প্রকাশিত : ১ জুলাই, ২০২০ ২২:৪৬
ফলোয়াপ

শেরপুরে দলিল লেখক সমিতির উন্মুক্ত লুটপাট সাব-রেজিস্ট্রারসহ জিম্মি ক্রেতা-বিক্রেতা

শুভ কুন্ডু, শেরপুর(বগুড়া)প্রতিনিধিঃ
শেরপুরে দলিল লেখক সমিতির উন্মুক্ত লুটপাট
সাব-রেজিস্ট্রারসহ জিম্মি ক্রেতা-বিক্রেতা
নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্তেও থেমে নেই শেরপুর সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের সরকারি জায়গায় কতিপয় দলিল লেখকদের স্থায়ী ঘর নির্মান।

বগুড়ার শেরপুর উপজেলার দলিল লেখক সমিতিতে চলছে উন্মুক্ত লুটপাট। দলিল লেখক সমিতির কাছে জিম্মি হযে পড়েছেন উপজেলার সাধারণ জনগণ ও ক্রেতা-বিক্রেতগণ। তাদের অবৈধ কার্যক্রমে বাঁধা সৃষ্টি করে সফল হতে না পেরে বর্তমান সাব-রেজিস্ট্রার মো: সাজেদুল হকও জিম্মি হয়ে পড়েছেন শেরপুরের দলিল লেখক সমিতির কাছে। স্থানীয় শীর্ষ নেতাদের নাম ভাঙিয়ে চলা দলিল লেখক সমিতির কতিপয় নেতৃবৃন্দদের সাথে বর্তমানে তিনিও (সাব-রেজিস্ট্রার) যোগ দিয়েছেন উন্মুক্ত লুটপাটে। এর প্রমাণ পাওয়া গেছে গত ১৪ জুন সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের সরকারি জায়গায় কতিপয় দলিল লেখকদের অবৈধ ভাবে স্থায়ী ঘর নির্মানের ঘটনায়।

সম্প্রতি সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের সরকারি জায়গায় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের জন্মশত বার্ষিকী উপলক্ষে রোপনকৃত গাছ কর্তন করে স্থায়ী ঘর নির্মানের কাজ শুরু করেছেন দলিল লেখক সমিতির কতিপয় নেতারা। উক্ত অবৈধ কাজে সাব-রেজিস্ট্রার প্রথমে বাঁধা দিয়ে পুলিশ প্রশাসনকে মৌখিক অভিযোগ জানান। থানা পুলিশ কাজ বন্ধ করে দেয়। কিন্তু পরবর্তীতে সাব-রেজিস্ট্রার বিভিন্ন হুমকি-ধামকি ও অন্যান্য পক্রিয়ায় ম্যানেজ হয়ে অবৈধ ঘর তোলার ব্যাপারে সহমর্মি হন এবং সংবাদ কর্মীদের জানান অফিস চত্তরে ব্যক্তি উদ্যোগে ঘর নির্মান করা যাবে, যা বিভিন্ন গণমাধমে প্রকাশিত হয়েছে। এতেই প্রমাণিত সাব-রেজিস্ট্রার নিজেও দলিল লেখক সমিতির কাছে জিম্মি। সম্প্রতি ব্যয়বহুল খরচে নির্মিত হয়েছে সাব-রেজিস্ট্রারের কার্যালয় ভবন, আর সেই ভবনের গা ঘেঁষে দলিল লেখকদের একাধিক অবৈধ স্থায়ী ঘর নির্মান ভবনের সৌন্দর্য নষ্ট ও জনচলাচলে ব্যাঘাত সৃষ্টি করেছে।

এছাড়াও শেরপুর সাব-রেজিস্ট্রি অফিস ও দলিল লেখক সমিতিতে সরকারি নিয়মনীতি ও বিধি নিষেধ উপেক্ষা করে দিনে-দুপুরে সকলের সামনেই চলছে উন্মুক্ত লুটপাট। বিষয়টি নিয়ে অনুসন্ধান করে দেখা যায়, এখানে দলিল রেজিস্ট্রি করতে পৌরসভার মধ্যে শতকরা সাড়ে ৮ ভাগ হারে এবং পৌরসভার বাহিরে সাড় ৭ ভাগ হারে অর্থাত লাখে সাড়ে ৮ হাজার ও সাড়ে ৭ হাজার টাকা সরকারকে রাজস্ব জমা দিতে হয়। কিন্তু বেআইনিভাবে গঠিত এই সমিতি সরকার নির্ধারিত ফি এর বাইরে প্রতি লাখে ১২ থেকে ১৩ হাজার টাকা আদায় করছে। সে হিসেবে প্রতি লাখে সাড়ে ৪ থেকে সাড়ে ৫ হাজার টাকা অতিরিক্ত আদায় করা হচ্ছে।

শেরপুর সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে বর্তমানে সপ্তাহে ৫ দিন দলিল রেজিস্ট্রি হয়ে থাকে। প্রতিদিন গড়ে ৩০টি দলিল রেজিস্ট্রি হয়ে থাকে বলে অফিস সুত্রে জানা গেছে। সে হিসেবে প্রতি সপ্তাহে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে দলিল লেখক সমিতি আর সেই টাকা প্রতি বৃহস্পতিবারে সাব-রেজিস্ট্রারসহ দলিল লেখক সমিতির কর্মকর্তারা ভাগাভাগি করছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

এছাড়াও রেজিস্ট্রিকৃত দলিলের নকল উঠাতে ১৭শ থেকে ২ হাজার টাকা আদায় করছে শেরপুর সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের দুর্নীতিবাজ কিছু কর্মচারী। এভাবে বিভিন্ন খাত থেকে আদায়কৃত অর্থ অফিস শেষে অফিস সহকারীর মাধ্যেমে সাব-রেজিস্ট্রার, কমর্মচারীবৃন্দ ও দলিল লেখক নেতৃবৃন্দদের মাঝে ভাগবাটোয়ারা করা হয় বলে জানা গেছ। আর এভাবেই এই অবৈধ সমিতির নামে নেয়া অবৈধ অর্থ দিয়ে দলিল লেখক নেতৃবৃন্দরা কোটি কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন। তবে এই অবৈধ সমিতির মেয়াদ কতদিন? জানতে চাইলে অত্র সমিতির সভাপতি এস এম ফেরদৌস চাঁদনী বাজারকে জানান, তিন বছর মেয়াদী কমিটির কেবল ৮/৯ মাস পার হয়েছে।

শেরপুর সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতি নিয়ে সাব-রেজিস্ট্রার মো: সাজেদুল হকের কাছে জানতে চাইলে তিনি চাঁদনী বাজারকে বলেন, আমি জানি দলিল লেখক সমিতি অবৈধ এবং তারা সরকার নির্ধারিত টাকার বাহিরে অতিরিক্ত টাকা আদায় করেন। কিন্তু কেউ অভিযোগ করে না বলে কোনো ব্যাবন্থা নিতে পারি না। তিনি এটাও বলেন, দলিলের নকল তোলার ক্ষেত্রে দলিলের রকম ভেদে সর্বোচ্চ ৭শ থেকে ৯শ টাকা লাগতে পারে।  এ বিষয়েও অতিরিক্ত টাকা আদায়ের ব্যাপারে আমার কাছে কেউ অভিযোগ জানায়নি।

শেরপুর সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের সরকারি জায়গায় অবৈধ স্থায়ী ঘর নির্মানের বৈধতা সম্পর্কে জানার জন্য শেরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো: লিয়াকত আলী সেখ এর মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি। এ বিষয়ে পরবর্তী তথ্য সংগ্রহ করে সংবাদ প্রকাশ অব্যাহত থাকবে।

দৈনিক চাঁদনী বাজার/সাজ্জাদ হোসাইন

 

উপরে