প্রকাশিত : ১৭ আগস্ট, ২০১৯ ১৭:৪৮

সফল একাধিক স্কুল-কলেজ ও সরকারী প্রতিষ্ঠানের বড় অর্জন কি আবর্জনার স্তূপ ?

শুভ কুন্ডু, শেরপুর-বগুড়াঃ
সফল একাধিক স্কুল-কলেজ ও সরকারী প্রতিষ্ঠানের বড় অর্জন কি আবর্জনার স্তূপ ?

চারিদিকে চলছে মশক নিধন কার্যক্রম। তবে এই মশা আমদানির বড় একটি কারন যে অপরিকল্পিত বর্জ্য ব্যবস্থাপনা তার দিকে কারও নজর নেই। শেরপুর উপজেলাটি বগুড়া জেলার অন্যতম সুনামপূর্ণ উপজেলা। শেরপুর উপজেলায় মহাসড়ক সংলগ্ন উপজেলা পরিষদ এবং পাশাপাশি একাধিক সুনামধন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ব্যাবসা প্রতিষ্ঠান, মসজিদ ও মাদ্রাসা থাকায় সবসময় জমজমাট থাকে এলাকাটি। শেরপুর শহরের জনসাধারন সহ উপজেলার অন্তর্গত দশটি ইউনিয়নের জনসাধারননের সবচেয়ে অপরিহার্য সড়ক শেরপুর উপজেলা পরিষদ এলাকার মহাসড়ক।

আর ঢাকা-বগুড়া মহাসড়কের এই অপরিহার্য মহাসড়ক বর্তমানে দূষিত এলাকায় পরিনত হয়েছে। মহাসড়কের পাশে ও উপজেলা পরিষদের দক্ষিন পাশের্^র একটি পুকুর শেরপুর শহরের সকল নোংরা-আবর্জনা ফেলে ভরাট করার কাজ চলছে প্রায় বছরের পর বছর ধরে। যা বর্তমানে আবর্জনার স্তূপে পরিনত হয়েছে। স্থানটি গৃহস্থালির বর্জ্য, পচা খাবার, পলিথিন ব্যাগ, কসাইখানার বর্জ্য সহ শহরের সবধরনের দূর্গন্ধযুক্ত আবর্জনায় একাকার হয়ে আছে। অবহেলিত হচ্ছে ওই আবর্জনার স্তূপের আশেপাশের সুনামধন্য একাধিক স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা।

আবর্জনার বিশাল এই স্তূপটি ঐত্যিহ্যবাহী “মজিবর রহমান মজনু উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়”, “শেরপুর টাউন ক্লাব পাবলিক লাইব্রেরী মহিলা অনার্স কলেজ” ও “শেরপুর টেকনিক্যাল এন্ড বিএম কলেজ” পাশাপাশি তিনটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ঠিক অপর পাশের্^ বিরাট আকারের জায়গা নিয়ে পাহাড়ের মতো গড়ে উঠেছে। দূর্গন্ধে জর্জরিত হয়ে পরেছে “পার্ক আহলে হাদিস মসজিদ” যাতে করে নামাজীদের নামাজে বিঘœ ঘটাচ্ছে। আরও রয়েছে “দারুস সুন্নাহ হাফিজিয়া মাদ্রাসা”, উপজেলা কেন্দ্রীয় ঈদগাহ মাঠ, বাচ্চাদের আর্টস্কুল “চকস্লেট আর্ট স্কুল” সহ একাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। প্রচন্ড দূর্গন্ধ আর দুষনের মধ্যদিয়ে নাক চেপে কোনোমতে জায়গাটা পার হয়ে বাঁচতে চাইছে স্কুলের শীক্ষার্থী ও পথচারীরা।

স্থানীয় লোকজন জানান, এ দৃশ্য রোজকার। অনেকটা গায়ে সয়ে গেছে তাদের। বহু বছর ধরে এটা স্থায়ী ময়লার ডিপো হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। তবে এ নিয়ে পৌরসভার কোনো মাথাব্যথা নেই।

“খুব খারাপ লাগে। সহ্য কারা যায়না। বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় এই আবর্জনার কথা মনে পড়লে ভয়ে স্কুলেই আসতে ইচ্ছা করেনা” কথাগুলো বলছিল মজিবর রহমান মজনু উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের নবম শ্রেনীর জান্নাতুল ফেরদৌসী। সাথে ছিল সুমাইয়া অকতার, আয়শা সিদ্দিকা, কাজলী খাতুন, সাথী আকতার, রোকছানা আকতার, লিজা আকতার, মারুফা আকতার, সহ আরও অনেক নাম না জানা এক ঝাঁক শিক্ষার্থী। মজিবর রহমান মজনু বালিকা বিদ্যালয়ে ৫শ ২০জন শিক্ষার্থী রয়েছে যাদের প্রতিনিয়ত এই দুর্ঘন্ধ সহ্য করে যাতায়াত ও ক্লাস করতে হচ্ছে। মজিবর রহমার মজনু উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা অনোয়ারা খতুনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এই ময়লা আবর্জনার বিষয়ে তিনি পৌরসভা ও উপজেলা বরাবর অনেক আগেই লিখিত দরখাস্তও দিয়েছিলেন কিন্তু কোনো লাভ হয়নি।

অন্যদিকে শেরপুর টাউন ক্লাব পাবলিক লাইব্রেরী মহিলা অনার্স কলেজের প্রধান শিক্ষক একেএম নুরুল ইসলামের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী বর্তমানে কলেজটিতে নতুন ভর্তি সহ মোট ১৫শ ২১ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। তিনি বলেন, শুধু দূর্গন্ধই নয় দূর্গন্ধের পাশাপাশি প্রচুর পরিমানে মশার আমদানি হয় এই আবর্জনার স্তুপের কারনে যার ফলে শিক্ষর্থীরা ক্লাস করতে অমনোযোগি হয়ে পরে। তিনি আরও বলেন, যদি খুব তারাতারি এর স্থানান্তর করা অথবা দূর্গন্ধ ও মশক নিধনের কোনো ব্যবস্থা করা না যায় তাহলে শিক্ষর্থীরা বিভিন্ন দিক থেকে মারাক্তক ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে পরবে।

এছাড়াও শেরপুর টেকনিক্যাল এন্ড বিএম কলেজের প্রায় ৩শতাধিক ছাত্র-ছাত্রী একইভাবে দূর্গন্ধ ও মশার কামর খেয়ে ক্লাস করে। শেরপুর টেকনিক্যাল এন্ড বিএম কলেজের অধ্যক্ষ মো: জাফর আলমগীর আবর্জনার বিষয়ে চাঁদনী বাজারকে বলেছেন, খুব তারাতারি এর কোনো ব্যবস্থা না হলে পাশাপাশি অনেকগুলো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উপর এর বিরুপ প্রভাব পরবে বলে আমি মনে করি। আবার দারুস সুন্নাহ হাফিজিয়া মাদ্রাসাতেও বেশকিছু ছাত্র পড়াশোনা করতে একইভাবে দূর্গন্ধ ও মশার উপদ্রপে পীড়িত হচ্ছে।
তাহলে সব মিলিয়ে মাদ্রাসার শিক্ষার্থীসহ প্রায় ২৮শ শিক্ষার্থী, হাজার হাজার নামাজী ও শতাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের জন্য বড় ঝুকি হয়ে দারিয়েছে এই বিরাটাকার ময়লার স্তুপ। যেখানে সকাল-সন্ধা না মেনে যখন-তখন আবর্জনাবাহী গাড়ি এসে আবর্জনা ফেলে দিয়ে চলে যাচ্ছে। শেরপুর নাকি প্রথম শ্রেনীর এবং গুরুত্বপূর্ন পৌরসভা। প্রথম শ্রেনীর পৌরসভা হওয়ার পরেও নাই বর্জ্য ব্যবস্থাপনা। যেখানে বর্তমানে বিভিন্ন পৌরসভার মানুষ বর্জ্য ব্যবস্থাপনার সুফল পাচ্ছেন। উদাহরন স্বরূপ গত ২০১৬ ইং সালের মার্চ মাসে নীলফামারীর সৈয়দপুর পৌর এলাকায় বর্জ্য ব্যবস্থাপনা শুরু হয়ে বর্তমানে তার সুফল পাচ্ছেন ওই এলাকার বাসিন্দারা।

আমরা বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নাইবা করতে পারলাম কিন্তু অপরিকল্পিতভাবে জমজমাট এই রকম একটা জায়গা আবর্জনার স্তুপ না বনিয়ে শহর থেকে দূরে পরিকল্পিতভাবে ফাকা কোনো জায়গাতে এই আবর্জনার স্তুপ স্থানান্তর তো করতেই পারি। কথাগুলো বলছিলেন শেরপুরের সচেতন মহলের কিছু ব্যক্তিবর্গ। তারা বলছেন, শহরের আশেপাশে কত ফাকা জায়গা পড়ে আছে যেখানে মানুষজনের যাতায়াত নেই, নেই স্কুল-কলেজ, নেই সরকারি প্রতিষ্ঠান, সেই জায়গাগুলো এই আবর্জনার কাজে ব্যবহার না করে এই রকম একটা জমজমাট এলাকায় এই ভাবে আবর্জনার স্তুপ বানিয়ে রাখাটা আমরা প্রথম শ্রেনীর পৌরসভার নাগরিক হিসেবে আমাদের লজ্জার কারন। তাহলে এই একাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও সরকারি প্রতিষ্ঠানের বড় অর্জন কি এই আবর্জনার স্তুপ?

এই বিষয় নিয়ে চাঁদনী বাজারকে শেরপুর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মো: লিয়াকত আলী শেখ বলছেন, আমরা এই প্রসঙ্গে শেরপুর উপজেলার চেয়ারম্যান ও পৌরসভার মেয়র মহাদয়ের সাথে আলোচনা করেছি। ওই আবর্জনার স্তুপ দ্রুত স্থানান্তরের ব্যপারে মেয়র মহাদয় আশ^স্ত করেছেন। তিনি বলছেন, স্তুপের কারনে আশেপাশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও সরকারি প্রতিষ্ঠানে মশক নিধনের ব্যাপারে ওই স্থানে এর আগেও আমরা স্প্রে করেছি এবং এই কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।

তবে এ বিষয়ে শেরপুর পৌর মেয়র আব্দুস সাত্তারের সঙ্গে কথা বললে চাঁদনী বাজারকে বলছেন, ওই স্থানে ময়লা আবর্জনা কে বা কারা ফেলে যায় তা আমার জানা নাই। পৌরসভার ময়লার গাড়ি সময়-অসময়ে ওইখানে নিয়মিত ময়লা ফেলে যায় এমন কথার জবাবে তিনি বলেন, আমরা ওইখানে ময়লা ফেলার কথা নিষেধ করে দিয়েছি। এর পরেও যদি কেউ ময়লা ফেলে যায় তাহলে কি করতে পারি? তবে আবারও নিষেধ করে দেওয়া হবে যেন ওইখানে ময়লা না ফেলানো হয়। তবে ওই স্থানের পরিবেশ, মশক নিধন ও দূর্গন্ধ আয়ত্বে আনার ব্যপারে সুনির্দিষ্ট কোনো মন্তব্য তিনি করেননি।

 

উপরে