েছে। তারা এ জন্য চামড়া ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটকে দায়ী করেছেন।

তারা বলছেন, গরিবের হক নষ্ট করে ধনীরা আরও ধনী হচ্ছেন।
এ ব্যপারে জেলা চামড়া ব্যবসায়ী মালিক গ্রুপের সভাপতি মোঃ মোমতাজ হোসেন জানান, জেলায় ২০০ জন চামড়া ব্যবসায়ী ছিল এখন সেখানে দাড়িয়েছে মাত্র ৫/৬ জন। ট্যানারী মালিকদের কাছে গত কয়েক বছরে পাওনা টাকা প্রায় ২০ কোটি টাকা। কোরিবানীর সময় টাকা দিয়েছে ১০ থেকে ১৫ ভাগ টাকা আবার কাউকে কোন টাকা দেয় নাই।

তবুও তারা বকাপ দাদার পেশা টিকিয়ে রাখতে দাদনের উপর ঋন করে মাত্র জ্জ জন ব্যবসায়ী চামড়া কিনছেন। তারা কোন প্রকার সিন্ডিকেট করে চামড়া কিনছেন না। ট্যানারী মালিকরা যে হিসাবে চাড়মা কিনছেন আমরা সেই হিসাবে চামড়া কিনছি। খোলা বাজারে সরকারের বেধে দেয়া ৩৫-৪০ টাকা বর্পফুট দামে চামড়া কিনছেন। 

তিনি বলেন, চামড়ার দাম বাড়বে যদি সরকার ব্লু চামড়া রপ্তানী করার অনুমোদন দেন তাহলে গরুর চামড়া ৮০ টাকা ফিচ লাগবে। তিনি সরকারের নিকট ব্লু চামড়া রপ্তানী করার দাবী জানান।

তিনি ট্যানারী মালিকদের কাছে অনুরোধ যদি তারা সপ্তাহ খানিকের মধ্যে দেশের প্রতিটি জেলায় যদি চামড়া না কিনে তাহলে পাশ্ববর্তী দেশ ভারতে চামড়ার দাম তিনগুন বেশী হওয়ায় চামড়া পাচার হয়ে যাবার আশংকা করছেন তিনি। তিনি আরও জানান, মাঠ পর্যায়ে যদি তদন্ত করে মনিটরিং টিম গঠন করে চামড়ার নীতিমালা গ্রহন করা উচিত। আর ব্লু চামড়া রপ্তানী করার অনুমোদন সরকার দেয় তাহলে চামড়ার বাজার আবার ফিরে আসবে নইলে এই শিল্প ধ্বংশ হয়ে যাবে বলে জানান তিনি। 

এদিকে, নওগাঁ পুলিশ সপার মোঃ ইকবাল হোসেন পিপিএম জানান, ভারতে যেন চামড়া পাচার না হয়, সেজন্য সীমান্তবর্তী এলাকায় পুলিশের কঠোর নজরদারী বাড়ানো হয়েছে। চামড়াবাহী গাড়ীগুলিকে সীমান্তের দিকে যেতে দেয়া হচ্ছে না। সীমান্তের দিকে কোন চামড়াবাহী গাড়ী যেতে না পারে সেজন্য চামড়া ব্যবসায়ী, পরিবহন নেতাদের নিয়ে বৈঠক করা হয়েছে। এই জেলার ৪টি থানা সীমান্তবর্তী হওয়ায় দেশের সম্পদ এই চামড়া অন্যদেশে পাচার যেন না হতে পারে সেজন্য নিশ্চিত করবে বলে জানান তিনি।

এ ব্যাপারে ১৬ বিজিরি অধিনায়ক লেঃ কর্নেল মাসুদ জানান, চামড়া পাচার যেন না হয় সেজন্য সীমান্তে কঠোর নজরদারী বাড়ানো হয়েছে। 
চামড়া শিল্পকে টিকে রাখা এবং চামড়া ব্যবসায়ীদের আর্থিক ক্ষতি থেকে বাঁচানোর জন্য সরকারী ট্যানারী মালিকদের বেধে দেয়া চামড়ার মূল্য অবিলম্বে পূণঃ নির্ধারনের দাবী জানান নওগাঁর চামড়া ব্যবসায়ীরা।

 

উপরে