প্রকাশিত : ১৮ জুলাই, ২০২০ ১৯:৩০

আমিষের ঘাটতি পূরণ ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ন ভূমিকায় শেরপুরের গবাদিপশুর খামার

শুভ কুন্ডু, শেরপুর(বগুড়া)প্রতিনিধিঃ
আমিষের ঘাটতি পূরণ ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ন ভূমিকায়
শেরপুরের গবাদিপশুর খামার

আমিষের ঘাটতি পূরণ এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নে বর্তমানে গুরুত্বপূর্ন ও ফলদায়ক ভূমিকায় রয়েছে বগুড়ার শেরপুরের সরকারি গবাদিপশুর খামার । ১৯৯৩ সালে উপজেলার গাড়িদহ এলাকায় গড়ে ওঠা গবাদিপশুর এই সরকারি খামার একটি প্রদর্শনী প্রতিষ্ঠান হিসেবে স্বীকৃত হলেও বর্তমানে এই প্রতিষ্ঠান থেকে আশানুরূপ ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। অতি সল্প সময়ে প্রতিষ্ঠানটির দুধ উৎপাদন বেড়ে দ্বিগুন হয়েছে। বিগত সময়ে যেখানে উৎপাদন হতো ১৫০/১৬০ লিটার দুধ, বর্তমানে সেখানে উৎপাদন হচ্ছে প্রায় ৩০০/৩১০ লিটার দুধ। সবথেকে জননক্ষম বিষয় হলো, এখানে উৎপাদন হচ্ছে জেনেটিক মান সম্পন্ন ব্রিডিং বুল বা প্রজনন ষাঁড়, যার দ্বারা কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে তৈরী হচ্ছে উন্নত বৈশিষ্ট সম্পন্ন গাভী ও ষাঁড়।

আর এই কৃত্তিম প্রজননের মাধ্যমে তৈরীকৃত প্রতিটি গাভী দৈনিক সর্বোনিম্ন ২০ লিটার দুধ দিতে সক্ষম যা মানব দেহে আমিষের ঘাটতি পূরণে ব্যাপক ভূমিকা রাখছে। তবে সরকারি এই প্রতিষ্ঠানটিকে আশানুরূপ পরিস্থিতিতে পরিণত করতে কাজ করে যাচ্ছেন প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মো: সালেহ আল রেজা (লীভ রিজার্ভ)। বিভিন্ন দূর্নীতি ও অনিয়মে ডুবে থাকা সরকারি এই প্রতিষ্ঠানটিতে প্রধান হিসেবে (লীভ রিজার্ভ) ৩০তম বিসিএস ক্যাডার মো: সালেহ আল রেজা গত ২০১৯ সালের ১৭ ডিসেম্বর যোগদান করেন। মানব দেহে আমিষের ঘাটতি পূরণ, জনসাধারনকে প্রাণিসম্পদে উদ্বুদ্ধকরন এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়েই তিনি খামারটি পরিচালনা করে যাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন।

প্রকাশ করা যায়, কৃষি প্রধান দেশের সহায়ক প্রতিষ্ঠান হিসেবে প্রাণি সম্পদ ব্যাপক অবদান রাখছে। খামারটিতে প্রধান হিসেবে প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা (লীভ রিজার্ভ) মো: সালেহ আল-রেজা যোগদান করার পর থেকে এখানকার আমূল পরিবর্তন হয়েছে। শেরপুরের সরকারি গবাদিপশুর খামার বর্তমানে লাভজনক প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচিত। বিগত দিনে যেখানে ৪৪টি দুগ্ধজাত গাভী থেকে দুধ উৎপাদন দেখানো হতো ১৫০/১৬০ লিটার সেখানে বর্তমানে ৫২টি দুগ্ধজাত গাভী থেকে দুধ উৎপাদন হচ্ছে প্রতিদিন প্রায় ৩০০-৩১০ লিটার। এখানকার উৎপাদনকৃত খাঁটি দুধ সরকার নির্ধারিত মূল্যে বন্টন করা হচ্ছে স্থানীয় ও আশপাশের এলাকার জনসাধারণের মধ্যে। যা সারা বছর আমিষের ঘাটতি পূরণের পাশাপাশি বর্তমান মহামারী (কোভিড-১৯) মোকাবিলায় ব্যাপক ভূমিকা রাখছে।

এছাড়া ঘাস উৎপাদনও বৃদ্ধি পেয়েছে প্রায় দ্বিগুন মাত্রায়। ৪০০টন চাহিদা থাকলেও এখন বছরে ৮৫৮টন হারে ঘাস উৎপাদন হচ্ছে যা নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে বিনামূল্যে বাহিরে বিতরণ করা হচ্ছে। শেরপুর দুগ্ধ ও গবাদিপশু উন্নয়ন খাামার হতে বিগত অর্থবছরে প্রায় ৫৭ হাজার কেজি ঘাস বিনামূল্যে বিতরন করা হয়েছে। গ্রামীণ জনগোষ্টি এবং বেকার যুবকদের প্রাণিসম্পদে উদ্বুদ্ধ করতেই এখানকার উৎপাদনকৃত ঘাসগুলো কাটিং করে অসচ্ছল খামারিদের মধ্যে বিনামূল্যে বিতরণ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন মো: সালেহ আল-রেজা। তিনি ডেইরী ফার্ম এ যোগদানকালে ভেড়া ছিলো ৭৫টি যা বর্তমানে বেড়ে দাড়িয়েছে ১১০টিতে। এছাড়াও সচ্ছতা ও সততার সাথে অর্পিত দায়িত্ব পালনকারী প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা (লীভ রিজার্ভ) মো: সালেহ আল রেজা গ্রহন করেছেন বাস্তবমুখী নানান পদক্ষেপ, যা শেরপুর উপজেলার মধ্যেই আবদ্ধ নেই। এর কার্যক্রম ছড়িয়ে পরেছে দূর-দূরান্তে। গবাদি পশুর খামার স্থাপনে ব্যাপক আগ্রহ তৈরী করেছে মানুষের মনে।

প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা (লীভ রিজার্ভ) মো: সালেহ আল-রেজা “চাঁদনী বাজারকে জানান, এই ফার্ম এর মূল উদ্দেশ্য হলো জেনেটিক মান সম্পন্ন ব্রিডিং বুল বা প্রজনন ষাঁড় তৈরী করা। যার মাধ্যমে কৃত্রিম উপায়ে সিমেন বা শুক্রাণু সংগ্রহ করে দেশের বিভিন্ন জায়গায় বিতরণ করা। সে হিসেবে সরকার নির্ধারিত সিমেন স্ট্র (কৃত্রিম প্রজনন কাজে ব্যবহৃত) প্রতি ডোজ ৩০ টাকা মুল্যে বিতরণ করলে প্রতিটি ব্রিডিং বুল বা প্রজনন ষাঁড় থেকে প্রায় ১ কোটি টাকা রাজস্ব আয় করা সম্ভব বলে জানান এই কর্মকর্তা। তিনি আরো জানান, ডেইরি ফার্ম এর কার্যক্রমে উদ্বুদ্ধ হয়ে বর্তমানে শেরপুরে অসংখ্য খামার গড়ে উঠেছে ও ক্ষুদ্র খামারিরা বৃহৎ পরিসরে খামার প্রস্তুত করছে এবং অসংখ্য বেকার যুবক প্রাণিসম্পদে বিনিয়োগের অগ্রহ প্রকাশ করছে।

আমাদের উন্নয়নমূলক কর্যক্রম এভাবে চালাতে পারলে বেকারত্ব লাঘব ও অসচ্ছল পরিবারে সচ্ছলতা ফিরবে যা সরকারি উদ্দেশ্য সফল করবে বলে মনে করেন এই সরকারি কর্মকর্তা।বগুড়ার শেরপুর সরকারি গবাদিপশু খামারের ব্যাপক উন্নয়ন ও কার্যকর নানান বিষয়ের উপর প্রাণি সম্পদ বিভাগের উর্ধতন কর্তৃপক্ষের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে উর্ধতন কর্তৃপক্ষ সন্তষ্টি ও স্থানীয় খামার কর্তৃপক্ষকে গনমাধ্যম কর্মীদের মাধ্যমে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেছেন।

দৈনিক চাঁদনী বাজার/সাজ্জাদ হোসাইন

উপরে