প্রকাশিত : ২৪ জুন, ২০২০ ২২:১৭

কাউনিয়ায় লাম্পি স্কিন রোগ মহামারী আকার ধারন করেছে

প্রানী সম্পদ বিভাগ নিরব দর্শক
সারওয়ার আলম মুকুল, কাউনিয়া (রংপুর) প্রতিনিধি
কাউনিয়ায় লাম্পি স্কিন রোগ মহামারী আকার ধারন করেছে

একদিকে করোনা ভাইরাসে মানুষের নাকাল অবস্থা, অন্য দিকে রংপুরের কাউনিয়ায় দেখা দিয়েছে গরুর নতুন রোগ (ভাইরাস) লাম্পি স্কিন এর মহামারী। ইতোমধ্যে ১১টি গরু মারা যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে। প্রানী সম্পদ বিভাগের উদাসিনতায় দিশাহারা হয়ে পড়েছেন কাউনিয়ার গরু পালনকারীরা। উপজেলার ১টি পৌরসভাসহ ৬টি ইউনিয়নের প্রায় প্রতিটি গ্রামে গরুর লাম্পি স্কীন নামে নতুন রোগের সংক্রমণ মহামারী আকারে দেখা দিয়েছে। জানাগেছে এই রোগটি শুরুর আগে গরুর প্রচন্ড জ্বর আসে, তারপর গরুর সমস্ত শরীরের মধ্যে ফোসকা পড়ার মত চাকা চাকা আকার ধারণ করে গরু অসুস্থ হয়ে পড়ে। এই রোগের ফলে গরু পালনকারীরা দিশেহারা হয়ে পড়ছেন। প্রথমে একটি গরু আক্রান্ত হলে পরে বাড়িতে থাকা সব গরুই আক্রান্ত হচ্ছে। 

সরেজমিনে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় গরু পালনকারীদের সাথে কথা বলে জানাগেছে, হঠাৎ করে গরুর এমন রোগ হওয়াতে তারা দিশেহারা। তারা জানান এই রোগ হলে কি করতে হবে, এই রোগের কোন টিকা আছে কি নেই, তাও তারা জানে না। প্রানী সম্পদ বিভগের কেউ তাদের খবর রাখে না, এমন কি কি করতে হবে তাও জানায় নি। সরকারী ভাবে কোন ভ্যাকসিন সরবরাহ না করায় এবং উপজেলা প্রাণী সম্পদ বিভাগের ডাক্তাররা মাঠে না যাওয়ায় পল্লী চিকিৎসকদের নিকট চিকিৎসা নিয়ে রোগের প্রতিকার পাচ্ছে না ভূক্তভোগী গরু চাষীরা। গঙ্গানারায়ন গ্রামের গরু চাষী সুকন্ঠ দাস দুঃখ করে বলেন অনেক আশা করে গরু পালন করছি আগামী কোরবানী ঈদে বিক্রি করে কিছু টাকা আয় হবে, সেই আশা এই রোগ এসে ভেস্তে গেল। মাছ বিক্রি করে যা আয় হতো তা থেকে গরুটিকে খাওয়াতাম।

উপজেলা প্রানী সম্পদ বিভাগের কোন নজরদারী না থাকায় বাধ্য হয়ে গ্রামে পল্লী চিকিৎসক দিয়ে গরুর চিকিৎসা করাতে হচ্ছে। চিকিৎসা খরচ অনেক বেশি। গরু প্রতি প্রায় দুই থেকে তিন হাজার টাকা খরচ হয়ে যাচ্ছে। গরু মারা না গেলেও সুস্থ্য হতে বেশ সময় লাগছে। এ কারণে গরু না খেয়ে শুকিয়ে যাচ্ছে, ফলে আমরা ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছি। গত দুই দিনে ঠাকুরদাস গ্রামের নজরুল ইসলামের ১টি ও রামচন্দ্রপুর গ্রামের আফজালের ১টি, নাজিরদাহ গ্রামের মজিবর হাজির ১টি, চর নাজিরদহ গ্রামের আশরাফুলের ১টি চাংরা গ্রামের বজলুলের ১টিসহ গত ১সপ্তাহে উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে ১১টি গরু মারা যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে। গরু পালকারীরা আরও জানায় এই রোগের ঔষধ সব জায়গায় পাওয়া যায় না।

যেসব ফার্মেসীতে পাওয়া যায় তারা দুই তিন গুন বেশি মূল্যে বিক্রয় করছে। এতে আমরা আর্থীক ভাবে অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। অনেকে বাধ্য হয়ে কমদামে কসাই এর কাছে গরু বিক্রি করে দিচ্ছে। এ বিষয়ে পল্লী চিকিৎসক নুরুজ্জামান জানান, লাম্পি স্কীন রোগটি একটি ভাইরাস জনিত রোগ। এটি একটি এলাকার আক্রান্ত হলে পরবর্তীতে অন্যান্য অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে। এ রোগের টীকা এখনো আবিস্কার না হলেও সময় মতো চিকিৎসা করালে গরু সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে যায়। এ ব্যাপারে কাউনিয়া উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ মনোজিৎ কুমার সরকার জানান, লাম্পি স্কিন রোগে গরু মরে যাওয়ার নজির খুবই কম।

তিনি বলেন আমার জানা মতে হারাগাছ ইউনিয়নে ১টি গরু মারা যাওয়ার কথা শুনেছি। সময় মতো চিকিৎসা করলে এ রোগ সম্পূর্ণ ভালো হয়ে যাচ্ছে। তিনি আরও বলেন জনগণ কে আমরা এ রোগ থেকে গরুকে রক্ষার জন্য চাষিদের সচেতন করছি। আক্রান্ত গরুকে প্রাণী সম্পদ হাসপাতালে নিয়ে আসলে অল্প খরচে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। 

দৈনিক চাঁদনী বাজার/সাজ্জাদ হোসাইন

উপরে