প্রকাশিত : ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০২০ ২০:৩১

বগুড়ার দুটি সরকারি হাসপাতালে দিন যাচ্ছে আর রোগীর চাপ বাড়ছে

এইচ আলিম
বগুড়ার দুটি সরকারি হাসপাতালে 
দিন যাচ্ছে আর রোগীর চাপ বাড়ছে

বগুড়ার দুটি সরকারি হাসপাতালে দিন যাচ্ছে আর রোগীর চাপ বাড়ছে। করোনাকালে হাসপাতালে বহি:বিভাগগে রোগী খুবই কম থাকলেও এখন বেড়েছে কয়েকগুণ। প্রতিদিন দুটি হাসপাতালে প্রায় ৩ হাজারের বেশি রোগী সেবা নিচ্ছে বহি: বিভাগ থেকে। করোনা ভাইরাসের কারণে হাসপাতালগুলোতে ভিন্ন চিত্র থাকলেও এখন ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে।জানা যায়, বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল (শজিমেক) ১৯৯৮ সালে ২৫০ শয্যার মোহাম্মদ আলী হাসপাতালে প্রথম কার্যক্রম শুরু হয়। এরপর মেডিকেল কলেজ ও হাসাপাতাল নতুন করে অবকাঠামো নির্মাণের পর ২০০৬ সালে ৫০০ শয্যা বিশিষ্ট শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল শহরের সিলিমপুরে স্থানান্তর করা হয়ে। এরপর থেকেই রোগীর দিনদিন চাপ বেড়েছে।

প্রায় সব ধরণের চিকিৎসা সেবা দেয়ার কারণে এই হাসপাতালে রোগী ভর্তি হতো দিগুণ। এ নিয়ে চিঠি চালাচালি হওয়ার পর ২০১৯ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর অর্থ বিভাগ, অর্থ মন্ত্রনালয় ব্যয় ব্যবস্থাপনা অধিশাখা এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে ১২০০ শয্যায় উন্নতি করার আদেশ জারি করা হয়েছে। ১২শ’ শয্যার হাসপাতলের প্রয়োজনীয় লোকবল নিয়েগের পর পূর্ণঙ্গ ভাবে চিকিৎসা সেবা পাবে রোগীরা। ইতমধ্যে হাসপাতালের উর্ধমুখি সম্প্রসারণ করার কাজ প্রায় শেষ হয়েছে। এতে ব্যায় হয়েছে প্রায় ৬৪ কেটি টাকা। সাড়ে ৪ তলা থেকে ৭ তলা পর্যন্ত উর্ধমুখি সম্প্রসারণ করা হয়েছে। করোনার কারণে নির্মাণ কাজ পিছিয়ে গেছে।

আগামী ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে এই নির্মাণ কাজ শেষ করার কথা রয়েছে। এই ভবনটির ভীত দেয়া আছে ১০ তলার। ৫০০ শয্যার হাসপাতাল হলেও করোনা ভাইরাস আতঙ্কের আগে রোগী ভর্তি থাকতো প্রতিদিন প্রায় ১৩০০ থেকে ১৪০০ জন। রোগীরা বেড না পেয়ে হাসপাতলের মেঝেতে শুয়ে চিকিৎসা সেবা নিত। ফলে ৫০০ শয্যার জনবল নিয়ে প্রায় ১৪০০ রোগীকে চিকিৎসা সেবা দিতে হিমশিম খেতে হতো এই হাসপাতালের চিকিৎসক সহ সকল জনবলকে।

মার্চ মাসে দেশে করোনা রোগি সনাক্ত হলে হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা কমে ৩৫০ তেকে ৪০০ জন ভর্তি ছিল। আগস্ট মাসের শেষ থেকে রোগীর চাপ আবারো বাড়তে থাকে। বাড়তে বাড়তে ১২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত রোগী ভর্তি ছিল ৯২৪ জন। এরপর দিনে দিনে এই সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে এখন এক হাজার ছাড়িয়ে গেছে। এখন বহি:বিভাগে প্রতিদিন ২ থেকে আড়াই হাজার রোগি সেবা নিচ্ছে।

বগুড়া জেলায় করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট মোহাম্মদ আলী হাসপাতালকে করোনা ভাইরাস রোগীদের জন্য বিশেষায়িত হাসপাতাল করা হয়। একেবারে অপ্রস্তুত এই হাসপাতালে করোনা ভাইরাসের চিকিৎসা সেবা দিয়ে কর্মকর্তা,  চিকিৎসক, সেবিকা, স্বাস্থ্যকর্মচারি সকলেই প্রশংসিত হন। এই হাসপাতালে মধ্য মার্চ থেকে বহি: বিভাগ বন্ধ করার পর আবারো খোলা হয়েছে। এখন হাসপাতালের বহি:বিভাগে প্রতিদিন প্রায় ১ হাজার রোগি সেবা নিচ্ছে।

করোনা ভাইরাসের রোগীর সংখ্যা কমে যাওয়ার কারণে হাসপাতালে গত ১৯ সেপ্টেম্বর থেকে গাইনী বিভাগ, ইএনটি, চক্ষু ও সার্জারী বিভাগ খোলা হয়েছে। খোলার পর থেকে এইসব ওয়ার্ডে রোগীও ভর্তি হয়েছে। ভালসেবার স্বাক্ষর রাখলেও এখনো রয়েছে চিকিৎসক ও প্রয়োজনীয় জনবল সংকট। এই সংকটের মধ্যেই এই হাসপাতালে একদিকে চলছে করোনা রোগীর সেবা অন্যদিকে চলছে করোনা ভাইরাসের নমুনা সংগ্রহ করা। 

বগুড়া শজিমেক হাসপাতালে উপ পরিচালক ডা : আব্দুল ওয়াদুদ জানান, বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে চিকিৎসক রয়েছে ১৯৪ ডাক্তার। নিয়োগ রয়েছেন ১৩৯ জন। বাকি পদ ফাকা রয়েছে। এভাবে সব কর্মচারি পদে প্রয়োজনীয় জনবল নেই। জনবল সংকট নিয়েই দিগুণ রোগীর চিকিৎসা দিতে হয়। ১২০০ বেডের অনুমোদন পাওয়া গেলেও জনবল অনুমোদন পাওয়া যায়নি। এদিকে হাসপাতালে প্রতিদিন এখন রোগীর চাপ বাড়ছে। বহি:বিভাগে প্রতি দিন ২ হাজার বেশি রোগি সেবা নিচ্ছে। 

২৫০ শয্যা বিশিষ্ট বগুড়া মোহাম্মদ আলী হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার খাইরুল বাসার মমিন জানান, করোনা ভাইরাসের সেবা দিতে গিয়ে হাসপাতালের তত্বাবধায়ক এটিএম নুরুজ্জামান ও আরএমও শফিক আমিন কাজল স্যারসহ, অধিকাংশ স্টাফ করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। হাসপাতালে প্রয়োজনীয় জনবল নেই। তারপওর যতটা সম্ভব সেবা প্রদানের কাজ চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে। বহি:বিভাগে প্রতিদিন রোগি বাড়ছে। হাসপাতালের গাইনী ও সার্জিকাল বিভাগ খোলা হয়েছে। সেখানেও রোগি ভর্তি হচ্ছে।

দৈনিক চাঁদনী বাজার/সাজ্জাদ হোসাইন

উপরে