বগুড়ায় দেশীয় তৈরী ছুরির বিক্রি বেশি চীন ও বার্মিজ ছুরিতে অনীহা
করোনা ভাইরাস আর বন্যার দুর্ভোগ মাথায় নিয়ে ঈদুল আযহা পালন করতে যাচ্ছে বগুড়াবাসি। ঈদুল আযহা একেবারে কাছে চলে এসেছে। করোনা ভাইরাস আর বন্যার দুর্ভোগে থাকার কারণে শুরুতে ভাল বিক্রি না হলেও এখন শেষ বেলায় এসে বেড়েছে কোরবানীর পশু জবাবই ও চামড়া ছড়ানোর জন্য ধারালো ছুরি ও রামদার। বগুড়ায় দেশীয় তৈরী ছুরি বিক্রি হচ্ছে বেশি আর করোনার কারনে চীনের ও বার্মিজের ধারালো ছুরিতে বেশ অনীহা দেখা দিয়েছে।
বগুড়ায় কোরবানীর জন্য পশু প্রস্তুত করার পর এবার ভিড় বাড়ছে ছুরি, চাপাতি, বটি, দা’র দোকানে। কেউ বা আবার শখের বসে কামারশালায় ভালমানের কোরবানীর পশু জবাইয়ের জন্য রামদা-ছুরি তৈরী করে নিচ্ছেন। ছুরি, বটির দোকানগুলো থেকে শুরু করে কামারশালায় বেশ ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। দেশীয়ভাবে তৈরী ছুরির সাথে বরাবারের মত এবার চীন ও বার্মিজ ছুরি, চাপাতি পাওয়া যাচ্ছে। তবে করোনা ভাইরাসের কারণে অনেক ক্রেতা চীন ও বার্মিজ ধারালো ছুরি এবং রামদা সহজে নিতে চাইছে না। দামে মানে যেমনই হোক চলছে ধারালো দা’ ছুরির কেনাবেচা।
বগুড়া জেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ রফিকুল ইসলাম তালুকদার জানান, জেলায় এবারও কোরবানির হাটে বেচাকেনা চলছে। খামারে এবার প্রচুর পরিমানে দেশীয়জাতের গরু পালন হয়েছে। এই গরুগুলোই হাটে বেশি বিক্রি হচ্ছে। এ বছর কোরবানির জন্য চাহিদা ধরা হয়েছে ৩ লাখ ২৫ হাজার গবাদি পশু। সেখানে ৩ লাখ ৭৬ হাজার গবাদি পশু কোরাবানির জন্য প্রস্তুত রয়েছে। এর মধ্যে কোরবাননি যোগ্য গরু প্রস্তুত রয়েছে আড়াই লাখ। ১২টি উপজেলায় ৪০ হাজার খামারি কোরবানিযোগ্য পশু পালন করছেন। চাহিদার চেয়ে প্রায় ৫১ হাজার গবাদি পশু বেশি প্রস্তুত করা হয়েছে। জেলায় গরু প্রস্তুত রয়েছে ২ লাখ ৫০ হাজার ৮৫২টি। মহিষ ২ হাজার ৮১৩টি, ছাগল ১ লাখ ৩২৫২টি এবং ভেড়া রয়েছে ১৯ হাজার ৬৬৯টি। বরাবরই জেলায় চাহিদার তুলনায় বেশি পশু লালন পালন হয়।
বাড়তি পশুগুলো বিভিন্ন জেলায় চলে যায়। এদিকে ঈদ উল আযহাকে সামনে রেখে বগুড়া শহরের চেলোপাড়া, ১ নং রেলঘুমটি, ৩ নং রেলঘুমটি, কাঁচা লোহার জন্য ভাংড়ি পট্টি, কাঁঠাল তোলা, চেলোপাড়া, কলোনীসহ কয়েকটি এলাকায় বিক্রি হচ্ছে পশুর চামড়া ছাড়ানো, গোস্ত কাটা, জবাই করার বিভিন্ন ধরনের বড় ছুরি, রামদা, চাকু, বটি, কাঠেরগুড়ি। বগুড়ার বাজারে দেশিয়ভাবে তৈরী ছুরির সাথে এবার পাল্লা দিচ্ছে চীনের প্যাকেটজাত রামদা, ছুরি, চা পাতি। করোনা ভাইরাস হলেও চীনের ও বার্মার কথা বলে বিক্রি করা হচ্ছে বিভিন্ন নামের প্যাকেট ছুরি। দেশীয়ভাবে তৈরী ছোট ছুরি ২০ থেকে ৬০ টাকা একটু বড় ছুরি ৬০ থেকে ১০০ টাকা, রামদা ৩০০ থেকে ৬০০ টাকা, বটি বিভিন্ন মানের আকারের ৫০ থেকে ৪০০ টাকা, চা পাতি ২৫০ থেকে ৪০০ টাকা, বড় ধারালো ছুরি ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা।
এর সাথে বার্মিজ ও চীনের তৈরী সিলভার রঙের মান অনুযায়ি চকচকে চাপাতি বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ টাকা থেকে ৫৫০ টাকা, ছোট ছুরি ১০০ টাকা, পশু জবাই করার ছুরি ৩০০ থেকে ৬০০ টাকা, দা ৩০০ থেকে বিভিন্ন দামে বিক্রি হচ্ছে। দোকানীরা বলছে করোনা ভাইরাসের আগেই এসব ধারালো ছুরি নিয়ে এসেছে। কোন কোন স্থানে আবার চীনের কথা বলে দাম বাড়িয়েও বিক্রি করছে। ক্রেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চীন ও বার্মিজ ছুরিগুলো প্যাকেট করা হয়েছে। দেখতে বেশ চকচকে। ছুরি, বটির সাথে দাম বেড়েছে গাছের গুড়ির। ছোট বড় বিভিন্ন দামের গাছের গুড়ি বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ৮০০ টাকা করে।
বগুড়া শহরের ৩ নং রেলঘুমটি এলাকা, কাঁঠালতোলা এলাকার কয়েকজন ছুরি ক্রেতা জানান, বগুড়ায় প্যাকেট করে চকচকে দা, ছুরি, চীন ও বার্মিজ নামে বিক্রি করা হচ্ছে। এগুলো আদৌ চীনের কি না তা জানা নেই। তবে এ নামেই ছুরিগুলো কেনা হলো। ছোট ছুরি ১০০ টাকা দিয়ে কেনা হয়েছে। বগুড়া শহরের ৩ নং রেলঘুমটির কাছের এক কাঠের গুড়ি ও ছুরি বিক্রেতা জানান, কোরবানি উপলক্ষে ছুরি, দা, রামদার বিক্রি বেড়েছে। বিভিন্ন দামের এবং মানের ছুরি বিক্রি হচ্ছে। দেশীয়ভাবে তৈরী মোটা শীটের ছুরি বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ২০০ টাকার মধ্যে। আর চীন ও বার্মিজ নামের ছুরি বিক্রি হচ্ছে বিভিন্ন দামে। কাঠের গুড়িও বিক্রি করা হচ্ছে। তেতুঁল কাঠের ছোট গুড়ি ৩০০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। আর বড়গুলো আকার অনুযায়ি বিক্রি হচ্ছে।
দৈনিক চাঁদনী বাজার/সাজ্জাদ হোসাইন