প্রকাশিত : ১৯ জুন, ২০২০ ২১:১৯

বগুড়ায় হারিয়ে যাওয়া দেশী মাছ চাষে ময়নুলের সফলতা

এইচ আলিম
বগুড়ায় হারিয়ে যাওয়া দেশী 
মাছ চাষে ময়নুলের সফলতা

বগুড়াসহ বিভিন্ন অঞ্চল থেকে হারিয়ে যাওয়া দেশী মাছের চাষ করে সফলতা পেয়েছেন মো: ময়নুল হোসেন তালুকদার। তিনি প্রায় ৬টি ছোট বড় পুকুরে দেশীয় পাবদা, দেশী মাগুড়, শিং, গুছি, টেংরা, শাটি, পুঁটি মাছ চাষ করেছেন। এর সাথে তিনি আলাদা করে রুই, কাতল ও কাপ জাতীয় মাছ করে নিজের বেকারত্ব গুছিয়ে নিয়েছেন। দেশীয় জাতের এই মাছ চাষ করে প্রতি মাসে খরচ বাদে প্রায় ১ লাখ টাকা আয় করেন। শুরুতে শ্রমিক রাখার সাধ্য না থাকলেও এখন তার খামারবাড়িতেতেই নিয়মিত কাজ করেন ১০ জন। আর অনিয়মিত কাজ করেন আরো ২০ জন। 

জানা যায়, বগুড়ার কাহালু উপজেলা সদরের মুঞ্জুরুল হক তালুকদারের পুত্র মোঃ ময়নুল হোসেন শিক্ষা জীবন চলাকালে মাছ চাষে আগ্রহী উঠেন। ১৯৯৬ সালে তিনি মাছ চাষের কাজে নিয়োজিত হন। শিক্ষাজীবন শেষ করে তিনি শিক্ষকতার পাশাপাশি বিভিন্নভাবে প্রশিক্ষণ ও কয়েকজন স্বর্ণপদক প্রাপ্ত মাছ চাষিদের পরামর্শ পেয়ে তিনি মাছ চাষ শুরু করেন। প্রথমে তিনি পাঙ্গাস মাছ দিয়ে শুরু করেন। ওই বছর পাঙ্গাস চাষ করে বাজারে বিক্রির পর আয়ের টাকা দিয়ে অন্যান্য মাছ চাষ শুরু করেন। এভাবে তিনি রুই, কাতলা, কার্প জাতীয় মাছ চাষ করে বাজারে বিক্রি শুরু করেন। এরপর কিছু আয় হতেই তিনি ৪টি পুকুরে দেশীয় জাতের মাছ চাষ শুরু করেন। ২০১৫ সালে এসে তিনি হারিয়ে যেতে থাকা দেশীয় মাছ চাষের প্রতি ঝুঁকে পড়েন। বিভিন্নজনের পরামর্শে তিনি প্রথমে দেশীয় জাতের পাবদা মাছ চাষ শুরু করেন। প্রায় ২৫ হাজার টাকায় শুরু করে ৬ মাস পর তিনি ওই মাছ বিক্রি করেন। সেখানে খরচ বাদ দিয়ে আয় করেন ৭৬ হাজার টাকা।

৪টি পুকুরের পাশাপাশি তিনি একটি ১০ বিঘা জমির পুকুর চুক্তিতে নেন। সেখানে তিনি পাবদা মাছ চাষ শুরু করেন। কাহালু উপজেলায় মাছ চাষে স্বর্ণ পদক প্রাপ্ত জাহাঙ্গীর আলমের পরামর্শ নিয়ে তিনি মাছে চাষে মনোযোগ বাড়িয়ে দেন। মিশ্রমাছ চাষ শুরু করেন। এর মধ্যে চারটি আলাদা পুকুরে দেশীয় জাতের পাবদা মাছ চাষ করতে গিয়ে শিং, মাগুড়, শৌল, শাটি, টেংরা মাছের রেণু বিভিন্ন উপায়ে পেয়ে যান। এরপর থেকে এই চারটি পুকুরে তিনি দেশীয় মাছ চাষ করে সফলতা পেয়ে যান।সফল মাছ চাষি মোঃ ময়নুল হোসেন জানান, বগুড়া, জয়পুরহাট, নওগাঁ, ঢাকা, রংপুর, রাজশাহীসহ বেশ কয়েকটি জেলায় দেশীয় মাছের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। পাবদা মাছেরও বেশ চাহিদা রয়েছে। চাহিদার বিষয়টিকে মাথায় রেখেই পাবদা মাছের চাষ রপ্ত করে শুরু করা হয়।

এখন ৬টি পুকুরে মাছ চাষ চলছে। প্রতি ৬ থেকে ৭ মাসে পাবদা মাছ বাজারে বিক্রির অবস্থায় চলে আসে। পাবদা মাছের সাথে দেশীয় জাতের শিং, মাগুড়, শৌল, শাটি, টেংরা মাছেরও চাষ করা হচ্ছে। দেশীয় মাছের চাষ করতে গিয়ে পুকুরগুলোতে পুঁটি মাছ, বিভিন্ন জাতের ছোট মাছও পাওয়া যায়। তিনি বলেন, মাছ চাষের পাশাপাশি ডিম ফুটিয়ে রেণুও করা হয়। মাছ চাষের পাশাপাশি হাঁসের খাৎমার গড়া হয়েছে। হাঁসের ডিমও বিক্রি চলছে। সব মিলেয়ে তালুকদার খামারবাড়ি পল্লী গড়া হয়েছে। তিনি বলেন দেশীয়জাতের মাছ চাষই তার এখন লক্ষ্য। তিনি বলেন খরচ বাদ দিয়ে তার এখন ভাল দিন যাচ্ছে।

বগুড়ার কাহালু উপজেলার সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মোছাঃ ইরিনা মৌসুমি জানান, এই উপজেলায় আগের থেকে কয়েক বেশি পরিমানে দেশীয় মাছের চাষ হচ্ছে। দেশীয় মাছের মধ্যে শিং, কৈ, টেংরা, মাগুড় এছাড়া পাবদাও প্রচুর চাষ হচ্ছে। কাহালু উপজেলার মাছ চাষিরা অত্যান্ত পরিশ্রমি। উপজেলা মৎস্য অফিস থেকে টেকনিক্যাল সাপোর্ট দেয়া হয়। তাছাড়া মাছ চাষিদের প্রয়োজন অনুসারে পরামর্শ প্রদান করা হয়। 

দৈনিক চাঁদনী বাজার/সাজ্জাদ হোসাইন

উপরে