প্রকাশিত : ১৫ মার্চ, ২০২০ ০৩:৩০

নারী কর্ম সংস্থানের নবদিগন্ত কাউনিয়ার নারীদের কাঁরু খঁচিত টুপি রপ্তানি হচ্ছে ভিন দেশে

সারওয়ার আলম মুকুল, কাউনিয়া (রংপুর) প্রতিনিধি
নারী কর্ম সংস্থানের নবদিগন্ত
কাউনিয়ার নারীদের কাঁরু খঁচিত টুপি রপ্তানি হচ্ছে ভিন দেশে

রংপুরের কাউনিয়া উপজেলায় নরী কর্ম সংস্থানের নবদিগন্তের সুচনা হয়েছে। গ্রামীন নারীদের কাঁরু খঁচিত টুপি রপ্তানী হচ্ছে মধ্যেপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশে। সরেজমিনে উপজেলার চরাঞ্চলসহ বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে দেখাগেছে টুপি শিল্পের নীরব বিপ্লব ঘটেছে। বেকার ও গৃহিনীদের হাতের তৈরি সুঁই-সুতোয় আলপনা তোলা কাঁরুকাজ খঁচিত টুপি এখন দেশের চাহিদা মিটিয়ে ওমান, সৌদি আরব, কাতার, জাপানসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে রফতানি হচ্ছে।

এতে করে গ্রামীন নারীদের যেমন কর্মস্থান হয়েছে অন্যদিকে সহায় হাজার হাজার নারী অর্থনৈতিকভাবে সাবলম্বী হচ্ছে। গ্রামগঞ্জের নারীরা গৃহস্থালীর কাজ করার পর অবসর সময় শুয়ে বসেই কাটাতেন। অনেকেই সেলাই-ফোঁড়াইয়ের কাজ করলেও সেগুলোতে অর্থ উপার্জনের তেমন সুযোগ ছিল না। টুপি শিল্প তাদের সময় বদলে দিয়েছে। যখন থেকে হাতে টুপিতে নিপুন কারুকাজের সুই-সুঁতার সরঞ্জাম উঠেছে, তখন থেকেই তাদের দিন বদলানো শুরু হয়েছে। এখন তাদের আর শুয়ে-বসে গল্প গুজবে সময় কাটানোর সময় নেই।

হাজারো নারী সাবলম্বী হওয়ার পাশাপাশি পরিবারের বাড়তি উপার্জনের জন্য এখন হাতে তুলে নিয়েছেন টুপি তৈরীর কাজ। সুঁই-সুতোয় তারা সারা বছর লাখ লাখ টুপিতে নানা রঙ্গের সুতোয় আলপনা তুলছেন। আর সেই টুপির সুনাম ছড়িয়ে পড়ছে মধ্যপ্রাচ্যেও সহ বিশ্বের বিভিন্ন মুসলিম  প্রধান দেশে। উপজেলার শাহবাজ, ঢুষমারা, হয়বৎখাঁ, নাজিরদহ, পল্ল¬ীমারী, গদাই, গোপীডাঙ্গা, প্রাননাথসহ ৩০ চরাঞ্চলসহ প্রায় প্রতিটি গ্রামে এখন বছর জুড়ে নারীদের কর্মযজ্ঞ চলছে। কারো কোনো ফুরসত নেই। কখনো দাঁড়িয়ে কখনো বসে সারাদিন ব্যস্ত টুপি তৈরিতে।

কথা হয়, সাহাবাজ গ্রামে টুপি তৈরীর কারিগর চার সন্তানের জননী স্বপ্না বেগম, গদাই গ্রামের কোহিনুর, প্রাননাথচরের আলেমা বেগম এর সাথে। তারা জানান বসতভিটা ছাড়া অর্থ সম্পদ বলতে তাদের কিছুই ছিলনা। উপার্জক্ষম দিনমজুর স্বামীর আয়ে তাদের সংসার চলত খেয়ে নাখেয়ে। অভাব ছিল নিত্য সঙ্গি। কাজ সন্ধান করতে গিয়ে খুঁজে পান টুপিতে হাঁসু ও গুটির সেলাইয়ের কাজ। টুপির কাজ করে যা আয় হয় তা দিয়ে সংসার এখন ভালোই চলছে। তারা জানান তাদের মতো অনেকই এখন এই কাজ করে বার্তি আয় করছে। মধ্যপ্রাচ্যের টুপির বাজার দখল করেছে কাউনিয়ার টুপি শিল্পের নারীরা। শাহবাজ গ্রামের হাফেজ আবদুল আউয়াল ২০০৩ সালে মাত্র ১৫ জন নারী নিয়ে গড়ে তোলেন এমএমসি নামের টুপির কারখানা। বর্তমানে এমএমসি কারখানাসহ আরো ৩টি টুপির কারখানা রয়েছে।

উপজেলার অর্ধশতাধিক গ্রামের প্রায় ২৫ হাজার নারী টুপি তৈরীর কাজ করে খুঁজে পেয়েছেন সুখের ঠিকানা। কারখানার কর্মী শাহাজাদি, সবুরা, কহিনুর, রোজিনা, সালমা, লাভলী, মর্জিনা, জানালেন, দিনে তারা ৮-১০টি টুপি সেলাই করতে পারেন। এতে আয় হয় ২৬০ টাকা থেকে ৩০০ টাকা। শান্তি এটাই, সংসারে দারিদ্রতা পরাজিত করে এখন তারা সংসারে অর্থের জোগান দিতে পারেন। কারখানার মালিক আঃ আউয়াল জানান, ওমানে পাকিস্তানি টুপির চাহিদা বেশি। এরপরই বাংলাদেশের স্থান। প্রথম দিকে তৈরি টুপি দেশীয় পাইকারদের মাধ্যমে তিনি মধ্যপ্রাচ্যে রপ্তানি করতেন।

২০০৫ সাল থেকে নিজেই বিদেশি ক্রেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে রপ্তানি করছেন। এক পরিসংখ্যানে জানা গেছে, কাউনিয়ায় ছোটবড় প্রায় ১৫ টি কারখানা আছে। এর অধীনে প্রায় ২৫ হাজার নারী টুপি সেলাইয়ের কাজ জড়িত। এর মাধ্যমে তাদের সংসারে সামান্য হলেও উন্নয়নের ঢেউ লেগেছে। হারাগাছ ইউপি চেয়ারম্যান রকিবুল হাসান পলাশ জানান, উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের অনেক নারী অবসর সময় বাড়ীতে বসে টুপিতে কারুকাজ করে এখন সাবলম্বী হয়ে উঠেছে। 

 

উপরে