রাজশাহীর গাভী খামারীরা দুধ নিয়ে বিপাকে,নায্যমূল্যে বিক্রয় হচ্ছেনা দুধ
বর্তমানে করোনা ভাইরাস আতঙ্কে যখন সারা দেশে অচলাবস্থা বিরাজ করছে। দিন এনে দিন খাওয়া মানুষগুলো পড়েছেন চরম দূর্ভোগে। নিন্ম আয়ের মানুষগুলোর আয়ের মূল উৎস যখন বন্ধ হয়ে গিয়েছে তখন পরিবার চালাতেও হিমসিম খেতে হচ্ছে তাদের। এদেরই অন্তর্ভূক্ত রাজশাহীর বিভিন্ন এলাকার গাভী খামারীরা। যাদের মূলত গাভীর দুধ বিক্রি করে গাভীর খাদ্য ও নিজের সংসার চলে তাদের অবস্থা করুনতর হয়ে উঠেছে।
নগরীর বসুয়া, বায়াসহ বিভিন্ন এলাকার খামারীরা পড়েছেন চরম দু:শ্চিন্তায়। পরিবহন সংকট এবং অঘোষিত লকডাউনের কারণে করে বাসায় গিয়ে দুধ বিক্রি করতে এবং ডেইরি ফার্মগুলোর গাড়ি আসতে না পারায় গাভীর দুধ বাড়িতেই জমা পড়ে যাচ্ছে। সস্তা দাম চাইলেও প্রয়োজনের তুলনায় দুধ বিক্রি হচ্ছে অনেক কম। যাতে করে এই সকল গাভী খামারীদের জীবন এখন অনেকটাই দুর্বি:সহ হয়ে পড়েছে।
নগরীর উপকন্ঠ বসুয়া এলাকার গাভী পালক তারেক রহমান বলেন, তিনটা গাভী থেকে যা দুধ উৎপাদন হয় তাতে গাভীর খাবার আর পরিবার চলে যায়। ডেইরি ফার্মের গাড়ী এসে দুধ সংগ্রহ করে নিয়ে যেতো। কিন্তু করোনার এই অবস্থায় তারা এখন দুধ সংগ্রহ করতে আসতে না পারায় দুধ বাড়িতেই থেকে যাচ্ছে।
বায়া এলাকার আরেক গাভী পালক মোতালেব বলেন, আগে সাইকেলে করে দূরে গিয়ে বাসায় দুধ বিক্রি করা হতো। মিষ্টির দোকানগুলোতেও দুধ কিনতো। এখন লক ডাউনের কারণে কেউ দুধ নেয়না, কোথাও যেতে পারছিনা। গাভীকে কি খাওয়াবো আর নিজে কি খাবো সেই চিন্তাই করছি।
এদিকে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের বাইরের চিত্রও এর ব্যাতিক্রম নয়। নওগাঁ-রাজশাহী মহাসড়কের কোল ঘেষে, নওহাটা, মোহনপুর এবং সাবাইহাট দেলুয়াবাড়ি হাটে প্রতিনিয়ত গাভী খামারীরা বোতলজাত করে দুধ নিয়ে আসে বিক্রি করতে। কিন্তু গ্রাহক সংকটে তারা পড়েছেন বিপাকে। এসব খামারীদের বেশিরভাগ দুধ রাজশাহীর বিভিন্ন এলাকা এবং রাজশাহীর বাইরেও পাঠানো হয়। বর্তমানে তার সিংহভাগই পড়ে থাকছে বাড়িতেই। নস্টও হচ্ছে তুলনামূলক বেশি।
জানা যায়, প্রায় দশ-পনের গ্রামের দেড় শতাধীক গাভী খামারীরা দুধ নিয়ে দুপুরে দেলুয়াবাড়ি বাজারে আসেন। দুপুর ২ টায় কেনা বেচা শুরু হয় সেখানে। গত কয়েক সপ্তাহ থেকে ঘোষরা(দুধ সংগ্রহকারী) দুধ না কেনায় বিপাকে পড়েছেন চাষীরা। সস্তায় দুধ বিক্রি করে গরুর খাদ্যের টাকা জোটে না।
নওগাঁর মান্দা দেলুয়াবাড়ি বাজারে দুধ বিক্রি করতে আসা গাইহানা গ্রামের খামারি মাসুদ রানা বলেন,করোনার কারণে দুধ নিয়ে বিপদে আছি কেনার লোক নেই।
ঐ বাজারে দেখা মেলে দই তৈরির কারিগর আজাহার ইসলামের সাথে তিনি জানান,হোটেল বন্ধ থাকায় দয়ের চাহিদা নেই। আমরাও অলস সময় পার করছি।
এক মিষ্টি বিক্রেতা শ্রী কমল কুমার তাদের সমস্যার কথা তুলে ধরেন,দোকান করতে না পেরে খাবার প্রায় শেষ। দোকানের উপর নির্ভর আমার । ব্যবসা করতে না পারলে না খেয়ে মারা যাবো।
সাবাই হাটেও দুধ নিয়ে এসে বসে থাকতে দেখা যায় বাজারে দুধ নিয়ে আসা খামারীদের।এই বাজার থেকে দুধ কিনে পাঠানো হয় বিভিন্ন স্থানে।
গাভী চাষীদের সহযোগিতা করতে রাজশাহী শহরে বসবাসকারী নিম্ন ও মধ্য আয়ের মানুষের কাছে ন্যায্য মূল্েয দুধ সরবরাহের জন্য ব্যাক্তিগতভাবে উদ্েযাগ হাতে নিয়েছে স্থানীয় কিছু যুবক। ফেসবুক ও মুঠোফোনের মাধ্যমে অর্ডার নিয়ে দুধ পরিবহন করার উদ্যোগ তাদের ।ব্যাবসা টিকিয়ে রাখতে জেলা ও উপজেলা প্রশাসন সহ পুলিশ বাহিনীর সহযোগীতা চেয়েছেন খামার ও দই মিষ্টি ব্যবসায়ীরা।
দৈনিক চাঁদনী বাজার/সাজ্জাদ হোসাইন