গুলির হিসাবে গরমিল
মেজর (অব.) সিনহা মো. রাশেদ খান হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় অবশেষে আত্মসমর্পণ করেছেন টেকনাফ থানার প্রত্যাহারকৃত ওসি প্রদীপ কুমার দাশ। কেউ কেউ বলছেন, তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। যদিও চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের কমিশনার মো. মাহাবুবুর রহমান বলেছেন, গ্রেপ্তার কিংবা আটক বলা যাবে না। এদিকে গতকাল বৃহস্পতিবার আত্মসমর্পণের পর প্রথমেই ওসি প্রদীপকে চট্টগ্রাম বিভাগীয় পুলিশ হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখান থেকে পোশাকধারী পুলিশ, সাদা পোশাকের পুলিশ ও সেনাবাহিনীর তিনটি গাড়ির সমন্বয়ে সামনে-পেছনে বিশেষ পাহারায় কক্সবাজার আদালতে নেয়া হয়।
আদালত ওসি প্রদীপ ও বাহারছড়া ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই লিয়াকতসহ তিন আসামিকে সাতদিন করে রিমান্ড এবং বাকি চারজনকে জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদের নির্দেশ দেন। এছাড়াও পলাতক দুই আসামির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। এর আগে মেজর সিনহা হত্যাকাণ্ড নিয়ে দেশজুড়ে নানা জল্পনা-কল্পনা এবং ঘটনার জন্ম হয়। পরস্পরবিরোধী বক্তব্য আসে দুই সংস্থা থেকেই। এর মধ্যেই মেজর সিনহার সফরসঙ্গী শহীদুল ইসলাম সিফাত কারাগারে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটির সঙ্গে কথা বলেন।
সিফাত বলেন, পুলিশের যে ইন্সপেক্টর সিনহাকে গুলি করেন তখন তিনি মোবাইল ফোনে কথা বলছিলেন এবং তাতে মনে হয়েছে তিনি অপর প্রান্তের কারো নির্দেশ কার্যকর করতে গুলি চালিয়েছেন। ফোনে কথা বলার সময় তিনি অন্যপ্রান্তের ব্যক্তিকে ‘স্যার’ বলে সম্বোধন করছিলেন। অন্যপ্রান্তের কথার জবাবে তিনি বলেন ‘ঠিক আছে স্যার, আমি করছি’। তারপরই তিনি সিনহাকে লক্ষ করে গুলি চালান। কারা অভ্যন্তরে সিফাতকে জিজ্ঞাসাবাদের সঙ্গে জড়িত সূত্র জানিয়েছে, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সিফাত জিজ্ঞাসাবাদে এ কথাও জানিয়েছে যে, সাবেক সেনা কর্মকর্তা কখনই তার লাইসেন্সকৃত আগ্নেয়াস্ত্র বের করার চেষ্টা করেননি, এমনকি গুলিবিদ্ধ হওয়ার পরও না। ঘটনার পুলিশি বক্তব্যকে পুরোই নাকচ করে দিয়েছেন সিফাত।
পুলিশ দাবি করেছে, তারা আত্মরক্ষার জন্য গুলি চালাতে বাধ্য হয়েছিল। তদন্ত দলটি সিনহার অপর সতীর্থ শিপ্রা দেবনাথের সঙ্গেও কারাগারে কথা বলেছেন। তিনিও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থী। দুজনের বিরুদ্ধেই পুলিশ পৃথক দুটি মামলায় হত্যাচেষ্টা এবং মাদকদ্রব্য বহন করার অভিযোগ এনেছে। শিক্ষার্থীদের নিয়ে কক্সবাজারে মেজর সিনহা একটি প্রামাণ্যচিত্র তৈরির কাজ করছিলেন।
তদন্তকারী দলের কাছে ওই রাতের কথা স্মরণ করতে গিয়ে সিফাত বলেন, ‘শুক্রবার রাত সোয়া ৯টার দিকে আমরা কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার বাহারছড়া ইউনিয়নের শুটিং স্পট থেকে ফিরছিলাম। আমরা আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন এবং বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের দুটি চেকপোস্ট পার হয়ে আসি, সবকিছু ঠিকই ছিলো।’ তদন্ত কমিটিকে সিফাত বলেন, ‘কক্সবাজার মেরিন ড্রাইভের শামলাপুর চেকপয়েন্টে এলে তাদের থামার ইঙ্গিত দেয় পুলিশ, ওই রাতে এটা ছিলো তাদের তৃতীয় চেকপোস্ট। সিনহা স্যার গাড়ি থামালে পুলিশ ইন্সপেক্টর লিয়াকত আলী চেঁচিয়ে আমাদের সবাইকে হাত উপরে উঠাতে বলে। তার কথামতো আমরা তাই করি। সিনহা স্যার গাড়ি থেকে নেমে যান আর আমি গাড়ির সামনের সিটে বসে থাকি। তিনি নিজের পরিচয় দেন।
পুলিশকে জানান, তিনি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একজন প্রাক্তন মেজর। তিনি পুলিশকে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে তার পরিচয় যাচাই করারও প্রস্তাব দেন। কিন্তু লিয়াকত কোনো রকম সতর্ক না করেই তাকে গুলি করতে শুরু করে।’ সিফাত আরও বলেন, ‘গুলি করেই ক্ষান্ত হয়নি লিয়াকত, সিনহা স্যার যখন যন্ত্রণায় গোঙাচ্ছিলেন বুট দিয়ে তার গলা চেপে ধরে সে। কর্তব্যরত পুলিশ তখন আমাদের পরিচয় জিজ্ঞাসা করে।’
সিফাত তদন্ত দলকে বলেন, ‘ওই রাতে তারা কেউই মাতাল ছিলো না বা কেউই কোনো মাদক বহন করছিল না। এই এলাকাটা আমরা চিনি ২৮ দিন ধরে। মেরিন ড্রাইভে একাধিক চেকপোস্ট রয়েছে জেনেও কোন বুদ্ধিতে এই ঝুঁকি নেবো?’ স্থানীয় গ্রামবাসী তাদের ডাকাত বলে চিৎকার করেছে পুলিশের এই দাবিও একেবারে মিথ্যা বলেন সিফাত।
তিনি তদন্ত দলকে বলেন, ‘টেকনাফ থেকে ফেরার পথে আমাদের দুজন স্থানীয় লোকের সাথে দেখা হয়, তারা আমাদের পরিচয় জানতে চেয়েছে, তবে তারা আমাদের দেখে কখনই ডাকাত বলে চিৎকার জুড়ে দেয়নি।’ সিনহার আরেক সতীর্থ শিপ্রা দেবনাথ, শুক্রবার রাতে স্থানীয় একটি রিসোর্টে ছিলেন। তিনি তদন্ত দলকে বলেন, ‘সেই ৩ জুলাই থেকে তিনি ডকুমেন্টারি দলটার সঙ্গে কাজ করছেন। প্রাক্তন সেনা কর্মকর্তাকে তিনি কখনই রাগতে বা উত্তেজিত হতে দেখেননি।’ তার কথায় সায় পাওয়া যায় রিসোর্ট মালিক মনজুরুল কবিরের কথাতেও।
তিনিও জানান, ‘এখানে যতদিন আছেন সিনহাকে তিনি পুরো একজন নম্র-ভদ্র ব্যক্তি হিসেবেই পেয়েছেন। আমি তাকে কখনো কারো সঙ্গে উঁচু গলায় কথা বলতে দেখিনি। সে কীভাবে পুলিশকে বন্দুক ঠেকাবে!’ কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও তদন্ত কমিটির সমন্বয়ক শাহজাহান আলী জানিয়েছেন, ‘তারা দ্রুতই তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেবেন।’
স্থানীয়রা বলেন, টেকনাফ থেকে কক্সবাজারমুখী একটি প্রাইভেটকারের আরোহীর সঙ্গে কথাকাটাকাটির একপর্যায়ে বাহারছড়া ফাঁড়ির দায়িত্বরত পুলিশ ইন্সপেক্টর লিয়াকত গুলি চালায়। পুলিশের দাবি ওই সেনা কর্মকর্তা নিজের পিস্তল বের করেছিলেন পুলিশের প্রতি। এলাকাবাসী বলছেন, সাবেক মেজর কোনো পিস্তল বের করেননি। তিনি দুই হাত উপরে তুলে গাড়ি থেকে নামেন এবং পরিচয় দেন। এসআই লিয়াকত গালাগাল করেন এবং ওসি প্রদীপ কুমারকে ফোন দেন। এরপর সাবেক মেজরের বুকে গুলি চালায়। তখন প্রাণভিক্ষাও চেয়েছিল সাবেক ওই সেনা কর্মকর্তা। কিন্তু কোনো কথা না শুনেই গুলি চালায় এসআই লিয়াকত। সেনাবাহিনীর একটি তদন্ত দল ঘটনা তদন্ত করলে এসব তথ্য বেরিয়ে আসে।
পুলিশের বক্তব্যের সম্পূর্ণ বিপরীত চিত্র ফুটে উঠে। স্থানীয় একটি হেফজখানার মুয়াজ্জিন মো. আমিন সেনা কর্মকর্তাদের কাছে বলেছেন, শনিবার রাতে প্রাইভেটকারের যে ব্যক্তিকে গুলি করে হত্যা করেছে সেটা ছিলো একটি নির্মম ঘটনা। প্রাইভেটকারের ওই আরোহী (মেজর সিনহা) ফাঁড়ির পুলিশ ইন্সপেক্টর লিয়াকতের নির্দেশমতে উপরে দুই হাত তুলে বলেন, বাবা আপনারা অহেতুক আমাকে নিয়ে উত্তেজিত হবেন না। আপনারা আমাকে নিয়ে একটু খোঁজ নিন। মেজর সিনহা এমন কথা বলার সঙ্গে সঙ্গেই কুত্তার বাচ্চা বলেই তার (মেজর সিনহা) বুকে গুলি চালায় পুলিশ ইন্সপেক্টর লিয়াকত হোসেন।
তখনই মেজর বলেছিলেন স্যার আমাকে জীবনটা ভিক্ষা দেন। পরপর আরও দুটো গুলি করলে তৎক্ষণাৎ তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। পরে আরও এক রাউন্ড গুলি চালায় এবং ওসি প্রদীপ কুমার এসে সাবেক ওই মেজরের মুখের উপর লাথি মারেন। প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে বয়ান দেয়া সেই মুয়াজ্জিনকেও এখন খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না বলে জানা গেছে টেকনাফের এই প্রদীপ কুমার সেই ওসি যার বিরুদ্ধে পুলিশ হেডকোয়ার্টারে অনেকবার চাঁদাবাজি, স্বামীকে আটকে স্ত্রীকে ধর্ষণ, ইয়াবার নামে ব্যবসায়ীদের হয়রানি, মিথ্যা মাদক মামলায় ধনীদের ফাঁসিয়ে কোটি টাকা ঘুষ নেয়ার অভিযোগ রয়েছে পুলিশ সদর দপ্তরে।
ওসি প্রদীপ কুমার দাশ কক্সবাজারের বিভিন্ন পয়েন্টে জমি কিনে বাড়ি-গাড়ির মালিক হয়েছে। এমনকি সে ভারতের আসামের রাজধানী গৌহাটি শহরের পল্টন স্টেশনের পাশে অভিজাত দুটি বাড়ি করেছে। ২০১৮ সালে কক্সবাজার বিএনপির সভাপতি শাহজাহান চৌধুরীকে কক্সবাজার ছেড়ে চলে যেতে বলেছিলেন ওসি প্রদীপ কুমার দাশ। এলাকা না ছাড়লে গুলি করে মেরে ফেলার হুমকি দিয়েছিল ওসি। বিএনপির আমলে প্রভাবশালী এক মন্ত্রীর সুপারিশেই পুলিশে চাকরি পায় সে। চাঁদাবাজি করে টেকনাফের টর্চার সম্রাটে পরিণত হয়েছে। সিআইপি পদমর্যাদার একজন শিল্পপতিকে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানির অভিযোগে বায়েজিদ বোস্তামি থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাশকে গত ১৬ নভেম্বর সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছিল।
এদিকে বরখাস্ত থাকাকালীন ওসি প্রদীপের বডিগার্ডকে সঙ্গে নিয়ে নগরীর শপিং মলসহ বিভিন্ন এলাকায় চলাফেরা করেন। কোতোয়ালির এসআই থাকাকালীন নগরীর পাথরঘাটায় এক হিন্দু বিধবা মহিলার জমি দখলের অভিযোগ রয়েছে প্রদীপ কুমার দাশের বিরুদ্ধে। এমনকী তার বিরুদ্ধে পাঁচলাইশ থানা এলাকায় নিজের বোনের জমি দখলের অভিযোগটাও বাদ যায়নি। ২০১২ সালে আদালতের অনুমতি ছাড়া বন্দরে আসা একটি বিদেশি জাহাজকে তেল সরবরাহে বাধা, বার্জ আটক এবং ১৮ দিন পর বার্জ মালিকসহ ১২ জনকে বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা দিয়ে হয়রানি ও অনৈতিক সুবিধা নেয়ার ঘটনায় ফেঁসে যান তৎকালীন পতেঙ্গা থানার ওসি প্রদীপ। অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ার পর ওসি প্রদীপকে পতেঙ্গা থানা থেকে প্রত্যাহার করা হয়।
২০১৩ সালের ২৪ জানুয়ারি ওসি প্রদীপের একটি মামলায় রিমান্ড আবেদনের বিরোধিতা করায় এক আইনজীবীকে লালদীঘির পাড় থেকে ধরে নিয়ে থানায় আটকে রাতভর নির্যাতন চালানো হয়। ২০১৩ সালের ২৪ মে পাঁচলাইশ থানার পাশের একটি কমিউনিটি সেন্টার থেকে শিবির আখ্যা দিয়ে ৪০ শিক্ষার্থীকে আটকের ঘটনায় ছাত্রলীগ-যুবলীগের তোপের মুখে পড়েন ওসি প্রদীপ।
সে সময় ওসি প্রদীপের সঙ্গে ছাত্রলীগ-যুবলীগ নেতাকর্মীদের ব্যাপক বাকবিতণ্ডার একপর্যায়ে তারা ওসিকে লাঞ্ছিত করে। পাঁচলাইশে ওসি থাকাকালীন বাদুরতলা এলাকায় বোরকা পরা এক বয়োবৃদ্ধাকে রাজপথে পিটিয়ে রক্তাক্ত জখম করে ব্যাপক সমালোচিত হন ওসি প্রদীপ। এ ঘটনা জানাজানি হলে পুলিশের ঊর্ধ্বতন মহলে টনক নড়ে। ওসি প্রদীপের বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত করা হয়। একপর্যায়ে ২০১৩ সালের ২১ আগস্ট তাকে পাঁচলাইশ থানা থেকে প্রত্যাহার করা হয়। মেজর রাশেদ সিনহাকে ক্রসফায়ারে হত্যা করে এসআই লিয়াকত। টেকনাফ থানায় যত ক্রসফায়ার হয় সব এই ওসির নির্দেশেই হয়।
সিনহার মা নাসিমা আক্তার বলেন, আমার ছেলের হত্যাকারীর বিচার চাই। যারা অহেতুক আমার বীর সেনাকে হত্যা করেছে এই দেশের মাটিতে তাদের বিচার হোক। যাতে করে আর কোনো মা সন্তানহারা না হয়। ওসিসহ হত্যাকারীরা গ্রেপ্তার হয়েছে, এখন বিচার দেখার অপেক্ষায় আছি। টেকনাফ থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাশ ও তার স্ত্রী চুমকীর বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধান করছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। অভিযোগটি কমিশনের চট্টগ্রাম অফিস থেকে অনুসন্ধান করা হচ্ছে।
সূত্র জানায়, সামপ্রতিক এই অভিযোগটির অনুসন্ধান শুরু হয়। অনুসন্ধানের একপর্যায়ে তাদের কাছে স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের হিসাব চেয়ে নোটিস পাঠানো হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে এই দম্পতি আলাদাভাবে তাদের সম্পদের হিসাব কমিশনে জমা দিয়েছেন। দুদকের অনুসন্ধানে ওসি প্রদীপ কুমার ও তার স্ত্রীর নামে-বেনামে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ থাকার প্রমাণ মিলেছে। এর মধ্যে স্ত্রীর নামে চট্টগ্রাম মহানগরে ছয়তলা বাড়ি, প্লট, ফ্ল্যাট, একাধিক গাড়ি ও অন্যান্য সম্পদের প্রমাণ পাওয়া যায়। নিহত সাবেক মেজর সিনহার তথ্যচিত্রের চিত্রগ্রাহক ও প্রত্যক্ষদর্শী সিফাতের ল্যাপটপ ও হার্ডড্রাইভ উধাও হয়ে গেছে। স্বজনদের ধারণা, আলামত নষ্ট করতেই গায়েব করেছে পুলিশ।
অন্যদিকে এজাহারে চারটি গুলি করার কথা বলা হলেও সুরতহালে সিনহার মরদেহে মিলেছে ছয়টি গুলির ক্ষত। এখন প্রশ্ন উঠেছে বাড়তি দুটি গুলি করলো কে? স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটির ফিল্ম অ্যান্ড মিডিয়া বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র চিত্রগ্রাহক সাহেদুল ইসলাম সিফাতের খালা জানান, ঘটনার পর সপ্তাহ পার হতে চললেও আইনজীবী বা পরিবারের সদস্য কেউ সিফাতের সাথে দেখা করতে পারেননি।
অ্যাডভোকেট নীলা বলেন, যেহেতু সিফাতের সঙ্গে দেখা করতে দিচ্ছে না, সেক্ষেত্রে নিশ্চয়ই তারা চাচ্ছে যেন কোনো কিছু কেউ না জানে। কারণ সে ওখানে ছিলো। তবে, কারাগারের ফোন থেকে একবার খালা ও আর একবার খালুকে ফোন করেছিলেন তিনি। তাতে কিছুটা স্বস্তি মিললেও নতুন উদ্বেগ তৈরি হয়েছে, সিনহা রাশেদের ইউটিউব চ্যানেলের জন্য চিত্রধারণ করে যে হার্ডড্রাইভ ও ল্যাপটপে সংরক্ষণ করা হয়েছে তা লাপাত্তা হওয়ায়। খালুকে সিফাত জানায়, হার্ডড্রাইভটি ঘটনার সময় তার সাথেই ছিলো আর ল্যাপটপটি ছিলো নীলিমা রিসোর্টে।
সিফাত বলেন, ল্যাপটপ ছিলো হোটেলে আর মানিব্যাগ, ক্যামেরা, হার্ডড্রাইভ সঙ্গে ছিলো। এদিকে সাবেক মেজর সিনহা ও চিত্রগ্রাহক সিফাতের বিরুদ্ধে পুলিশের করা মামলার এজাহারে ২১টি আলামত জব্দ করার কথা বলা হয়েছে। তাতে বিদেশি অস্ত্র থেকে শুরু করে ছুরি পর্যন্ত জব্দ করার কথা বলা হলেও নেই হার্ডড্রাইভের কথা। অন্যদিকে নীলিমা রিসোর্টে তল্লাশি চালিয়ে মদ, গাঁজা উদ্ধারের কথা বলা হলেও নেই ল্যাপটপের উল্লেখ।
এসবের হদিস জানতে কক্সবাজার পুলিশের পেছনে ঘুরে ঘুরে সিফাতের খালুর ধারণা হয়েছে, এ দুটো গুরুত্বপূর্ণ আলামত গায়েব করেছে খোদ পুলিশ। সিফাতের খালু বলেন, মামলার জন্য পুলিশ এগুলো মিসিং করতে পারে। কারণ এটাই ওর প্রমাণ যে সে সেখানে কাজ করছিল। এদিকে মামলার এজাহারে ইন্সপেক্টর লোকমান আত্মরক্ষার্থে চারটি গুলি করেছেন বলা হলেও সুরতহাল রিপোর্টে সিনহার দেহে ছয়টি গুলির গভীর ক্ষত পাওয়ার কথা জানানো হয়েছে। বাড়তি দুটি গুলি কে করেছে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
সিনহা নিহতের ঘটনায় পুলিশের বিরুদ্ধে করা মামলার বাদি সিনহার বোনের আশা সুষ্ঠু তদন্তে এ প্রশ্নেরও উত্তর মিলবে। সিনহার বোন শারমিন বলেন, পোস্টমর্টেম রিপোর্ট, ফাইনাল রিপোর্ট মিললে এসবের ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া যাবে।
দৈনিক চাঁদনী বাজার/সাজ্জাদ হোসাইন