প্রকাশিত : ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ ২১:০২

বগুড়ায় দুর্গা প্রতিমা নির্মাণে ব্যস্ত সময় পার করছে কারিগররা

এইচ আলিম
বগুড়ায় দুর্গা প্রতিমা নির্মাণে ব্যস্ত সময় পার করছে কারিগররা

ক’দিনের ভ্যাপসা গরম খুব ভুগিয়েছে সাধারণ মানুষেকে। সেই ভ্যাপসা গরম কমে যাচ্ছে। আবহাওয়ার গরমটা যতই কমছে, ততটায় যেন শারদ মেঘের ঘোমটা খুলছে। শিশির পড়ছে। আর বাতাসে ভেসে আসছে শিউলী ফুলের গন্ধ। যেন মেঘে মেঘে বেলা বাড়ছে। আর ব্যস্ততা বাড়ছে সনাতন ধর্মের মানুষের মাঝে। আসছে শারদীয় দুর্গা পূজা। তাই উৎসবের আমেজ লেগেছে সনাতন ধর্মালম্বীদের মাঝে। বগুড়া জেলায় মন্ডপ- মন্দিরগুলো ধুয়ে মুছে রঙে চকচকে হতে শুরু করেছে।

সনাতন ধর্মালম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দূর্গাপুজার প্রস্তুতি চলছে বগুড়ায়। মন্ডপে মন্ডপে চলছে প্রতিমা তৈরীর কাজ। কোথাও প্রতিমার কাঠামো তৈরী হয়েছে। কোথাও মাটি ভরাট করে প্রতিমার প্রতিরূপ ফুটে তোলার কর্মে ব্যস্ত রয়েছে প্রতিমার কারিগররা। প্রতিমায় এখনো রঙের আচঁড় দেয়া হয়নি। আর কয়েকদিন পর রঙ আর তুলির আচঁড়ে সেজে উঠবে প্রতিমা। দেশের অন্যন্য স্থানের মতো বগুড়াতেও হিন্দু সম্প্রদায়ের সার্বজনীন শারদীয় উৎসবকে ঘিরে নানা আনুষ্ঠানিকতার প্রস্তুতি চলছে জোরেসোরে। নিরাপত্তার স্বার্থে থাকছে সিসি ক্যামেরার ব্যবস্থা। 

বগুড়া জেলা প্রশাসন সুত্রে জানা যায়, এবার জেলার ১২টি উপজেলায় ৬৭৭টি পুজা মন্ডপে দূর্গা পুজার আয়োজন করা হয়েছে। সুষ্ঠু ও শান্তিপুর্ণ পরিবেশে এই ধর্মীয় উৎসব পালনের জন্য সব ধরণের প্রস্তুতি নিয়েছে প্রশাসন। মন্ডপের আয়োজকদের সরকারি ভাবে বরাদ্দ দেওয়ার প্রস্তুতিও শেষ পর্যায়ে। প্রতি বছরের মত এবছর বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে চাল। জেলা প্রশাসকের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা শাখার ত্রাণ কর্মকর্তার কার্যালয় সুত্রে জানা যায়, বগুড়া সদরে ১১৮টি, শিবগঞ্জে ৫১টি, সোনাতলায় ৪৫টি, গাবতলীতে ৭১টি, সারিয়াকান্দিতে ২৪টি, কাহালুতে ৪০টি, দুপচাঁচিয়ায় ৩৮টি, আদমদীঘিতে ৭০টি, ধুনটে ৪১টি, নন্দীগ্রামে ৪৬টি, শাজাহানপুরে ৪৯টি এবং শেরপুরে ৮৪টি মন্ডপে এবার দূর্গা পুজার আয়োজন চলছে। বগুড়া জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের নেতৃবৃন্দ জানায়, বগুড়া জেলায় গত বছর ৬৬৪টি ম-পে দূর্গাপূজার আয়োজন করা হয়েছিল। সেখান থেকে এ বছর মন্ডপের সংখ্যা বেড়েছে। 

বগুড়া জেলা পুলিশ বিভাগ সুত্রে জানা গেছে, ১২টি উপজেলায় পুজা মন্ডপকে বিভিন্ন স্তরে ভাগ করে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হবে। ঝুঁকিপৃর্ন মন্ডপগুলোতেও থাকবে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা। প্রয়োজনে বিশেষ গুরত্ব দিয়ে সিসি টিভিও বসানো হবে।বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ বগুড়া পৌর কমিটির সভাপতি পরিমল প্রসাদ রাজ জানান, সরকারি সহযোগিতা যথেষ্ট পাওয়া যায়। প্রতিবারই বরাদ্ধ দেয়া হয়। এবারো বরাদ্ধ পাওয়া যাবে। মন্ডপগুলোতে সাজসজ্জার কাজ শুরু হয়েছে। পুজোর আয়োজন চলছে বগুড়ার প্রতিটি সনাতন ধর্মালম্বীদের পরিবারে। বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ বগুড়া জেলা কমিটি ও পৌর কমিটি সহ সকল কমিটির সদস্যরা নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে।

বগুড়া শহরের উত্তর চেলোপাড়া নববৃন্দাবন দূর্গাপুজা মন্দিরের নির্বাহী সদস্য অলক পাল জানান, বেশিরভাগ মন্ডপের প্রতিমার কাঠামোতে মাটি ভরাট কাজ চলছে। কোথাও আবার শেষ হয়েছে। প্রতিমা তৈরীর কাজ এগিয়ে চলছে। রঙ এর কাজ এখনো শুরু হয়নি। কয়েকদিন পর শুরু হবে। পরিবারে আনন্দের ঢেউ লাগছে। অনেকেই কেনাকাটায় ব্যস্ত হয়ে আছে। বগুড়া জেলা প্রশাসকের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা শাখার ত্রান কর্মকর্তা আজাহার আলী মন্ডল জানান, এখন পর্যন্ত ৬৭৭টি মন্ডপের তালিকা করা হয়েছে। সে হিসাবে বরাদ্দ প্রদানের কাজও দ্রুত করা হচ্ছে। সরকারিভাবে খুব দ্রুত বরাদ্দ পৌঁছে দেওয়া হবে। 

বগুড়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সনাতন চক্রবর্তি জানান, প্রতিটি পুজা মন্ডপে নিরাপত্তার জন্য পুলিশের পাশাপাশি আনসার, পুজা উদযাপন পরিষদের স্বেচ্ছাসেবীরা দায়িত্ব পালন করবে। এছাড়াও ঝুঁকিপুর্ন হিসেবে চিহ্নিত পুজা মন্ডপগুলোতে বাড়তি নিরাপত্তা হিসেবে র‌্যাব ও পুলিশ সদস্যরা নিয়মিত টহলে থাকবে। সিসি ক্যামেরাও বসানো হবে। এবারের উৎসব আরো আনন্দঘন করতে পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে সার্বিক সহযোগিতা ও নিরাপত্তা জোরদার করা হচ্ছে। এদিকে বগুড়া শহরের মালতিনগরসহ কয়েকটি মন্দির ঘুরে দেখা গেছে, ডেকোরশনের কাজ শুরু হয়েছে। মন্দিরে প্রেবেশের রাস্তাও তৈরী করা হচ্ছে। ভিন্ন ভিন্ন কারুকাজে বিরাট গেট তৈরী করা হচ্ছে। বাঁশ, কাঠ কাপড় দিয়ে মন্দির- মন্ডপের শোভা বাড়ানো হচ্ছে। 

উপরে