প্রকাশিত : ২৭ মার্চ, ২০২০ ১৯:২৩

কাউনিয়ায় অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন অন্ধত্ব হার মানেতে পারেনি আলম মিয়া কে

সারওয়ার আলম মুকুল.কাউনিয়া (রংপুর) প্রতিনিধি
কাউনিয়ায় অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন
অন্ধত্ব হার মানেতে পারেনি আলম মিয়া কে

‘মুসলিম ধর্মে আছে নবীজির শিক্ষা করোনা ভিক্ষা’, সমাজে প্রচলিত আছে ভিক্ষাবৃত্তি সবচেয়ে নিকৃষ্টতম কাজ। বর্তমান সরকার ভিক্ষাবৃত্তিকে নিরুতসাহিত করতে ভিক্ষুক মুক্ত উপজেলা গড়তে নানামুখি পদক্ষেপ প্রহন করছে। নবীজির শিক্ষা করোনা ভিক্ষা এই আদর্শকে পুজি করে জন্মান্ধ হয়েও কাউনিয়া উপজেলার নিজপাড়া গ্রামের আলম মিয়া সংসার চালায় হকারী ব্যবসা করে।
সরেজমিনে গিয়ে কথা হয় আলমের সাথে. জীবন থেমে থাকবার নয়, হোক সে অন্ধ বা বিকলাঙ্গ। জীবন চলে জীবনের গতিতে। সকাল থেকে রাত, সব চাহিদা দমন করা গেলেও পেটের ক্ষুধা দমন করা যায় না তাই জীবন যুদ্ধে আমরা সবাই যোদ্ধা। এমনি এক জীবন যোদ্ধা রংপুরের কাউনিয়া উপজেলার নিজপাড়া গ্রামের মৃত ইদ্রিস আলীর পুত্র জন্মান্ধ আলম মিয়া (৩৫)। জন্মের পর থেকেই চোখে না দেখায় গরীব পরিবারে বোঝা হয়ে দাঁড়ায় তিনি। এক সময় বিয়েও করেন, দু সন্তানের জন্মের পর স্ত্রী তাকে ছেড়ে চলে যায়। ইতোমধ্যে জীবনের একমাত্র ভরসা বাবাও মারা যায়। অসহায় হয়ে ভিক্ষা করেন আলম মিয়া কিন্ত ভিক্ষা নিতে তার ভালো লাগে না তাই কিছু টাকা সঞ্চয় করে শুরু করেন ব্যবসা। হ্যা তার পেশা হাকরী হলেও তিনি ওটাকে ব্যবসা হিসেবেই দাবী করেন। ২০ বছর ধরে প্রতিদিন সকাল ৬ টায় একটি ভ্যানে করে কাউনিয়া রেল জংশন স্টেশনে আসেন তিনি। তারপর স্টেশনে আসা-যাওয়া ২৩টি ট্রেনের বগিতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আয়না, চিরুনী, রুমাল, ব্রাশ, মানিব্যাগ, ছোটো খেলনা সেট, বাঁশী, হাতপাখা, চাবির রিংসহ নানা পণ্য তার শরীরে ঝুলিয়ে বিক্রি করেন। আলম মিয়া জানান তাকে অন্ধ দেখে সবাই তার কাছে কিছুনা কিছু কিনে থাকেন, তিনি গর্বের সাথে বলেন এখন আমি ভিক্ষা করি না, আমি ব্যবসা করেই হালাল পথে খাই, আলম মিয়া জানান তার দুই ছেলেকে তিনি স্কুলে পড়ান, তার ৪র্থ ও ৮ম শ্রেণীতে পড়ে। তিনি সমাজে তার মতো অন্ধ যারা আছেন তাদেরকে ভিক্ষা ছেড়ে কর্মের পথ ধরতে অনুরোধ জানান। সেই সাথে অন্ধদের জন্য সুদমুক্ত ঋণ সুবিধার দেয়ের দাবী জানান। নিজ পাড়া এলাকার জহির রায়হান জানান আলম মিয়া অন্ধ হলেও সৎ পথে চলার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।

দৈনিক চাঁদনী বাজার/সাজ্জাদ হোসাইন

উপরে