প্রকাশিত : ১৬ অক্টোবর, ২০১৯ ২০:১৮

সুন্দরগঞ্জে পিআইও নুরুন্নবী সরকার সদ্বীপে স্ট্যান্ড রিলিজ

ক্বারী মো: আবু জায়েদ খান, সুন্দরগঞ্জ, গাইবান্ধা প্রতিনিধি :
সুন্দরগঞ্জে পিআইও নুরুন্নবী সরকার সদ্বীপে স্ট্যান্ড রিলিজ

ঘুষ-দুর্নীতি ও লুটপাটে আলোচিত গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) নুরুন্নবী সরকার অবশেষে স্ট্যান্ড রিলিজ হয়েছেন। গত ২৮ সেপ্টেম্বর দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর তাকে বদলির আদেশ দেয়। সেই আদেশে বলা হয়, আগামি ১৫ অক্টোবর অফিসের দায়িত্ব বুঝিয়ে দেয়ার শেষ দিন এবং ১৬ অক্টোবরের মধ্যে সদ্বীপ উপজেলায় যোগদান করতে হবে পিআইও নুরুন্নবীকে।

কিন্তু মঙ্গলবার (১৫ অক্টোবর) বিকেল পর্যন্ত দায়িত্ব বুঝে না দেয়ার কারণে আদেশ অনুযায়ী স্ট্যান্ড রিলিজ হয়েছেন পিআইও নুরুন্নবী সরকার। টানা ৫ বছরের বেশি সময় ধরে সুন্দরগঞ্জ উপজেলায় দায়িত্ব পালন করে ঘুষ-দুর্নীতি ও লুটপাট, মামলা এবং হুমকি-ধামকিসহ নানা ঘটনায় বেশ আলোচিত হয়ে উঠেন পিআইও নুরুন্নবী সরকার। মঙ্গলবার (১৫ অক্টোবর) বিকেল ৫টার দিকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন জেলা ত্রাণ ও পূর্ণবাসন কর্মকর্তা আলহাজ ইদ্রিস আলী। তিনি মুঠফোনে বলেন, ‘বদলির আদেশ অনুযায়ী পিআইও নুরুন্নবীকে চিঠি দিয়ে দায়িত্ব বুঝে দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়। কিন্তু শেষ দিন মঙ্গলবার বিকেল পর্যন্ত তিনি দায়িত্ব বুঝে দেননি।

এমনকি তিনি অফিসেও আসেননি। এতে আদেশ অনুযায়ী তিনি স্ট্যান্ড রিলিজ বলে গণ্য হবেন। ১৬ অক্টোবর তার স্বদ্বীপে যোগদানের কথা। ১৬ অক্টোম্বর দুপুরের পর তার স্ট্যান্ড রিলিজের বিষয়টি সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তরকে অবগত করা হবে। এছাড়া সুন্দরগঞ্জ উপজেলায় নতুন পিআইও মোশাররফ হোসেন যোগদান করেছেন। ১৬ অক্টোবরের পর থেকে তিনি অধিদপ্তরের আদেশ অনুযায়ী অফিসের সকল দায়িত্ব পালন করবেন’। এ বিষয়ে গাইবান্ধা জেলা প্রশাসক আবদুল মতিন বলেন, পিআইও নুরুন্নবী সরকারের বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তরের অবগত করা হয়েছে।

এছাড়া তার বিরুদ্ধে সমস্ত অভিযোগ ও তদন্ত প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে শীঘ্রই ব্যবস্থা নেয়া হবে। একই সঙ্গে তার আস্থাভাজন আবদুল হালিমসহ জড়িতদের বিরুদ্ধেও আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে’। তবে পিআইও নুরুন্নবী সরকারকে শুধু বদলির আদেশ এবং তাকে অন্য কোন শাস্তি না দিয়ে স্ট্যান্ড রিলিজ হওয়ায় ক্ষোভ ও অসন্তোষ বিরাজ করছে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক নেতা ও সচেতন মহলের মধ্যে। তার বিরুদ্ধে সমস্ত অভিযোগ সুষ্ঠ তদন্ত করে দৃষ্টান্ত শাস্তির দাবি জানিয়েছেন তারা। এরআগে, পিআইও নুরুন্নবী সরকারের বিরুদ্ধে জুন ক্লেজিং এ কাজ না করে এবং ক্রটিপূর্ণ বিল-ভাউচার দাখিল করে হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তাকে হুমকি দেখিয়ে কয়েক কোটি টাকার বিল উত্তোলনের ঘটনা ঘটে।

এছাড়া তার বিরুদ্ধে গত ৫ বছরে নানা অনিয়ম, দুর্নীতি-লুটপাটের ঘটনা নিয়ে গত এক মাস একাধিক প্রতিবেদন প্রচার করে যমুনা টেলিভিশন। যমুনা টেলিভিশনের প্রতিবেদক জিল্লুর রহমান পলাশসহ স্থানীয় সাংবাদিক অভিযোগের বিষয়ে বক্তব্য নিতে গেলে অশোভনীয় আচরন এবং নানা দাম্ভিকতা দেখিয়ে প্রকাশ্যে ধুমপান করেন পিআইও নুরুন্নবী। পরে এ নিয়ে একটি ভিডিও চিত্র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন অনলাইন নিউজ পোর্টালে ভাইরাল হয়। এতে তোলপাড় সৃষ্টি হয় স্থানীয় প্রশাসন এবং সংশ্লিষ্ট দুর্যোগ অধিদপ্তরে।

একই সঙ্গে পিআইও নুরুন্নবীর পক্ষে ইউএনও সোলেমান আলীর ‘সাফাই’ গাওয়ার প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতেই গত ৫ অক্টোবর জেলা প্রশাসন দুই সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। তবে লোক দেখানো তদন্ত কমিটি তড়িঘড়ি করে একদিনেই তদন্ত শেষ করেন। তদন্তে গুরুত্বপূর্ণ অনেক অভিযোগ এগিয়ে মনগড়া প্রতিবেদন দাখিল করেন তদন্ত কমিটি। দুই সদস্যের তদন্ত কমিটিতে অভিযুক্ত পিআইও নুরুন্নবী সরকারের খোদ জেলা ত্রাণ ও পূর্ণবাসন কর্মকর্তা আলহাজ ইদ্রস আলী ছিলেন। এ কারণে পক্ষপাত মুলকভাবেই তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন তদন্ত কমিটি। এদিকে, সংবাদ প্রচারের পর থেকে পিআইও নুরুন্নবী বিভিন্ন কৌশলে যমুনা টেলিভিশনের প্রতিবেদক জিল্লুর রহমান পলাশসহ স্থানীয় সংবাদকর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অপপ্রচার চালিয়ে চাঁদাবাজির মামলা দায়ের হয়। ২০১৫ সালে সুন্দরগঞ্জ উপজেলায় যোগদান করেন পিআইও নুরুন্নবী।

এরপর থেকে নানা অনিয়ম-দুর্নীতি ও লুটপাটের ঘটনায় তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) চারটি ও ঘুষ গ্রহণের অভিযোগে একটি মামলা দায়ের হয়। এছাড়া অসংখ্য অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগের তদন্তে প্রমাণ পায় তদন্ত কমিটি। দৈনিক চাঁদনী বাজার, দৈনিক জনসংকেত, দৈনিক কালের কন্ঠ, দৈনিক নববিজয় তার বিরুদ্ধে একাধিকবার নিউজ প্রকাশ হয় কিন্তু অজ্ঞাত কারণে তার বিরুদ্ধে আজও কোন ব্যবস্থাই হয়নি।

 

উপরে