প্রকাশিত : ১৫ অক্টোবর, ২০১৯ ২২:১৩

দক্ষিণ কোরিয়াগামী শত শত বেকার তরুণের স্বপ্ন পূরণ করছে বগুড়া বিকেএলটিসি

ষ্টাফ রিপোর্টার
দক্ষিণ কোরিয়াগামী শত শত বেকার তরুণের স্বপ্ন পূরণ করছে বগুড়া বিকেএলটিসি

সরকারিভাবে ৮০ হাজার টাকা খরচে দক্ষিণ কোরিয়ায় চাকুরি বেতন প্রায় লাখ টাকা। জীবন বদলানোর এই সুযোগটি নিতে সারাদেশের লাখো বেকার তরুণ প্রতিবছর চেষ্টা করছেন কোরিয়া যাওয়ার প্রতিযোগিতায় পাশ করতে। ভাষা শিক্ষা, সিবিটি পরীক্ষা, দক্ষতা পরীক্ষাসহ নানা পরীক্ষায় নিজের যোগ্যতা প্রমাণের মধ্য দিয়ে প্রতিবছর সারাদেশ থেকে উন্নত দেশ দক্ষিণ কোরিয়ায় পাড়ি জমায় অনেকে যেখানে উত্তরবঙ্গ থেকে যাওয়া কর্মীর সংখ্যাই উল্লেখযোগ্য।

আর এক্ষেত্রে সারাদেশে দক্ষিণ কোরিয়াগামী এই কর্মীদের সহায়তায় উল্লেখযোগ্য ভাষা শিক্ষা কেন্দ্র হিসেবে সারাদেশে রয়েছে ৫ টি প্রতিষ্ঠান যার মধ্যে উত্তরবঙ্গের বগুড়া সরকারি আজিজুল হক কলেজের সামনে কামারগাড়ি এলাকায় অবস্থিত অন্যতম প্রতিষ্ঠান বগুড়া কোরিয়ান ভাষা প্রশিক্ষন কেন্দ্র (বিকেএলটিসি)। ২০০৮ সাল থেকে প্রাথমিকভাবে এবং ২০১০ সাল থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করা বগুড়া বিকেএলটিসি থেকে শত শত শিক্ষার্থী বর্তমানে কোরিয়াতে বিভিন্ন কোম্পানীতে চাকরি করছে। দরিদ্র পরিবার থেকে শূণ্য হাতে গিয়ে আজ অনেকে প্রবাসী শ্রমে গড়ে তুলেছে নিজেদের বাড়ি, কিনেছেন গাড়ি আর নতুনভাবে জীবনের অবলম্বন তৈরি করেছেন অনেকে। বগুড়া, নওগাঁ, জয়পুরহাট, সিরাজগঞ্জ, জামালপুর, গাইবান্ধাসহ উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলা শহর ছাড়াও এখানে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা শিক্ষার্থীরা ৪ থেকে ৬ মাসের নিয়মিত প্রশিক্ষন এবং কোরিয়া না যাওয়া পর্যন্ত নিজেদেরকে প্রস্তুত করছেন বর্তমানে উক্ত কেন্দ্রে নিয়মিত পড়ছেন প্রায় ২ শতাধিক শিক্ষার্থী। শুধু কোরিয়ান ভাষায় নয় আগামীতে বাংলাদেশ থেকে যে বিশাল সংখ্যক কর্মী জাপান নেবে তার জন্যে এখানে বর্তমানে কোরিয়ান ভাষার সাথে সাথে চলছে জাপানি ভাষার প্রশিক্ষণও।

কথা হয়েছিল উক্ত প্রতিষ্ঠান থেকে ভাষা প্রশিক্ষণ নিয়ে কোরিয়া যাওয়া এক তরুণ সাব্বির হাসান শিমুলের সাথে। গোবিন্দগঞ্জের শ্রীমুখ এলাকার দরিদ্র পরিবার থেকে উঠে আসা সাব্বির ৫ বছর যাবত দক্ষিণ কোরিয়ায় প্যাকেজিং কোম্পানীতে চাকরি করে আজ সে সাবলম্বী। বর্তমানে কোরিয়াতে সাব্বির মাসিক বেতন পাচ্ছে প্রায় ১ লক্ষ ৮০ হাজার টাকা যার মাধ্যমে সাব্বির গড়েছেন নিজের দোতলা বাড়ি। সাব্বিরের মতো সাবগ্রাম বুজরুগবাড়িয়া এলাকার দরিদ্র চা বিক্রেতার ছেলে আপেল শেখও উক্ত বিকেএলটিসি’র মাধ্যমে কোরিয়া গিয়ে আজ সে নিজের জায়গা কিনেছে শুরু করেছেন বাড়ির কাজ। ৩য় শ্রেণী পাশ হয়েও দক্ষিণ কোরিয়াতে মাত্র ৩ বছর ধরে প্লাস্টিক কোম্পানিতে কাজ করে আজ সে ভাগ্য বদলেছে তার নিজের এবং তার পরিবারের। স্বল্প টাকায় বেকারত্ব দূরকরণের মাধ্যমে যে বিদেশে কর্মের মাধ্যমে নিজের ভাগ্য বদলানো যায় সেই স্বপ্ন দেখেছিল বিকেএলটিসি বগুড়ার পরিচালক শাহীনুর রহমান শাহীন আজ থেকে প্রায় ১ যুগ আগে। দক্ষিণ কোরিয়া ফেরত প্রতিষ্ঠানটির এই পরিচালকের সাথে কথা বললে তিনি জানান, কোরিয়ায় যাওয়া শিক্ষার্থীদের সহযোগিতায় অনেক প্রতিবন্ধকতা উপেক্ষা করে দাঁড় হয়েছে এই প্রতিষ্ঠানটি।

শেষ বার দক্ষিণ কোরিয়ায় যে কর্মী নিয়োগের পরীক্ষা হয়েছে বোয়েসেলে সেখানে বিকেএলটিসি’র শিক্ষার্থী হিসেবে পরীক্ষা দিয়েছিল প্রায় ৭৮ জন আর দক্ষতার মাধ্যমে চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত হয়েছেন ৭১ জন যারা বর্তমানে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। প্রতিনিয়ত এইভাবে স্বপ্নপূরণের যাত্রায় ভূমিকা রাখতে পেরে আত্মতৃপ্ত শাহীনুর রহমান ভবিষ্যতে এভাবেই প্রবাসে দক্ষ কর্মী প্রেরণের লক্ষ্যে তাদের ভাষা শিক্ষায় ভূমিকা রাখার ইচ্ছা পোষণ করেন।

উপরে