বগুড়ায় পানি বৃদ্ধি ও বৃষ্টিপাতে নিমজ্জিত ১১০৬ হেক্টর ফসল
প্রান্তিক ও ক্ষুদ্র চাষিরা বন্যায় আবারো ক্ষতির মুখে পড়তে যাচ্ছে। টানা এক সপ্তাহ ভারি বৃষ্টিতে জেলায় মোট ১ হাজার ১০৬ হেক্টর জমির ফসল বন্যার পানিতে নিমজ্জিত হয়ে আছে। কৃষকের আউশ, মরিচ, রোপা আমন, বীজতলা, শাকসবজি ও গাইনজা ধানের আবাদ তলিয়ে গিয়ে এই ক্ষতির মুখে পড়তে যাচ্ছে। কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন ক্ষতির তথ্য সংগ্রহ করে কৃষকদের ভুর্তকির বিষয়ে প্রস্তাব প্রেরন করা হবে।
বগুড়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্দর সুত্রে জানানো হয়েছে, গত জুলাই আগস্ট মাসে কৃষকের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। সারিয়াকান্দি উপজেলা সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়। পানি কমে গেলে আগস্ট মাসের শেষে এসে চাষিরা রোপা আমন, মরিচ, মাশকালাইসহ বিভিন্ন সবজির চাষ করেন। সেপ্টেম্বর মাসের ১৯ তারিখ থেকে টানা বৃষিটপাতের কারণে নদ নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। পানি বৃদ্ধি পেয়ে নদী এলাকার কিছু ফসলের ক্ষেত তলিয়ে গেছে।
রবিবার দুপুরে বগুড়া পানি উন্নয়ন বোর্ড সুত্রে জানানো হয়, কয়েক দিন ধরে অবিরাম বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানিতে নতুন করে যমুনা ও বাঙ্গালি নদীর পানি বৃদ্ধি পায়। পানি বৃদ্ধি পেয়ে নদী এলাকার আউশ, আমন, সবজির ক্ষেত তলিয়ে গেছে। রোববার বগুড়ায় যমুনা নদীর পানি কমে রোববার সকাল ৬টায় ৯ সেমিন্টমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। এদিকে জেলার সারিয়াকান্দি উপজেলায় ক্ষতিগ্রস্থ চাষিরা জানান, বৃষ্টি ও নদীর পানিতে তাদের চাষকৃত আমন ধান শাকসবজি ও চরাঞ্চলের কৃষকের আউশ, মরিচ রোপা আমন, বীজতলা, শাকসবজি ও গাইনজা ধানের আবাদ তলিয়ে গেছে। উপজেলার সারিয়াকান্দি পৌরসভার দক্ষিণ হিন্দুকান্দি, ছাগলধরা, ডোমকান্দি, নারচি নিজ বরুরবাড়ী, হাটশেরপুর ইউপির হাসনাপাড়া, শাহানবান্দা।
এছাড়া চর এলাকার বোহাইল, কর্নিবাড়ী, কাজলা, চালুয়াবাড়ী, হাট শেরপুর ও সদর ইউনিয়নের নিচু এলাকার ফসল পানিতে তলিয়ে গেছে। সোনাতলা উপজেলার বগুড়ার সোনাতলায় যমুনা ও বাঙালী নদীতে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় প্রায় ১৬৫ হেক্টর জমির ফসল বন্যার পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। শনিবার যমুনা নদীতে বিপদ সীমার ১১ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়েছে। ফলে ওই উপজেলার প্রায় ১৬৫ হেক্টর জমির ফসল বন্যার পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। রবিবার যমুনা নদীর পানি কমে বিপদসীমার ৯ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
বগুড়া নন্দীগ্রাম উপজেলার থালতা মাজগ্রাম ইউনিয়নের নাগর নদে টানা বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পানি বৃদ্ধি হওয়ায় গুলিয়া, পারশন, পারঘাটা, সারাদিঘর এলাকায় মাঠের আমন ধান ডুবে যাচ্ছে। বগুড়ার নন্দীগ্রাম উপজেলার কৃষি অফিসার মো. আদনান বাবু বলেন, নন্দীগ্রাম উপজেলায় এবার ১৯ হাজার ৩৭৫ হেক্টর জমিতে রোপা আমন ধান চাষ করা হয়েছে। এরমধ্যে ৮০ হেক্টর জমির ধান প্লাবিত হয়েছে। তবে নাগর নদে আর পানি বৃদ্ধি না পেলে রোপা আমন ধানের ক্ষতি হবে না।
বগুড়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ পরিচালক শাহাদুজ্জামান জানান, পানি বেড়ে জেলায় রোপা আমন ১০২৫ হেক্টর, মাশকালাই ৪৫, সবজি ৩২, মরিচ ৪ হেক্টর। সব মিলিয়ে ১১০৬ হেক্টর জমির ধান ও অন্যান্য ফসল পানিতে নিমজ্জিত হয়ে আছে। পানি নেমে গেলে ক্ষতির পরিমান নিরুপন করা যাবে। এরমধ্যে জেলার ১২টি উপজেলার মধ্যে সারিয়াকান্দি, সোনাতলা, গাবতলী, ধুনট, শেরপুর, শাজাহানপুর ও নন্দীগ্রাম উপজেলার কিছু কিছু ক্ষেত পানিতে নিমজ্জিত হয়ে আছে।
দৈনিক চাঁদনী বাজার/সাজ্জাদ হোসাইন