প্রকাশিত : ২১ এপ্রিল, ২০২০ ২১:৩৩

করোনা দুর্যোগে বগুড়ায় নিজের রেশন অসহায় পরিবারকে দিলেন সদরের এসআই সোহেল রানা

সঞ্জু রায়:
করোনা দুর্যোগে বগুড়ায় নিজের রেশন অসহায় 
পরিবারকে দিলেন সদরের এসআই সোহেল রানা

বাংলাদেশে কোভিড-১৯ এর প্রাদুর্ভাব দেখা দেওয়ার সাথে সাথেই দেশব্যাপী ঘোষণা করা হয়েছিল সাধারণ ছুটি বা অঘোষিত লকডাউন। পরিস্থিতি খারাপের সাথে সাথেই বগুড়াসহ দেশের অধিকাংশ জেলাকেই ইতিমধ্যেই লক ডাউন বা অবরুদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। অনেকের কাছে এই বন্দিদশা পরিবারের সাথে উপভোগ্য হলেও নি¤œবিত্ত থেকে শুরু করে মধ্যবিত্ত পরিবারেরও অনেকে আজ নিজের এবং পরিবারের ক্ষুধা নিবারণের অভ্যন্তরীণ যুদ্ধে নেমেছে।

দেশের এই ক্রান্তিকালে মাঠে থেকে সাধারণ মানুষের জন্য কাজ করে যাচ্ছে এমন পেশাজীবি এবং নিবেদিত প্রাণের মাঝে পুলিশ সদস্যরা অন্যতম। আগের যেকোন সময়ের চেয়ে পুলিশ সদস্যদের এই দুর্যোগে ভূমিকা প্রশংসনীয় সর্বমহলে। সারাদেশের ন্যায় বগুড়াতেও জেলা পুলিশের সামগ্রিক ভূমিকা উল্লেখযোগ্য তবে সদরের কিছু কিছু পুলিশ সদস্যদের ব্যক্তিগত ত্যাগ এবং মানবিক কার্যক্রম সকলের হৃদয় ছুঁয়ে গেছে যার মাঝে বগুড়া সদর থানার এস.আই মো: সোহেল রানা অন্যতম।

দেশের এই পরিস্থিতিতে যখন অনেক বিত্তবান ব্যক্তিরাও নিজেদেরকে রেখেছে হোম কোয়ারেন্টাইনে তখন মাঠে থেকে অসহায়দের দু:খে পুলিশ সদস্যরা কেউ থাকতে পারছে না নিশ্চুপ। করোনা দুর্যোগে তাইতো নিজের রেশন ক্ষুধার্ত অসহায় পরিবারের মাঝে দিয়ে অনেক সামর্থ্যবান ব্যক্তিদেরকেও নিজের অজান্তেই না চাইতেই মানবিকতার বিশাল এক শিক্ষা দিয়েছেন সদর থানার মানবিক এসআই সোহেল রানা। জানা যায়, ২ দিন আগে সদরের শেখেরকোলা ইউনিয়নের তেলিহারা দক্ষিণপাড়া এলাকায় এক কর্মহীন অসহায় ব্যক্তি আবু জাফর (ছদ্মনাম) ক্ষুধার জ¦ালা আর সহ্য করতে না পেরে শেখেরকোলা ইউনিয়নের দায়িত্বপ্রাপ্ত এসআই এবং কর্মসূত্রে উক্ত এলাকার সকলের আপনজন সোহেল রানা কে খাদ্য সহযাগিতা চেয়ে ফোন দেন।

এসআই সোহেল তখন শহরে ডিউটি তে থাকায়  সে ব্যস্ততার মাঝেও তাকে জিজ্ঞেস করে সে জনপ্রতিনিধিদের কাছে সহযোগিতা চেয়েছেন কি না আকুল কন্ঠে আবু জাফর (ছদ্মনাম) এর পাশ থেকে কোন সদুত্তর না পেয়ে সোহেল রানা মানবিক চিন্তায় পরে যায়। কতই বা বেতন পান একজন এসআই সাথে সততার সাথে এই পেশায় চাকরি করা সোহেল রানা ব্যক্তিগত উদ্যোগে আর কতটুকুই বা সাহায্য করতে পারে তবুও এমন অবস্থায় ক্ষুধায় কাতর সেই কন্ঠ যেন তাকে তাড়া করে বেরাচ্ছিল তাইতো দ্রুততম সময়ে নিজের রেশন নিয়ে ছুটে গেছে সেই পরিবারের মাঝে।

রেশন হিসেবে ঐ কর্মহীন অসহায় মানুষের হাতে তুলে দিয়েছেন ৬ কেজি চাল, ডাল, ৫ কেজি আটা, তেল, চিনিসহ অন্যান্য রেশনের খাদ্যসামগ্রী যা হাতে পেয়ে আবেগে সেই অসহায় মানুষটি নিশ্চুপ হয়ে গিয়েছিল শুধু অন্তর থেকে দোয়া দিয়েছিল আর বলেছিল যে স্যার আপনার মতো পুলিশ থাকলে আমরা গরীবেরা না খেয়ে মরবো না। শুধু তাই নয় গত শনিবার রাতে প্রসব বেদনা ওঠা অন্তস্বত্তা নারীকে ডিউটিরত অবস্থায় দ্রুততম সময়ে পুলিশের গাড়ি করে হাসপাতালে পৌঁছে দিয়ে তাকে এবং নব্যজাত সন্তানকে বাঁচানোর মাধ্যমে ইতিমধ্যেই সারাদেশে প্রশংসনীয় হয়েছেন এই এসআই সোহেল রানা।

জানা যায়, গত শনিবার রাত আনুমানিক সাড়ে ১০ টায় ফাঁকা রাস্তায় কোন গাড়ি না পেয়ে শহরের সুলতানগঞ্জ পাড়ায় ইলেকট্রিক মিস্ত্রি আল-আমিন তার অন্তস্বত্তা স্ত্রী কে নিয়ে প্রসব বেদনা উঠার কারণে হাসপাতালের দিকে রওনা দেয় কিন্তু রাস্তায় কোন গাড়ি না থাকায় জীবন-মৃত্যুর মাঝামাঝি পরে যায় সেই নারী। তখন সেখানে রাতের নিয়মিত টহলে থাকা অবস্থায় এসআই সোহেলের নজরে আসে বিষয়টি। তখন সদরের ওসি এস.এম বদিউজ্জামানের তাৎক্ষণিক নির্দেশনায় ৮ কি.মি দূরে শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেলে পুলিশের গাড়িতেই তাকে পৌঁছে দেন এই এসআই। প্রথমে পুলিশকে ভয় পেয়ে শেষে পুলিশেই বিশাল স্বস্তি পেয়েছে সেই দম্পত্তি।

করোনা দুর্যোগে কাজ করা প্রসঙ্গে সুমিষ্টভাসি এবং সদালাপী সদর থানার এসআই সোহেল রানা বলেন, মানুষকে খাদ্য পৌঁছে দেওয়া পুলিশের কাজ নয় কিন্তু মানবিকতার কাছে সবকিছুই পরাজিত হয়। দেশের এই ক্রান্তিকালে সকলেরই উচিত যার যার অবস্থান থেকে সর্বোচ্চ দেশপ্রেম এবং মানবিকতার সাথে এগিয়ে আসা। বগুড়া জেলা পুলিশ সুপার আলী আশরাফ ভূঞা বিপিএম (বার) এর নেতৃত্বে এবং জেলা পুলিশের দুইরতœ সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সনাতন চক্রবর্তী এবং সদর থানার অফিসার ইনচার্জ এস.এম বদিউজ্জামানের দিকনির্দেশনায় দেশের এই ক্রান্তিকালকে জয়ের লক্ষ্যে শেষ নিশ^াস থাকা পর্যন্ত মাঠে থেকে পুলিশের একজন সদস্য হিসেবে লড়াই করে যাওয়ার প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন তিনি।

উল্লেখ্য, ২০১২ সালে আউট সাইড ক্যাডেট হিসেবে যোগদান করা এই মানবিক পুলিশ কর্মকর্তা ২০১৩ সাল থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত সুনামের সাথে এসআই হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন নওগাঁ জেলায়। পরে ২০১৭ সালের মাঝামাঝি যোগদান করে সোনাতলা থানায় এবং বর্তমানে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন সদর থানায়। চুরি, ডাকাতি, ক্লুলেস হত্যা মামলার রহস্য উন্মোচন সহ বিশেষভাবে আইটি এক্সপার্ট হিসেবে কর্মদক্ষ এই মানুষটি বর্তমানে করোনার বিরুদ্ধেও সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধিতে অনলাইন ভিত্তিক নানামুখী প্রচারণা এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে প্রশংসনীয়ভাবে কাজ করে যাচ্ছে বগুড়ায়।

দৈনিক চাঁদনী বাজার/সাজ্জাদ হোসাইন

উপরে