প্রকাশিত : ৩০ জানুয়ারী, ২০২০ ০১:১৬

চারা উৎপাদন ও রোপন বাণিজ্যিকীকরণে পল্লী উন্নয়ন একাডেমী, বগুড়ার পানি সাশ্রয়ী প্রল্পের সাফল্য।

নাজমুস সাকিব আপেলঃ
চারা উৎপাদন ও রোপন বাণিজ্যিকীকরণে পল্লী উন্নয়ন একাডেমী, বগুড়ার পানি সাশ্রয়ী প্রল্পের সাফল্য।

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের অর্থায়নে সেচ ও পানি ব্যবস্থাপনা কেন্দ্র, পল্লী উন্নয়ন একাডেমী (আরডিএ), বগুড়া কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন “পানি সাশ্রয়ী আধুনিক প্রযুক্তির সম্প্রসারণ ও বিস্তার এবং ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি” শীর্ষক প্রায়োগীক গবেষণা প্রকল্পটি বর্তমানে বাংলাদেশের ৮টি বিভাগের ৪০ টি জেলার ৬৩টি উপজেলার অর্ন্তগত ২০০টি সাইটে (উপ-প্রকল্প এলাকা) এবং ০৭টি মাদার ট্রায়েল এলাকায় এ ডাবল ডি, রেইজড বেড, এসআরআই ও ট্রাইকো-কম্পোস্ট প্রযুক্তি বাস্তবায়িত হচ্ছে। বাংলাদেশে এই প্রথম রাইস ট্রান্সপ্লান্টারের মাধ্যমে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে কার্যক্রমটি পরিচালিত হচ্ছে। 

পানি সাশ্রয়ী প্রকল্পের আওতায় অটো রাইস প্লান্ট প্রোডাকশন লাইন মেশিন দিয়ে যান্ত্রিকভাবে রোপন উপযোগী চারা তৈরী করে উপকারভোগীদের মাঝে প্রদর্শনী আকারে দেখানো হচ্ছে এবং প্রত্যেক গ্রুপ বাস্তবায়ন করছে। গত ১৪/১২/১৯ ইং তারিখে পল্লী উন্নয়ন একাডেমী এবং এগ্রি প্লাস লিমিটেড এর যৌথ উদ্যোগে দিনাজপুর জেলার বিরল উপজেলার পুরিয়া গ্রামে অটো রাইস ট্রান্সপ্লান্টার প্রডাকশন লাইন মেশিন দিয়ে ক্রমান্বয়ে ৩৬০ বিঘা জমির জন্য সিডলিং ট্রে  তৈরী করা হয়। বাংলাদেশে এটি এ যাবতকালের সবচেয়ে বড় প্রদর্শনী যা, বাংলাদেশ সরকার ধারণাটি গ্রহণ করতে পারছে। এইভাবে চারা তৈরী ও যান্ত্রিক ভাবে রোপন করলে প্রচলিত পদ্ধতির চেয়ে খরচ অর্ধেকে নেমে আসবে অর্থাৎ কৃষকের উৎপাদন খরচ কমবে এবং লাভবান বেশী হবে। পক্ষান্তরে ফলন প্রচলিত পদ্ধতির চেয়ে ১৫-১৭% বেশি হবে এবং এটি মাটি স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে ৩০% বৃদ্ধি করা সম্ভব। 

২৮ জানুয়ারি ২০২০ অটো রাইস প্লান্ট প্রডাকশন লাইন মেশিন দিয়ে তৈরীকৃত চারা রাইস ট্রান্সপ্লান্টার মেশিন দিয়ে রোপন করার উদ্বোধন করেন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ও পল্লী উন্নয়ন একাডেমী, বগুড়া’র মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) জনাব মোঃ আমিনুল ইসলাম। সভাপতিত্ব করেন কৃষিবিদ মোঃ তৌহিদুল ইকবাল, উপ-পরিচালক, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, দিনাজপুর। এছাড়াও বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কৃষিবিদ মোঃ আব্দুল ওয়াজেদ, অতিরিক্ত পরিচালক, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর এবং কৃষিবিদ মোঃ কবিরুল হাসান, যুগ্ম-পরিচালক (কন্টাক্ট গ্রোয়ার), বিএডিসি, বগুড়া সার্কেল। 

পানি সাশ্রয়ী প্রযুক্তি সমুহ এবং যান্ত্রিকীকরন বানিজ্যিকভাবে বাস্তবায়নে কিছু বেসরকারী প্রতিষ্ঠান/ব্যক্তি পানি সাশ্রয়ী প্রকল্পের প্রযুক্তি বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহন করেছেন। এ কাজে পানি সাশ্রয়ী প্রকল্প সার্বিক সহযোগিতা করে আসছে। বাণিজ্যিকীকরণের ক্ষেত্রে এ ধরণের উদাহরণ মধুপুর, কুড়িগ্রাম, বগুড়া, ধামরাই, সিলেটসহ অন্যান্য এলাকায় পানি সাশ্রয়ের পাশাপাশি কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে এবং সফলতার সাথে এগিয়ে যাচ্ছে তাছাড়া ব্যক্তিগত উদ্যোক্তা তৈরী হয়েছেন যারা নিজেরা যান্ত্রিকভাবে রোপন উপযোগী চারা তৈরী করছেন উদ্যোক্তাগণ কৃষকের জমিতে রাইস ট্রান্সপ্লান্টার যন্ত্রের সাহায্যে চারা রোপন করে দিচ্ছেন এতে করে কৃষকেরা সাশ্রয়ী মূল্যে জমিতে চারা রোপন করে অধিক ফসল উৎপাদন করছেন পক্ষান্তরে উদ্যোক্তারাও নতুন কর্মসংস্থানের মাধ্যমে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন। কৃষকেরা বলছেন প্রযুক্তিগুলি লাগসই এবং যুগপোযোগী  যা ব্যবহার করে শুধু অধিক ফলনই নয়, উৎপাদন খরচও অনেক কমেছে।

দেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে যেমন কৃষি জমি হ্রাস পাচ্ছে একই ভাবে গ্রাম অঞ্চলে শিক্ষার হার বৃদ্ধির ফলে বেকার শিক্ষিত যুবক শ্রম সাধ্য কৃষি কাজ ছেড়ে পরিবহন, শিল্প কারখানাসহ অন্যান্য পেশায় স্থানান্তর হওয়ায় কৃষি শ্রমিকের সংকট দিন দিন প্রকট হচ্ছে। সার্বিক এই প্রেক্ষাপটে কৃষির উৎপাদনশীলতা ধরে রাখতে এলাকায় বেকার যুবকদের কর্মসংস্থান বৃদ্ধিতে কৃষিকে যান্ত্রিক কৃষিতে রূপান্তরের সাফল্য সরকারের জন্য একটি অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত। প্রকল্পটির সফল বাস্তবায়নে সারাদেশে কম পানিতে অধিক ফসল উৎপাদন সম্ভব হবে এবং খামার যান্ত্রিকীকরণের ফলে উৎপাদন খরচ কমিয়ে কৃষকেরা আর্থিকভাবে অধিক লাভবান হতে পারবেন।

প্রকল্প পরিচালক জনাব আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন গত বোরো মৌসুমে প্রকল্প এলাকায় এডাব্লিউডি (অল্টারনেট ওয়েট এন্ড ড্রায়িং) অর্থাৎ পর্যায়ক্রমে ভিজানো এবং শুকানো পদ্ধতিতে জমিতে সেচ প্রদান,  রেইজড বেড /বেড-নালা পদ্ধতিতে চাষাবাদ, এবং এসআরআই (সিস্টেম অফ রাইচ ইন্টেনশিফিকেশন) পানি সাশ্রয়ী এই আধুনিক প্রযুক্তিগুলি ব্যবহার করাই প্রচলিত পদ্ধতির চেয়ে ফলন বৃদ্ধি হয়েছে গড়ে ২০% এবং পানি সাশ্রয় হয়েছে গড়ে ২৫-৩০% । পানি সাশ্রয়ী এই আধুনিক প্রযুক্তগুলি সমস্ত বাংলাদেশের আবাদী জমিতে বাস্তবায়িত হলে দেশ ও জাতি আর্থিকভাবে অনেক এগিয়ে যাবে।

উপরে