জয়পুরহাটে চামড়ার দাম না পাওয়ায় মহাবিপাকে ব্যবসায়ীরা; চরম সঙ্কটে চামড়া শিল্প!
![জয়পুরহাটে চামড়ার দাম না পাওয়ায় মহাবিপাকে ব্যবসায়ীরা; চরম সঙ্কটে চামড়া শিল্প!](./assets/news_images/2020/08/02/CB20080204.jpg)
জয়পুরহাটে কোরবানির পশুর চামড়ার বাজারে ধ্বস নেমেছে। জেলার বাজারগুলোতে গতবারের চেয়ে চার ভাগের এক ভাগ দামে চামড়া বেঁচতে হচ্ছে মৌসুমি ব্যবসায়ীদের।অনেক জায়গায় এত কম দামে বিক্রি না হওয়ায় অবহেলায় মাটিতে লুটাচ্ছে চামড়া।চামড়া বাজারে এই ধসের শিকার মধ্যস্বত্বভোগী ও মৌসুমি ব্যবসায়ীরা দিশেহারা। আর যেসব হতদরিদ্র মানুষ কোরবানির চামড়া বিক্রির টাকা থেকে একটা অংশ পেয়ে থাকে প্রতিবছর, এবার তাদের ভাগ্যেও জুটবে না কাংখিত অর্থ।
জানা গেছে, বিগত বছরগুলোতে জেলায় বিভিন্ন বাজারে প্রতিটি ছাগলের চামড়া বিক্রি হয়েছে ৪০০-৫০০ টাকা। এবার তার আকারভেদে দাম ২৫ থেকে ৩০ টাকা।প্রতিটি গরু চামড়া বিক্রি হয়েছিল এক হাজার থেকে দেড় হাজার টাকায়, এবার তা ১০০ থেকে ২০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে ।জয়পুরহাট সদর উপজেলার হেলকুন্ডা গ্রামের আনিছুর রহমান, কালাই উপজেলার হাতিয়র গ্রামের গোলাম রব্বানী, ক্ষেতলাল উপজেলার দাশড়া গ্রামের হানিফ হোসেনসহ জেলার বিভিন্ন এলাকার কোরবানিদাতারা জানান, বিগত ১০ বছরের চামড়ার এমন মন্দা বাজার দেখেননি তারা।
চামড়ার বাজার ধসের কারণে লোকসানের শিকার হলেন জেলার প্রায় সব মৌসুমি ব্যবসায়ী। জয়পুরহাট জেলা শহরের নতুনহাট এলাকার শহিদুল ইসলাম, জামালগঞ্জ বাজারের মতিউর রহমানসহ মৌসুমি চামড়া ব্যবসায়ীরা জানান, কোরবানির চামড়ার এই আকস্মিক দরপতনে দিশেহারা মধ্যস্বত্বভোগী চামড়া ব্যবসায়ীরা। তারা প্রতি বছর কোরবানির সময় দু-এক দিনের এ ব্যবসায় টাকা খাটিয়ে ভালো লাভ করেন। তবে এবারের দরপতনে লোকসান গুনতে হচ্ছে বলে বিপাকে তারা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে অনেক ফড়িয়া জানান, সীমান্তে কড়াকড়ি না থাকলে তারা ওপারে চামড়া পাঠিয়ে কিছু লাভের মুখ দেখতেন। এবার সেটিও হচ্ছে না। পুঁজি সংকট, ট্যানারি মালিকদের কাছে বকেয়া পাওনা ইত্যাদি কারণে চামড়ার দাম পড়েছে বলে মনে স্থানীয় চামড়া ব্যবসায়ীরা। জয়পুরহাট শহরের চামড়া ব্যবসায়ী সাজু হোসেন, শাহিন আকতার বলেন, ট্যানারি মালিকদের কাছে বকেয়া পাওনা রয়েছে লাখ লাখ টাকা। হাতে টাকা না থাকায় তারা কাংখিত পরিমাণে চামড়া কিনতে পারছেন না। ফলে বাজারে চাহিদা কম থাকায় চামড়া মূল্য স্বাভাবিক কারণে কমে গেছে।
অন্যদিকে চামড়া পাচার রোধে সীমান্তে বিজিবির টহল বাড়ানো হয়েছে। এতে করে দেশের স্থানীয় বাজারে আপাতত চামড়া কেনাবেচা করতে হচ্ছে। ফলে চাহিদা খানিকটা কম হওয়ায় দরপতন ঘটছে বলে দাবি কয়েকজন ব্যবসায়ীর। এদিকে জয়পুরহাট-২০ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল ফেরদৌস হাসান টিটো জানান জানান, জয়পুরহাট-২০ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধীনে সীমান্তে এলাকা রয়েছে প্রায় সাড়ে ৪১ কিলোমিটার। এর মধ্যে ২২ কিলোমিটার এলাকা তারকাঁটার ঘেরা, বাকি ১৮ কিলোমিটার সীমান্তে তারকাঁটা নেই। চোরাকারবারিরা মূলত এই জায়গাটিকেই তাদের পাচারের পথ হিসেবে ব্যবহার করে থাকে।
তাই এই জায়গাগুলো সব সময় নজরদারির মধ্যে রাখা হয়। চামড়া পাচার রোধে সব ধরনের ব্যবস্থা নিয়েছেন তারা।
চামড়া শিল্পকে বাঁচাতে হলে রপ্তানী বাড়ানোর পাশাপাশি চামরা ব্যবসায়ী ও ট্যানরী মালিকদের সহজ শর্তে ঋন সুবিধার দাবী জানিয়েছেন এ শিল্পের সাথে সংশ্লিষ্টরা।
দৈনিক চাঁদনী বাজার/সাজ্জাদ হোসাইন