প্রকাশিত : ৮ নভেম্বর, ২০২০ ১৮:০৪

স্রোতহীন ধুনটের বাঙালী-ইছামতি ও মানাস

ইমরান হোসেন ইমন, ধুনট (বগুড়া) থেকে :
স্রোতহীন ধুনটের বাঙালী-ইছামতি ও মানাস

স্রোতহীন বাঙালী, ইছামতি ও মানাস নদীতে এখন আর শেওলাও জন্মে না। নদী দখল, অবৈধ বালু উত্তোলন এবং নদীর গতিপথ বন্ধ করে রাসায়নিক বজ্র ফেলায় নদীর পানি এখন কালো হয়ে পরিবেশ দূষণ হচ্ছে। এক সময় বগুড়ার ধুনট উপজেলার এসব নদীতে বড় পানসী নৌকা ও স্টিমার চলাচল করতো। তীব্র স্রোত থাকতো বর্ষা এবং শীতকালেও। নদীর পানিতে খাল-বিলও ভরে যেত। কিন্তু বর্তমানে নদীতে পানি না থাকায় খাল-বিলেও পানি নেই। তেমন মাছও পাওয়া যায় না। তেমনি পরিবেশের ভারসাম্যও নেই।

সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ইছামতি নদীটি বগুড়া সদরের লাহিড়ীপাড়া থেকে শুরু হয়ে সারিয়াকান্দি, ভেলাবাড়ি ও ধুনট হয়ে সিরাজগঞ্জের নলকায় বাঙ্গালী নদীর সাথে মিলিত হয়েছে। নদীটির দৈর্ঘ্য ৭৪ কিলোমিটার। এছাড়া মানাস নদীটি যমুনা থেকে উৎপন্ন হয়ে সারিয়াকান্দি, কামালপুর, ধুনটের চিকাশী, গোসাইবাড়ি হয়ে আবারও করতোয়ায় মিলিত হয়েছে। নদীটির দৈর্ঘ্য ১৭ কিলোমিটার।

এ সব নদীতে এক সময় চলাচল করতো বড় পানসী নৌকা ও স্টিমার। তীব্র স্রোত থাকতো বর্ষা এবং শীতকালেও। নদীর পানিতে খাল বিলেও ভরে যেত। জমিতে পড়তো পলি মাটি। রাসায়নিক সারের প্রয়োজনই হতো না। নদী, খাল বিলে থাকতো ছোট বড় মাছ। ওই সব মাছ জেলে সম্প্রদায়ের জীবিকার এক মাত্র উৎস ছিল। কিন্তু বর্তমানে নদীতে পানি না থাকায় খাল-বিলেও পানি নেই। মাছ পাওয়া যায় না। পরিবেশের ভারসাম্যও নেই। নদী, নালা-খাল বিলে মাছ না থাকায় জেলে সম্প্রদায়ের লোকজন তাদের পেশা পরিবর্তন করতে শুরু করেছে। 

ধুনট উপজেলার ভান্ডারবাড়ী ইউনিয়নের শহড়াবাড়ি গ্রামের মজিবর রহমান জানান, ১৯৬৫ সালে সারিয়াকান্দী উপজেলার কামালপুর এলাকায় মানাসের উৎস পথ বন্ধ করে সেখানে যমুনার ভাঙ্গন রোধে বাঁধ নির্মান করা হয়। আগে মানাস নদীতে বড় বড় নৌকা চলতো। নদী থেকে বিভিন্ন খাল-বিলে পানি যেত। খালেও প্রচুর মাছ পাওয়া যেত। বন্যার পানির সাথে পলি মাটি আসতো। জমিতে কোন রাসায়নিক সার দিতে হতো না। ফসলও বেশী হতো। এখন রাসায়নিক সার দিয়ে ফসল উৎপাদন করতে হয়। 
গোসাইবাড়ী ইউনিয়নের চৌধুরিপাড়া গ্রামের উজ্বল কুমার ও বিষনাথ হাওয়ালদার জানান, নদী ও খাল-বিলে এখন আর বন্যায় মাছ আসেনা। তাই অনেক জেলেই পেশা ছেড়ে অন্য পেশায় যাচ্ছে। আগে এই নদী ও বিলের মাছই ছিল জীবিকার উৎস।

ধুনট সদরের স্কুল শিক্ষক ফৌজিয়া হক বিথি বলেন, ইছামতি আর নদী নেই। নদীর বুকে এখন চাষাবাদ হয়। তবে নদীগুলো খনন করে পানি প্রবাহ না করলে এক সময় পরিবেশ হুমকির মুখে পড়বে। বগুড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মাহবুবুর রহমান জানান, বগুড়া জেলার  করতোয়া, বাঙ্গালী, ইছামতি ও নগর নদীর পানির উৎসই তিস্তা নদী। সেই তিস্তাতেই পানি প্রবাহ কম। তাই এসব নদী এমনিতেই স্রোত হীন হয়ে পড়েছে। তারপরও পানি প্রবাহ এবং পানি সংরক্ষনের জন্য কাজ হাতে নেয়া হয়েছে। 

তিনি আরো জানান, করতোয়া নদী খননের জন্য ২ হাজার ৬ শত ৬৫ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছে। নদীর গতিপথকে সচল করার এবং শুষ্ক মৌসুমে পানি ধারণ করার বিষয়টি মাথায় রেখে কাজটি করা হবে। বাঙালী নদীর তীর সংরক্ষন এবং খননের জন্য আরো ২ হাজার ৩শত ৫৬ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছে। এছাড়াও মানাসের গতিপথ সচল করার জন্য সারিয়াকান্দির কামালপুরে যেখানে বন্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধ নির্মান করে প্রবাহ বন্ধ করা হয়েছিল সেখানেও ৩০ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি সুইচ গেট নির্মানের প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। গেটটি নির্মিত হলে এক দিকে মানাস নদী তার নাব্যতা ফিরে পাবে। অপরদিকে ইছামতি এবং বাঙালীতে সেই পানির স্রোতধারা দুুটি নদীকে সচল করবে।

দৈনিক চাঁদনী বাজার/সাজ্জাদ হোসাইন

উপরে