আমরা র্যাবের লোক ,আপনার জন্য খাবার নিয়ে এসেছি!
![আমরা র্যাবের লোক ,আপনার জন্য খাবার নিয়ে এসেছি!](./assets/news_images/2020/05/24/CB20052405.jpg)
বর্তমান বাংলাদেশে অপরাধীদের কাছে সব চাইতে আতঙ্কের নাম র্যাব। অন্যদিকে গনপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের এলিট ফোর্স হিসেবে নিরপরাধ সাধারন মানুষের হৃদয়ে শান্তি ও আস্থার নাম। ফোর্সটি গঠনের পর থেকেই সুনামের সহিত কাজ করে আসছে। অপরাধীদের কাছে যেমন অমানবিক তেমনি সাধারণের কাছেও মানবিক। বৈশ্বিক এ দূর্যোগে সমাজের অসহায়দের কাছে রাতের আঁধারে বাড়ীর দরজায় কড়া নেরে তাদের জাগিয়ে জীবন রক্ষার জন্য খাদ্য সামগ্রী তুলে দেয়া মানবিকতারই নিদর্শণ।
‘মানবিকতার এ পথে গতকাল রাতে বাড়িতে কেউ আছেন? ভয় নাই দরজা খুলুন, আমরা র্যাবের লোক। আপনাদের জন্য খাবার নিয়ে এসেছি। এভাবে মধ্যরাতে খাবার ও প্রয়োজনীয় সামগ্রী নিয়ে মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে হাজির হচ্ছেন জয়পুরহাট র্যাব-৫ ক্যাম্প কমান্ডার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাইমেনুর রশিদ।
![](/assets/kcfinder/upload/images/CB20052405-1.jpg)
দেশের এই ক্রান্তিলগ্নে লকডাউনে স্থবির হয়ে পড়েছে দেশের সকল এলাকা। মানুষের কাজ নাই, খাবার নাই। অসহায় মানুষগুলো না খেয়ে দিন পার করছেন। এমন পরিস্থিতিতে জয়পুরহাট ও নওগাঁ জেলার বিভিন্ন এলাকার অসহায় মানুষের দ্বারে দ্বারে গিয়ে রাতের আঁধারে ঘরে ঘরে খাদ্য সহায়তা পৌঁছে দিচ্ছেন তিনি।
করোনা দুর্যোগের এমন পরিস্থিতিতে র্যাব কর্মকর্তা মোহাইমেনুর রশিদকে ভিন্নরূপে দেখছেন তার সহকর্মীরা। দিনভর নিজের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করে রাত হলেই খাদ্য সহায়তা নিয়ে বেড়িয়ে পড়ছেন তিনি। ছুটে চলেছেন মানুষের দুয়ারে দুয়ারে। তাদের দিয়ে আসছেন খাদ্য সহায়তা।
![](/assets/kcfinder/upload/images/CB20052405-2.jpg)
বৃহস্পতিবার (২১ মে) রাতে খাদ্য সহায়তা করার খবর পেয়ে সেখানে গেলে প্রত্যক্ষ হয় তার মানবিক কার্যক্রম। তখন র্যাব ৫ ক্যাম্প কমান্ডার মোহাইমেনুর রশিদ জানান, করোনাভাইরাসের রাজশাহী বিভাগের হটস্পট এখন জয়পুরহাট। এ জেলায় দিন দিন করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। বর্তমানে এ জেলায় ১১৪ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে। কিন্তু এর পরেও থেমে নেই তাদের কর্মকান্ড। টিমের সদস্যদের সঙ্গে করে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মানুষকে সহায়তা করে চলেছেন তিনি। শুধুমাত্র ব্যক্তি উদ্যোগে এই ক্যাম্প কমান্ডার প্রায় দেড় হাজার মানুষের কাছে খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দিয়েছেন। এবং তার এই কর্মকান্ড এখনো চলমান রয়েছে।
কয়েকদিনের এমন কাজের ধারাবাহিকতায় পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে যে, রাত গভীর হলেই এখন বিপুল সংখ্যক মানুষ পথে পথে অপেক্ষা করেন এই কর্মকর্তার জন্য। ফলে ঝড়-বৃষ্টি উপেক্ষা করেও অপেক্ষমান এসব মানুষের কাছে ছুটে যাচ্ছেন তিনি। এই করোনা দুর্যোগে সত্যিকারের যেসব মানুষের সহায়তা প্রয়োজন, তাদের কাছে পৌঁছাতেই রাতের আঁধারে বাড়ি বাড়ি ছুটে চলেছেন বলে জানান মোহাইমেনুর রশিদ। অসহায় মানুষগুলো হাতে তুলে দিচ্ছেন চাল, আলু, পেয়াজ, ডাল, লবণ, তেল, সেমাই, চিনি, দুধ, সাবানসহ নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রীর থলে।
এমন খাদ্য সহায়তা পেয়ে জয়পুরহাট সদর উপজেলার আর্দশ পাড়ার আমেনা বেগম বলেন, ‘আগে র্যাবের কথা মনে হলেই ভয় পেতাম। মনে হতো র্যাবের লোকজন খুব খারাপ। তারা আমাদের মতো অসহায় মানুষদের হেনস্থা করে। কিন্তু এই স্যারকে দেখে এখন অন্য কথা মনে হচ্ছে। তারা খুব দরদী মানুষ। আল্লাহর কাছে র্যাবের জন্য দোয়া করি।
রাতেই কেন খাদ্য সহায়তা দিচ্ছেন জানতে চাইলে মোহাইমেনুর রশিদ বলেন, দিনের বেলায় সাধারণত আমাদের নিয়মিত অফিসিয়াল কার্যক্রমে ব্যস্ত থাকতে হয়। এছাড়া, রাতে নিরাপদ শারীরিক দূরত্বের বিষয়টি ভালোভাবে নিশ্চিত করা যায়। যাদের ঘরে খাবার থাকে, তারাতো আর না খেয়ে রাত জেগে রাস্তায় বসে থাকে না। যার আসলেই খাদ্য সহায়তা প্রয়োজন, তাদের কাছে সহায়তা পৌঁছাতে সবকিছুই বিবেচনায় রাতের সময় বেছে নিয়েছি।
ঈ্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রী পেয়ে জয়পুরহাট সদর উপজেলার আদর্শ পাড়ার শিউলী বেগম, ক্ষেতলাল উপজেলার ইটাখোলা গ্রামের বিউটি খাতুন, নওগাঁর বদলগাছির কোলা গ্রামের হাফিজুর রহমান, ধামইরহাট উপজেলার জাহানপুর গ্রামের আনোয়ার হোসেনসহ হতদ্ররিদ্র মানুষগুলোর চোখে-মুখে খুশির আভাস লক্ষ্য করা গেছে। করোনা পরিস্থিতির দুর্দিনে এমন সাহায্য পেয়ে পরিজনদের নিয়ে চারটা ডালভাত খেতে পারবেন বলে র্যাব কর্মকর্তাকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন তারা।
দৈনিক চাঁদনী বাজার/সাজ্জাদ হোসাইন