জলঢাকায় ধর্ষিত ছাত্রী অন্তঃসত্তা, অতঃপর টাকা দিয়ে ঘটনা ধামাচাপার চেষ্টা
![জলঢাকায় ধর্ষিত ছাত্রী অন্তঃসত্তা, অতঃপর টাকা দিয়ে ঘটনা ধামাচাপার চেষ্টা](./assets/news_images/2020/04/01/Nilphamari.jpg)
নীলফামারী জলঢাকা উপজেলার মীরগঞ্জ ইউনিয়নের ০৭নং ওয়ার্ডের কালকেওট গ্রামের হতদরিদ্র সাইফুল ইসলামের কন্যা সালমা আক্তার (১৫) নামে নবম শ্রেনির ছাত্রীকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ধর্ষন করেছে একই গ্রামের কলেজ পড়ুয়া ১৯ বছরের ছাত্র। মঙ্গলবার বিকেলে গোপন সূত্রে সরজমিনে গিয়ে জানা যায়, ঘটনাটি ১লক্ষ টাকা দিয়ে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছে ইউপি চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবির হুকুম আলী। চেয়ারম্যানের নির্দেশে এ ঘটনার সমাধান স্থানীয়ভাবে সালিশ করার কথা থাকলেও তা মানছে না ধর্ষিতা ও তার পরিবার । নাম না বলা সর্তে স্থানীয় লোকজন বলেন, ধর্ষকের পরিবার প্রভাবশালী হওয়ায় মোটা অর্থ হাতিয়ে নিয়ে, ১লক্ষ টাকা ধর্ষিতার জন্য নিজের পকেটে রেখে মীমাংসার চাপ দিচ্ছেন ইউপি চেয়ারম্যান ।
এদিকে বিজ্ঞ আদালত ছাড়া, ধর্ষনের মতো ঘটনা স্থানীয় ভাবে মীমাংসা করতে কেউ পারেনা বলে জানান পুলিশ। তাছাড়া, মীরগঞ্জ পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রে এঘটনার কিছুই জানে না। আর জানবেই বা কি করে, ধর্ষিতার পরিবার হতদরিদ্র ও অসহায়। অভিযোগ করতে চাইলে স্থানীয় মাতব্বররা বিভিন্ন হুমকি দিয়ে থাকে। গরীবের বিচার নেই বলে এলাকাবাসী জানায়। এদিকে ধর্ষিতার অভিযোগ, এক বছর যাবত প্রতিবেশী হাবীবের ছেলে জয়ের সাথে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে । সেই থেকে তাকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে শারীরিক মেলামেশা করে, এতে পেকনেট হয় ভুক্তভোগী সালমা । তার পেটে দুই মাসের বাচ্চা আছে বলে সালমা ও তার পরিবারের লোকজন জানান। এঘটনা জয়কে জানালে সে বাচ্চা নষ্ট করতে বলে এবং এড়িয়ে চলে, আর ভয়ভীতি দেখায়।
ভুক্তভোগী ছাত্রী প্রতিবেদকের ক্যামেরায় বলে, আমি কয়েকদিন আগে ছেলের বাড়িতে যাই। তার বাবা-মাকে সব কথা খুলে বলি। ছেলেকে নয় ছেলের বাবা আমাকে বিয়ে করবে বলে, নানান ধরনের গালিগালাজ করে ঘর থেকে বের করে দেয়। এলাকার লোকজন সমাধানের কথা বলে আমাকে নিয়ে আসে। এখন সমাধান নয় ছলচাতুরী করছে তারা। আমি টাকা চাইনা, আমার পেটের বাচ্চার বাবার পরিচয় চাই। ভুক্তভোগী ছাত্রীর মা মর্জিনা খাতুন কান্নাস্বরে বলেন, গরীবের বিচার নাই। বিষয়টি এলাকায় জানাজানি হলে স্থানীয় লোকজন তা সমাধানের জন্য ইউপি চেয়ারম্যানকে অবহিত করেন। পরে চেয়ারম্যান স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গকে বিষয়টি দ্রুত সমাধানের নির্দেশ দেন। এ নিয়ে গত ২৭ মার্চ শুক্রবার রাতে ভুক্তভোগী ও ধর্ষকের পরিবারকে নিয়ে স্থানীয় পাঠানপাড়া বাজারে সালিশ বসে। জনি হোসেন জয় কালকেওট চৌধুরীর হাটের বাসিন্দা হাবিবুর রহমান ওরফে সুদারু হাবীবের ছেলে। তাদের বাড়িতে গেলে কাউকে পাওয়া যায়নি।
স্থানীয়দের অভিযোগ, ধর্ষককে বাঁচাতে স্থানীয় প্রভাবশালী কয়েকজন তার পক্ষ নেন। তারা অভিযুক্ত ধর্ষকের পরিবারের কাছ থেকে জরিমানা বাবদ এক লাখ টাকা আদায় করে ইউপি চেয়ারম্যানের কাছে জমা দেন। কিন্তু, সেই টাকা আর অন্তঃসত্তা ছাত্রীটির পরিবারকে দেওয়া হয়নি। এলাকার প্রভাবশালী সালিশদার ইউপি চেয়ারম্যান হুকুম আলীকে ফোনে সালিশের বিষয় সাক্ষাতে কথা বলতে চাইলে তিনি ভদ্র ভাষায় বলেন, টাকা কামাই করিবার জায়গা নাই তোমার, তোমার কাম কাজ নাই, কোন্টে কার মেয়ে ধর্ষন হইছে,কার মেয়ে পেকনেট হইছে এইলা খবর নিয়া ব্যারান। মীরগঞ্জ পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের কর্মরত ইন্সপেক্টর তদন্ত ওসি আব্দুর রহিম বলেন, এ ঘটনায় আমার কাছে এখনো কোনো অভিযোগ আসেনি। তবে বিষয়টি যেহেতু শুনেছি, সেহেতু অভিযোগ পেলে অভিযুক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) নারী কেলেংকারী ঘটনা কোনভাবেই মীমাংসা যোগ্য নহে। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবুল বাশার মোহাম্মদ আতিকুর রহমান মুঠো ফোনে বলেন, এধরনের ঘটনা আদালত ছাড়া, স্থানীয়ভাবে কেউ সমাধান দিতে পারেনা।
দৈনিক চাঁদনী বাজার/সাজ্জাদ হোসাইন