প্রকাশিত : ৩০ জুন, ২০২০ ০১:২৫

মেয়েদের নিরাপত্তাহীনতা নগ্ন করে তুলছে শেরপুরের ভাবমুর্তি

শুভ কুন্ডু, শেরপুর(বগুড়া)প্রতিনিধিঃ
মেয়েদের নিরাপত্তাহীনতা নগ্ন করে তুলছে শেরপুরের ভাবমুর্তি
প্রতীকি ছবি
আইন ও পুলিশ প্রশাসনের পরোয়া না করে বগুড়ার শেরপুর তথা গোটা বাংলাদেশে ধর্ষণ ও শ্লীলতাহানির ঘটনা বেড়েই চলেছে। শেরপুর উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে মেয়ে ও শিশুদের নিরাপত্তাহীনতা ধীরে ধীরে নগ্ন করে তুলছে শেরপুরের ভাবমুর্তিকে। মাঝে মাঝেই ধর্ষণ বা যৌন হেনস্থার ঘটনা ঘটছে। ভাবনার বিষয়, ইদানীং শিশুরাই এর শিকার বেশি হচ্ছে! এমনকি প্রতিবন্ধিরাও নিস্তার পাচ্ছে না।
গতকাল রবিবার (২৮জুন) সন্ধায় শেরপুর পৌর শহরের ঘোষপাড়ায় জন্মদাতা বাবার বিরুদ্ধে মেয়েকে ধর্ষণের অভিযোগ পাওয়া গেছে। মেয়েটির বয়স ১৪ বছর এবং বিবাহিত। অভিযোগের ভিত্তিতে অভিযুক্ত বাবাকে আটক করেছে থানা পুলিশ। তবে জানা গেছে, অন্যের প্ররোচনায় পরে নিজের বাবার বিরুদ্ধে এমন সংকেত দিয়ে থাকতে পারে মেয়েটি। শেরপুর থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) আবুল কালাম আজাদ জানিয়েছেন, এ ঘটনায় থানায় ধর্ষণের মামলা পক্রিয়াধিন আছে।
গত ৯ই মে শনিবার আনুমানিক রাত ৮টা। শেরপুর উপজেলার ভবানীপুর ইউনিয়নে ১৯ বছরের এক প্রতিবন্ধি (সদ্য বিবাহিত) মেয়েকে ধর্ষণ করা হয়। সেদিন মেয়েটির কথা বলতে না পারার সুযোগকে কাজে লাগায় ৪০ বছর বয়সি ওই ধর্ষক। গ্রাম্য পরিবেশে পার্শ্ববর্তী মামার বাড়ি থেকে টিভি দেখে বাড়িতে ফিরছিল মেয়েটি। তোমার স্বামী সামনের রাস্তায় দাড়িয়ে আছে তোমার অপেক্ষায়। এমন কথা বলে মেয়েটিকে পার্শ্ববর্তী এক ইউক্যালিপটাস গাছের বাগানে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করা হয়। এর পরে ওই অবস্থাতেই বাড়িতে ফিরে স্বামীর কাছে ইশারা ইঙ্গিতে ঘটনা প্রকাশ করে প্রতিবন্ধি মেয়েটি।
গত ৬ই মে বুধবারের ঘটনা। উপজেলার খানপুর ইউনিয়নে ৯ বছরের এক মেয়ে বাচ্চাকে যৌন নির্যাতন করে প্রতিবেশি এক বৃদ্ধ। যদিও পুলিশ ওই বৃদ্ধকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। শিশুটির বাবা-মা ঢাকায় চাকরি করে, তাই সে তার নানীর সাথে গ্রামেই থাকত। ঘটনার দিন নয় বছরের শিশু কন্যা লাবনী (ছদ্মনাম) সকালে খেলার-ধূলার জন্য বাড়ি থেকে বের হয়। বেশ কিছুক্ষণ পর চেচামেচি শুনে শিশুটির নানী বাহিরে বের হয়ে দেখে কাদঁতে কাদঁতে প্রতিবেশি এক বৃদ্ধ’র বাড়ি থেকে বের হয়ে আসছে লাবনী। জিজ্ঞাসা করলে উত্তর দেয় শিশুটি। কি হয়েছে বাচ্চাটি পুরোপুরি বলতে পারছিল না।
নানী কিছুক্ষণ পরেই বুঝতে পারে প্রতিবেশি বৃদ্ধ তার নাতনীর উপর যৌন নির্যাতন করেছে। শিশুটি বলে, প্রতিবেশি বৃদ্ধ তাকে খেলার সময় হাত ধরে তার শয়ন কক্ষে নিয়ে যায় এবং পরনের পায়জামা খুলে খাটের ওপর শোয়ায়। জানান শিশুটির নানী। গত ১৯ এপ্রিল রবিবার উপজেলার খানপুর ইউনিয়নের কয়েরখালী গ্রামের ঘটনা। ১৬ বছরের (অপ্রাপ্ত বয়স্ক) একটি মেয়ের বিয়ের দশ মাস পর স্বামী বাড়িতে না থাকার সুযোগে পার্শ্ববর্তী ৩১ বছরের একটি ছেলে রাতে ঘরে ঢুকে। খাটিয়ার নিচে ওতপেতে থাকা ছেলেটিকে দেখেই মেয়েটির চিৎকারে ছেলেটিকে ধরে ফেলে বাড়ির লোকজন ও এলাকাবাসী। দোষ দেয়া হয় মেয়েটির। পাঠিয়ে দেয়া হয় তার মায়ের কাছে। থানায় অভিযোগও করে মেয়েটি।
তবে আসামী আটক হওয়ার আগেই পরবর্তীতে স্থানীয়ভাবে মিমাংসা করে পুনরায় স্বামীর বাড়িতে জায়গা দেয়া হয় মেয়েটিকে। তার কিছুদিন আগে গত ১৪ এপ্রিল মঙ্গলবার দুপুরে শেরপুরের কুসুম্বী ইউনিয়নে ধর্ষনের স্বীকার হয় ১৪ বছর বয়সের তরুণী। সেদিন ২৫ বছর বয়সী ওই ধর্ষক আগে থেকেই ওৎ পেতে ছিলো। কথা বলার ছলে তরুণীকে পার্শ্বের স্কুলের ভেতরে নিয়ে যেয়ে স্কুলের পরিত্যক্ত স্থানে ধর্ষন করে।
এরপর গত ৬ এপ্রিল ২০২০। শেরপুর থানায় মামলা নং- ৫। উপজেলার খামারকান্দি ইউনিয়নের পারভবানীপুর গ্রামের ঘটনা। তারা দুইজনই তখন বিবাহিত। ছেলে স্বপন ৩৩ (ছদ্দনাম) আর মেয়ে স্বপ্না ২৪ (ছদ্দনাম)। বিয়ের আগে তাদের মধ্যে ছিল প্রেমের সম্পর্ক। আর সেই সম্পর্কের সুবাদেই হয় শারীরিক সম্পর্ক। আর সেই শারীরিক সম্পর্কের নগ্ন ছবি ও ভিডিও ধারন করা হয়। পরবর্তীতে ওই সকল ছবি ও ভিডিওর মাধ্যমে বারবার শারীরিক সম্পর্ক করার চেষ্টা করা হয়। এভাবে চলতে থাকে বেশ কিছুদিন। তার পরে মেয়েটির বিয়ে হয়ে যায়।
তখন মোবাইলে ধারনকৃত ওই সকল নগ্ন ছবি বিভিন্ন ভাবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পর্নোগ্রাফী হিসেবে প্রচার করে ছেলেটি। এ ঘটনায় তাকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয় পুলিশ। ঠিক এভাবেই ধীরে ধীরে নগ্ন হয়ে উঠছে শেরপুরের ভাবমুর্তি। গত ‘মার্চ থেকে জুন ২০২০ পর্যন্ত শেরপুর উপজেলায় মোট ৭ টি ধর্ষণ, ধর্ষণের চেষ্টা ও শ্লীলতাহানির ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে। তবে এর বাইরেও অনেক আছে যেগুলো মামলা হয়নি কিন্তু থানায় অভিযোগ হওয়ার পরে বিভিন্ন ভাবে মিমাংসা করা হয়েছে। এরকম অসংখ্য ঘটনা ঘটে যাচ্ছে যার কিছু ঘটনা পত্রপত্রিকায় প্রকাশ হয়।
আর বাকী গুলো কেউ জানতেই পারে না। তবে বর্তমানে মিডিয়ার কারনে খবর প্রকাশ পাচ্ছে। তার পরেও অন্তরালে থেকেই যাচ্ছে অনেক খবর। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে প্রতিবেশিদের দ্বারাই ধর্ষণের স্বীকার হচ্ছে নারী ও শিশুরা। তবে সেগুলোর বেশির ভাগই চার দেয়ালের বাইরে আসছে না। তবে স্থানীয় গবেষক ও বিশ্লেষকদের মতে নারী ও শিশু ধর্ষণ বাড়ার কারণ হিসেবে তারা আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর ব্যর্থতাকেই দায়ী করছেন। এ বিষয়ে ব্রাক মানবাধিকার ও আইন সহায়তা কর্মসূচির শেরপুর সিনিয়র এইচ.আর.এল.এস. অফিসার মো: লুৎফর রহমান মন্তব্য করেছেন, বর্তমান সময়ে যেসব শ্লীলতাহানি, ধর্ষণ বা ধর্ষণের চেষ্টার ঘটনা আমরা জানতে পেরেছি তার সবগুলোই পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতির কারনে ঘটছে।
তবে তার মধ্যে শতকরা ৫০% ভাগই ও অন্যের প্ররোচনায় পরে বিভিন্ন স্বার্থ হাসিলের জন্য মিথ্যা অভিযোগ করছে অভিযোগকারীরা। আবার অনেক সত্য ঘটনা সামনেই আসছেনা। তবে শেরপুর থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) আবুল কালাম আজাদের ভাষ্য মতে, গত তিন মাসে শেরপুরে ধর্ষণ ও শ্লীলতাহানির যে সংখ্যা পাওয়া গেছে তা স্বাভাবিক অবস্থাতেই আছে বলে আমি মনে করি। তবে আগামীতে এই ধরনের ঘটনায় সঠিক পদক্ষেপ নিতে সচেষ্ট থাকব বলে জানান এই পুলিশ কর্মকর্তা।

দৈনিক চাঁদনী বাজার/সাজ্জাদ হোসাইন

 

উপরে