প্রকাশিত : ২৭ এপ্রিল, ২০২০ ২২:০৯

রাজশাহীতে চিনিকলের বকেয়া বেতনেসহ বিভিন্ন দাবিতে বিক্ষোভ

রাজশাহী প্রতিনিধি:
রাজশাহীতে চিনিকলের বকেয়া বেতনেসহ বিভিন্ন দাবিতে বিক্ষোভ

করোনা ভাইরাস সংকট মোকাবেলায় স্বাস্থ্য সুরক্ষা ছাড়া শ্রমিকদের কাজে যোগদানের আদেশ উপেক্ষা করে চার মাসের বেতন বকেয়াসহ বিভিন্ন দাবিতে রাজশাহী চিনিকলে (রাচিক) বিক্ষোভ করেছে শ্রমিক-কর্মচারিবৃন্দ। সোমবার সকালে চিনিকল প্রশাসনিক ভবনের সামনে এ বিক্ষোভ করেন তারা।

জানা যায়, করোনা পরিস্থিতির কারণে চলমান লকডাউন চলছে। এরই মধ্যে স্বাস্থ্য সুরক্ষা ছাড়াই রাজশাহী চিনিকল কর্তৃপক্ষ শ্রমিক কর্মচারিদের কাজে যোগদানের জন্য ডাকেন। কিন্তু এ ব্যাপারে শ্রমিক ইউনিয়নের নেতৃবৃন্দের সাথে কোন ধরণের আলোচনা করেননি। এতে শ্রমিক কর্মচারিরা কাজে যোগদান করবে, কি করবে না এ নিয়ে জটিলতা দেখা দেয়। এছাড়াও শ্রমিক ও কর্মচারিদের এই লকডাউনের মধ্যে মাস্ক, হ্যান্ডগ্লাভসসহ অন্যান্য স্বাস্থ্য সুরক্ষা সরঞ্জামাদি দেয়া হয়নি।

আবার চার মাসের বেতন বকেয়া রেখে এই করোনা দুর্যোগের মধ্যে কর্তৃপক্ষের আদেশ ‘মরার ওপর খাড়ার ঘা’য়ে রূপ নেই। এতে শ্রমিক কর্মচারিদের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করে। শেষে কাজে যোগ না দিয়ে বেতনের দাবিতে বিক্ষোভ শুরু করে শ্রমিক কর্মচারিগণ। ঘণ্টাব্যাপী এ বিক্ষোভে আখের পাওনা টাকার দাবিতে কিছু চাষিও যোগ দেন। পরে শ্রমিক কর্মচারি ইউনিয়নের নেতৃবৃন্দের হস্তক্ষেপে শ্রমিকরা বিক্ষোভ থেকে সরে আসেন। তবে বক্তারা, ত্রাণ বা সাহায্য নয়, নিম্ন-দরিদ্র শ্রমিক-কর্মচারীদের মাথার ঘাম পায়ে ফেলে অর্জিত শ্রমের মূল্য অবিলম্বে পরিশোধ করার দাবি জানান।

জানা যায়, চিনি শিল্পের সঙ্গে জড়িত প্রায় ৩০ লাখ লোক রয়েছেন। আখচাষি থেকে শুরু করে ব্যবসায়ী, কর্মরত শ্রমিক, কর্মচারী, কর্মকর্তাসহ এই শিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাই হতাশায় ভুগছেন। কারণ সময়মতো আখচাষিদের পাওনা পরিশোধ না করা, কর্মরতদের সময়মতো বেতন-ভাতা না পাওয়া, সময়মতো চিনি বাজার ধরে না রাখা।

বর্তমানে করোনার প্রাদুর্ভাবের কারণে দ্রব্যমূল্যে স্থিতিশীল না থাকায় একদিকে যেমন সমস্যা, অন্যদিকে দোকান থেকে দীর্ঘদিন বাকিতে নিত্যপণ্য কিনে মোটা অংকের দেনায় পড়েছেন শ্রমিকরা। এ অবস্থায় নিত্যপণ্যের বাজার করতে পারছেন না চিনিশিল্পে কর্মরতরা। চিনিকলে কর্মরত শ্রমিক-কর্মচারী ফেব্রুয়ারি, মার্চ ও এপ্রিল মাসের বেতন না পেয়ে আর্থিক সংকটে দিন অতিবাহিত করছেন। ঠিকমতো নিত্যপণ্যের বাজার না করতে পেরে মানবেতর জীবনযাপন করছেন তারা।

জানা যায়, রাজশাহী চিনিকলে ১৮ কোটি টাকা পাওনা আছে আখচাষিদের। চিনিকল শ্রমিক কর্মচারি ইউনিয়নের সভাপতি মজিবর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক মুনতাজ আলী বলেন, এমনিতেই বেতন-ভাতা না পেয়ে আর্থিক সংকটের কারণে শ্রমিক-কর্মচারীরা দীর্ঘদিন ধরে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। আবার কাজে যোগদানের বিষয়ে শ্রমিক কর্মচারি ইউনিয়নের নেতৃবৃন্দের সাথে আলোচনা করেনি কর্তৃপক্ষ। এতে উত্তেজনা বিরাজ করে এবং শ্রমিকরা বিক্ষোভ প্রদর্শন করে কাজে যোগ না করেই চলে যায়।

রাজশাহী চিনিকলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এসএম সেলিম বলেন, চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশনের সদর দপ্তর থেকে একটি চিঠি এসেছে। যেখানে সীমিত আকারে সামাজিক দুরত্ব বজায় রেখে অফিসের কাজের বিষয়ে বলা হয়েছে। মিল-কারখানার কিছু যন্ত্রপাতি আছে যেগুলো প্রতিনিয়ত যত্ন নিতে হয়। এমন কর্মচারিরা না আসলে যন্ত্র নষ্ট হবে। তবে তিনি স্বীকার করেন, কাজে যোগদানের কথা বললেই তাদেরকে করোনা সংকট মোকাবেলায় স্বাস্থ্য সুরক্ষা সরঞ্জামাদি দেয়া সম্ভব হয়নি।

তিনি আরো বলেন, মিলের কর্মরতরা বেতন না পাওয়ায় অনেক কষ্টে দিন যাপন করছেন। বেতন-ভাতার বিষয়ে সদর দফতরে জানানো হয়েছে। চিনি বিক্রি করে বেতনভাতা দেয়ার বিষয়ে বলা হয়েছে। চিনি বিক্রির টাকায় বেতন-ভাতা ও আখের মূল্য পরিশোধ করা হচ্ছে।

দৈনিক চাঁদনী বাজার/সাজ্জাদ হোসাইন

উপরে