তিস্তা নদী গর্ভে চলে যাচ্ছে শত শত পরিবারের জমি-জায়গা দেখার কেউ নাই
নীলফামারীর জলঢাকা উপজেলার মৌজা শৌলমারী হারাগাছ বান পাড়ায় ভাঙ্গনকবলিত এলাকার শত শত পরিবার তাদের ঘরবাড়ি অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছেন। খবর পেয়ে মঙ্গলবার (১৮ আগষ্ট) বিকেলে ওই এলাকায় অবস্থান করে প্রত্যক্ষদর্শিরা জানায়, তিস্তার ভাঙ্গনের ভয়ে তিনদিন ধরে চোখে ঘুম আসে না। জায়গা-জমি তো সবেই গেল, কোথায় যাবো পরিবার নিয়ে? কিছুই ভাববার পাচ্ছি না! কান্না জড়িত কন্ঠে কথাগুলো বলেন, ভিটেমাটি হারা মাবিয়া বেগম (৪৫)। শুধু মাবিয়ায় নয়, তার মতো আরও অনেক ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের সদস্যরা শোনান সয়সম্বল হারানোর কথা। ভাঙ্গনের শিকার শতাধিক পরিবার ঘরবাড়ি সরিয়ে বাস করছে খোলা আকাশের নিচে। কেউ কাটছে গাছ, কেউবা কাটছেন বাশঁ আর কেউবা টিনের চালা দিয়ে মাথাগোজার ঠাই খুঁজছেন ফাঁকা জায়গাগুলোতে।
আবার অনেককে দেখা গেছে গো খাদ্যের খড়কুটো জরো করছেন উচু স্থানে। ওই এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক বাবুল হোসেন (৪৬) জানান, এক সপ্তাহের ব্যবধানে তিস্তা নদীর ভাঙ্গনে ৬টি ঘর, বসতভিটা ও ১৪ বিঘা ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। এভাবে ভাঙ্গন চলতে থাকলে এ গ্রামের চিহ্নও খুজে পাওয়া যাবে না। তিস্তার ভাঙ্গনে ডানতীর বাধ সংলগ্ন প্রায় ৫০ বছরের একটি হাফিজিয়া মাদ্রাসা সহ শতাধিক পরিবারের ঘরবাড়ি নদী গর্ভে বিলিন হয়ে গেছে।
তারা খোলা আকাশের নিচে জীবনযাপন করলেও খবর নিতে যায়নি কোন জনপ্রতিনিধি, এমন অভিযোগ করেন ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারেরা। ওই এলাকার আলমগীর হোসেন বলেন, তিস্তার পানি কমতে শুরু করেছে, ফলে ভাঙ্গছে তিস্তার ডানতীর বাধ সংলগ্ন মানুষের ঘরবাড়ি। ক্ষতিগ্রস্থ— পরিবারগুলো হারিয়েছে কমপক্ষে ৫০/৬০ একর জমি। ইউনিয়নটির বাসিন্দা ফয়জুল ইসলাম, এনামুল, আলামিন, সফিকুল ইসলাম, আব্দুল খালেক, দুলু মিয়া এবং বানপাড়া মসজিদের ইমাম ও হাফিজিয়া মাদ্রাসার সভাপতি সহ তারা জানায়, শুধু বানপাড়ায় নয়, পাশ্ববর্তী কিসামত, নোহালী, গোপালঝাড়, তালুক শৌলমারী ডাউয়াবাড়ি এই তিন ইউনিয়নের প্রায় ১৭ শত একর জমি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এখন প্রায় ৫ হাজার একর জমি হুমকির মূখে। মানুষ বেড়িবাঁধে বাধ্য হয়ে আশ্রয় নিয়েছে।
এই ডানতীর বাঁধটাও ভাঙ্গতে শুরু করেছে। পল্লী চিকিৎসক মমিনুর রহমান বলেন, পূর্ব থেকে পানি উন্নয়ন বোর্ডের লোকজনকে জানানো হলেও তারা কোন পদক্ষেপ নেয়নি। কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় ক্ষতির সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে। এখন কর্তাব্যক্তিরা এসে লোক দেখানো জিও ব্যাগ পানিতে ফেলছে তাও আবার ২৪ শত ব্যাগ। ভাঙ্গন এলাকায় মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন করে জিও ব্যাগে ভরছেন। যেখানে চর থেকে বালু নিয়ে এসে ভরাট করার কথা ছিল। জিওটেক্স দ্রু বাস্তবায়ন করা না হলে বাঁধ ভেঙ্গে ১০ হাজার পরিবার ক্ষতিগ্রস্থ হবেন বলে আশঙ্কা করেন সচেতেন মানুষেরা।
শৌলমারী ইউপি চেয়ারম্যান প্রাণজিৎ কুমার পলাশ বলেন, খবর পেয়ে ইউএনও এবং প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তাকে সাথে নিয়ে আমি ভাঙ্গন এলাকায় গিয়ে ক্ষতিগ্রস্থ ৮৩ টি পরিবারের নাম অন্তর্ভূক্ত করে জেলা প্রসাশক মহোদয়ের নিকট আবেদন করেছি। ডালিয়া পাউবো উপ-সহকারী প্রকৌশলী ফিরোজ আহম্মেদ বলেন, তীব্র ভাঙ্গন এলাকাগুলো বাঁশবল্লী ও জিও ব্যাগ ফেলে প্রতিরক্ষার কাজ চলমান আছে বানাপাড়ায় ২৫০ মিটারে পাইলিং এর কাজ চলছে। সোহাগের বাজার, শৌলমারীতে ভাঙ্গন ঠেকাতে পেরেছি। স্থায়ী পরিকল্পনা অংশ হিসেবে ব্লক, ডাম্পিং, প্লেসিং করার জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে জানানো হয়েছে। এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহবুব হাসান এর সাথে কথা হলে তিনি জানান, ভাঙ্গন এলাকা পরিদর্শন করে ঝুকপূর্ণ পরিবারকে নিরাপদ স্থলে সরিয়ে নিয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলীকে দ্রুত সংস্কারের জন্য অবগত করেছি।
দৈনিক চাঁদনী বাজার/সাজ্জাদ হোসাইন