প্রকাশিত : ২৩ আগস্ট, ২০১৯ ০৮:১৮

পাবনায় জনপ্রিয় মাদকের বিকল্প ট্যাপেন্টা,পেনট্রাডল,সেনট্রাডল,সিনটা ট্যাবলেট

পাবনা প্রতিনিধিঃ
পাবনায় জনপ্রিয় মাদকের বিকল্প ট্যাপেন্টা,পেনট্রাডল,সেনট্রাডল,সিনটা ট্যাবলেট

পাবনা জেলা শহর সহ ঈশ্বরদীতে মাদকসেবীদের জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে মাদকের বিকল্প ব্যাথা নাশক ও ঘুমের প্রিপারেশনের ট্যাপেন্টা, পেনট্রাডল, সেনট্রাডল, সিনটা জাতীয় ট্যাবলেট। Tapentadol Hydrochloride INN প্রিপারেশনের এই ট্যাবলেট ৫০, ৭৫ ও ১০০ মিলিগ্রামের পাতা প্রেসক্রিপশন ছাড়াই দেদারছে বিক্রি হচ্ছে। মূলত: যখন আর কোন ব্যাথানাশক ট্যাবলেটে কাজ হয় না, তখন এই ট্যাবলেট ব্যবহারের ব্যবস্থাপত্র দেয়া হয়। ইয়াবা-হেরোইন-ফেন্সিডিলের দাম বেড়ে যাওয়ায় কমদামে এই ট্যাবলেট এখন মাদকসেবীদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। ঈশ্বরদীর মাদকসেবীদের শতকরা ৬৫ ভাগ এখন এই ট্যবলেটে আসক্ত বলে জানা গেছে।

মাদকাসক্তরা কেউ জল দিয়ে গিলে, কেউবা গুড়ো করে ইয়াবা-হেরোইনের মতো নল দিয়ে এবং সিগারেটে গুড়ো মিশিয়ে ধোঁয়া গ্রহন করছে। চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশন থাকলে ওষুধের দোকানদাররা অবাধে এই ট্যাবলেট বেশী দামে বিক্রি করছে। গত ১৯ আগষ্ট উপজেলা আইন-শৃংখলা কমিটির মাসিক সভায় এই ট্যাবলেট ঈশ্বরদীতে মাদক হিসেবে ব্যবহার করায় উপজেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

খোঁজ নিযে জানা যায়, বাজারে বিভিন্ন কোম্পানীর বিভিন্ন নামে এই জাতীয় ট্যাবলেট রয়েছে। বুধবার এই ট্যাবলেট সম্পর্কে ওষুধের দোকানে খোঁজ নেয়ার সময় ২০-২২ বছর বয়সের জনৈক তরুণ ওই দোকানে ২টি পেনট্রাডল ট্যাবলেট কিনতে আসে। এসময় ওই তরুণকে এই ট্যাবলেট কিভাবে সেবন করে এবং খেলে কি হয় এ বিষয়ে জানতে চাইলে তরুণ জানায়, ৭৫ মি:গ্রা: এর দুটি ট্যাবলেট সে প্রতিদিন পানি দিয়ে গিলে খায়। এই ট্যাবলেট খেলে ঘুম ভাল হওয়ার সাথে সাথে এক ধরণের ফিলিংস হয় বলে সে জানিয়েছে।
বাজারের দু’জন ওষুধের দোকানদারের সাথে কথা বলে জানা যায়, এই ট্যাবলেট ইদানিং জেলা সদর সহ ঈশ্বরদীতে মাদকসেবীদের কাছে ব্যাপক জনপ্রিয়।

মাদকসেবীদের শতকরা ৬৫ ভাগই এখন এই ট্যাবলেটে আসক্ত বলে জানিয়েছেন। এসব ট্যাবলেটের খুরচা মূল্য ২০-৩০ টাকার মধ্যে হলেও ৫০-৬০ টাকা দামে বাজারে বিক্রি হচ্ছে। পাশাপাশি ইয়াবা প্রতি পিচ ১২০-২০০ টাকা, হেরোইন ১০০-১২০ টাকা পুড়িয়া এবং ফেন্সিডিল ১,০০০-১,২০০ টাকা দামে বিক্রি হলেও সমস্যা অনেক। ব্যবসায়ীরা আরো জানান, অন্যান্য মাদকের দাম বেশী হওয়ায় এসব নিয়মিত গ্রহন করতে না পারার কারণে মাদকাসক্তদের শরীরে ব্যাথা, অস্বস্তি ও নার্ভে খিঁচুনির সৃষ্টি হয়।

Tapentadol Hydrochloride INN জাতীয় ট্যাবলেট ব্যবহার করলে এসব সমস্যা থেকে পরিত্রাণ লাভ করে বলে মাদকাসক্তরা জানান। ব্যবসায়ীরা আরো জানান, ওষুধ কোম্পানীর বিক্রয় প্রতিনিধিদের এই ওষুধ প্রেসক্রিপশনের জন্য ডাক্তারদের কাছে ধর্ণা দিতে হয় না। কারণ প্রেসক্রিপশন ছাড়াই এই ওষুধের বাজারে বিপুল পরিমান চাহিদা রয়েছে। তাই ডাক্তারদের প্রেসক্রিপশনেও তেমনভাবে এই জাতীয় ট্যাবলেটের নাম লেখা হয় না। দোকানদারদের চাহিদা মোতাবেক কোম্পানীগুলো এই জাতীয় ট্যাবলেট সরবরাহ করতে না পারার কারণেই কোন কোন দোকানদার দ্বিগুণ দামে এই ট্যাবলেট বিক্রি করছে। প্রেসক্রিপশন ছাড়া এই ট্যাবলেট বিক্রি প্রসংগে ওষুধ ব্যবসায়ীরা জানান, স্থানীয় বাজারে অনেক ওষুধই প্রেসক্রিপশন ছাড়াই দীর্ঘদিন ধরে বিক্রি হচ্ছে।

ডাক্তার আব্দুল বাতেন নিয়মিত এই জাতীয় ট্যাবলেট ব্যবহারের ফলাফল ভয়াবহ জানিয়ে বলেন, ব্যাথা নাশক ও ঘুমের প্রিপারেশনের এই জাতীয় ট্যাবলেট নার্ভ সিস্টেমে কাজ করে। অন্যান্য ব্যাথানাশক ট্যাবলেটে গ্যাস সৃষ্টি হয় এবং যখন এসব ট্যাবলেটে কোন কাজ হয় না, তখন Tapentadol Hydrochloride INN জাতীয় ট্যাবলেট ব্যবহার করা হয়। সাধারণত: অপারেশনের পর সাময়িক ভাবে এই ট্যাবলেট কেউ কেউ প্রয়োগ করে থাকেন।

ঈশ্বরদী হাসপাতালের আরএমও ডাঃ শফিকুল ইসলাম শামীম প্রেসক্রিপশন ছাড়া এই জাতীয় ট্যাবলেট বিক্রি করা যাবে না জানিয়ে বলেন, ব্যাথানাশক ট্যাবলেটে যখন কোন কাজ হয় না, সেসময় সাময়িকভাবে এই ট্যাবলেট ব্যবহার হয়। বেশীরভাগ চিকিৎসকই ব্যবস্থাপত্রে সাধারণতঃ এই ট্যাবলেট লিখেন না। তবু বাজারে বিপুল পরিমাণে বিক্রি হচ্ছে জানিয়ে তিনি আরো বলেন, শ্বাসকষ্ট ও এ্যাজমা রোগীদের জন্য এই ট্যাবলেট ভয়াবহ।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের ঈশ্বরদীর পরিদর্শক ভূপতি কুমার বর্মন মাদকাসক্তদের Tapentadol ট্যাবলেট ব্যাপক ব্যবহারের সত্যতা স্বীকার করে বলেন, বড় বড় কোম্পানী এই ট্যবলেট বৈধতা নিয়ে বাজারজাত করছে। যেকারণে এটি বিক্রয়কারী দোকানদার এবং মাদকাসক্তদের কাছে পাওয়া গেলেও আমরা কিছুই করতে পারছি না। 
উপজেলা নির্বাহী অফিসার আহাম্মদ হোসেন ভূঁইয়া মাদকাসক্তদের Tapentadol ট্যাবলেট বিক্রি বন্ধে আইনগত সমস্যার কথা জানিয়ে বলেন, প্রেসক্রিপশন ছাড়া এই জাতীয় ট্যাবলেট বিক্রি বন্ধে দ্রুত অভিযান পরিচালনা করা হবে। এব্যাপারে তিনি জনসচেতনতা তৈরীর জন্য সকলের প্রতি আহব্বান জানিয়েছেন। 

উপরে