প্রকাশিত : ১৬ নভেম্বর, ২০২০ ১৭:৪৫

নওগাঁয় নির্বাচনী ডিউটি দিতে আনসার-ভিডিপি সদস্যদের কাছ থেকে উৎকোচ আদায়ের অভিযোগ

এবাদুল হক, নওগাঁ প্রতিনিধি
নওগাঁয় নির্বাচনী ডিউটি দিতে আনসার-ভিডিপি সদস্যদের কাছ থেকে উৎকোচ আদায়ের অভিযোগ

উপ-নির্বাচনে দায়িত্ব (ডিউটি) দিতে নওগাঁয় আনসার ও ভিডিপি সদস্যদের কাছ থেকে উৎকোচ নেয়ার অভিযোগ উঠেছে। এর নেপথ্যে রয়েছে উপজেলা আনসার ও ভিডিপি কর্মকর্তারা। নির্বাচনে আনসার ও ভিডিপি সদস্যদের দায়িত্ব দিতে প্রায় ১৩ লাখ টাকার ঘুষ বাণিজ্য হয়েছে। জেলা আনসার ও ভিডিপি কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, গত ১৭ অক্টোবর নওগাঁ-৬ (রানীনগর-আত্রাই উপজেলা) আসনে উপনির্বাচনে রানীনগরে ৫৮৮ জন ও আত্রাইয়ে ৬৬০ জন এবং ২০ অক্টোবরে মান্দায় উপজেলা পরিষদের উপ-নির্বাচনে ১ হাজার ২৯৬ জন আনসার সদস্য পাঁচদিন ডিউটি করেন।

তিন উপজেলায় মোট ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা ২১২টি। প্রতিনিটি কেন্দ্রে ১২ জন করে আনসার সদস্য দায়িত্ব ছিলেন। তাদের মধ্যে- একজন প্লাটুন কমান্ডার (পিসি), একজন সহযোগী প্লাটুন কমান্ডার (এপিসি), চারজন মহিলা ও ছয়জন পুরুষ। পিসি-এপিসি দিনে ৫২৫ টাকা এবং সাধারান সদস্যরা দিনে ৪৭৫ টাকা পাবেন।নির্বাচন কেন্দ্রে দায়িত্ব পেতে প্রত্যেক আনসার সদস্যদের কাছ থেকে অগ্রীম সর্বনিম্ন ৪০০ টাকা থেকে ৮০০ টাকা পর্যন্ত প্রতিটি ইউনিয়ন দলনেতার মাধ্যমে আদায় করা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। সে হিসেবে গড়ে ৫০০ টাকা করে মোট ২ হাজার ৫৪৪ জনের নিকট থেকে ১২ লাখ ৭২ হাজার টাকা আদায় করা হয়েছে। এ টাকা নিতে সহযোগীতা করেছেন ইউনিয়ন দলনেতা।

নির্বাচনী দায়িত্ব শুরুর আগেই সদস্যদের নিকট থেকে অগ্রীম টাকা আদায় করা হয়েছে। আনসার সদস্যরা নিতান্ত দরিদ্র ও অসহায়। ভোট কেন্দ্রে ডিউটি দিতে তাদের নিকট থেকে এক প্রকার জোর করে টাকা আদায় করা হয়েছে। ডিউটি পেতে এসব আনসার সদস্যরা হাওলাদ করে টাকা দিয়েছেন। তবে ডিউটি অনেক আগে শেষ হলেও এখনো তারা তাদের সম্মানি পাননি।রাণীনগর উপজেলার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মহিলা আনসার সদস্য বলেন, নির্বাচনে ডিউটি দিতে আমার নিকট থেকে ৬৫০ টাকা নেয়া হয়েছে। আমার প্রশিক্ষণের সব কাগজপত্র ঠিক আছে। এরপরেও দলনেতা বলেছেন- এখন বয়স্ক নিবেনা। ডিউটি পেতে হলে অফিসে টাকা দিতে হবে। আমার মতো আরো অনেকেই টাকা দিয়ে তারপর ডিউটি পেয়েছেন।

আত্রাই উপজেলার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন আনসার সদস্য বলেন, নির্বাচনে ডিউটি দিতে তাদের প্রত্যেকের নিকট থেকে ৪শ টাকা করে নেয়া হয়েছে। দলনেতারা বলেছেন- বড় অফিসারদের এ টাকাগুলো দিতে হয়। আর টাকা না দিলে ডিউটিতে নেয়া হবে না। এজন্য বাধ্য হয়ে আমাদের টাকা দিতে হয়েছে। অভাবের মধ্যে আমরা ধারদেনা করে টাকাগুলো দিয়েছি। ভোট শেষ হয়ে অনেক দিন হয়েছে কিন্তু এখনো টাকা পাইনি।আত্রাই উপজেলার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক দলনেত্রী বলেন, আমাকে উপর থেকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছিল যারা ৪শ টাকা দিতে পারবে তারা নির্বাচনে ডিউটি করতে দেয়া হবে। আনসার সদস্যরা তো অসহায়। অনেকে হাওলাদ করে টাকা দিয়েছে। তিনি ৮জন আনসার সদস্যর কাছ থেকে ৩ হাজার ২শ টাকা উঠিয়ে অফিসে দিয়েছেন।

মান্দা উপজেলার ঘাটকৈর গ্রামের আনসার সদস্য ভুক্তভোগী নওসাদ আলী বলেন, ভোটের মধ্যে আমাদের ডিউটি দেয়ার জন্য কমপক্ষে ২ মাস আগে থেকে টাকা উঠানো শুরু হয়। বয়স হয়ে গেছে সহ বিভিন্ন কথা বলে প্রথমে আমাকে ডিউটি দেয়া হবে না বলে জানানো হয়। পরে ডিউটি দেয়া হবে বলে টাকা দাবী করা হয়। অফিসের টিআই আজমকে ৮০০ টাকা দিলে ভোটের ডিউটি করতে দেয়া হয়। তবে এখনো  আমাদের সম্মানি দেয়া হয়নি এবং কবে নাগাদ দেয়া হবে সেটাও জানা নেই। তবে আমার মতো অনেকের কাছ থেকেই টাকা নিয়ে ডিউটি করতে দেয়া হয়েছে। এ অনিয়মের একটা সমাধান হওয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি।

রানীনগর উপজেলা আনসার ও ভিডিপি কর্মকর্তা রুস্তম আলী, আত্রাই উপজেলার কর্মকর্তা আমিনুল হক এবং মান্দা উপজেলার কর্মকর্তা শরীফ হোসেন অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, টাকার বিনিময়ে নির্বাচনে ডিউটি করতে দেয়ার কোন ঘটনা ঘটেনি। আমরা স্বচ্ছতার সঙ্গে আনসার সদস্যদের যাচাই-বাছাই করে ডিউটি করতে দিয়েছি।
নওগাঁ জেলা আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী কমান্ড্যান্ট জহুরুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হবে। এ ধরনের কাজে কারো সম্পৃক্ততা পেলে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহন করা হবে। তবে বরাদ্দ এখনো আসেনি। নির্বাচন কমিশন থেকে এটার বরাদ্দ আসে।

দৈনিক চাঁদনী বাজার/সাজ্জাদ হোসাইন

 

উপরে